অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাপ বাড়িয়ে চলেছে বিদ্রোহী বোর্ড

ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের এক বিশেষ দিন হিসেবে ধরা যেতেই পারে ১০ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখটাকে। কারণ, মঙ্গলবার, অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি শেষ বারের মতো অধিনায়কত্ব করবেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৪
Share:

ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের এক বিশেষ দিন হিসেবে ধরা যেতেই পারে ১০ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখটাকে। কারণ, মঙ্গলবার, অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি শেষ বারের মতো অধিনায়কত্ব করবেন। ভারত ‘এ’-র ক্যাপ্টেন হিসেবে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দু’টো প্র্যাকটিস ম্যাচের প্রথমটায়। এমনিতে আকর্ষণের আরও দু’টো বিষয়বস্তু আছে মঙ্গলবারের প্র্যাকটিস ম্যাচে। যুবরাজ সিংহ কী করেন না করেন। আশিস নেহরা— তিনিও আগ্রহের একটা ফ্যাক্টর। কিন্তু ওই যে, এমএসডি এবং তাঁর লাস্ট ক্যাপ্টেন্সি ম্যাচ। ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে তা নিয়ে আগ্রহ এতটাই যে, বাকি সব কিছুকে ফিকে লাগছে। তার উপর সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভাবে নিজের ফিটনেস ওয়ার্কআউটের ভিডিও পোস্ট-টোস্ট করে ধোনি আকর্ষণের মাত্রাটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

কিন্তু ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭— সে দিন কী হবে? পুণে দেখবে তো ওয়ান ডে-তেও ক্যাপ্টেন কোহালি যুগ? সূচিতে তাই বলে। বলে, পুণেই দেখতে চলেছে ভারত-ইংল্যান্ড ওয়ান ডে-তে ক্যাপ্টেন কোহালি যুগের শুরু। কিন্তু ঘটনা হল, বাস্তব পরিস্থিতি ততটা মসৃণ নয়। জট একটা তৈরি হয়েছে। শ্রীনি শিবিরের দাবি ধরলে ম্যাচের দিন কয়েক আগে যদি অপসারিত বোর্ড সচিব অজয় শিরকের রাজ্য সংস্থা দুম করে অর্থের অভাব দেখিয়ে ম্যাচ আয়োজনে বেঁকে বসে, অবাক হওয়ার থাকবে না!

যদিও পুরো ব্যাপারটাকে স্রেফ বোর্ডের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ‘অসহযোগ আন্দোলন’ পর্যায়েই সীমাবদ্ধ রাখা ভাল। কারণ, নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন বুনো ওল হলে রাজেন্দ্র মাল লোঢা বাঘা তেঁতুল! পুণে যদি সত্যি সত্যি পর্যাপ্ত অর্থের অভাব দেখিয়ে ম্যাচ আয়োজন থেকে সরে দাঁড়াতে চায়, তা হলে লোঢা কমিশনের প্রত্যুত্তর কী দাঁড়াবে, সেটাও দ্রষ্টব্য হবে। বেশি দূর পিছনে যেতে হবে না। শনিবারই বেঙ্গালুরু বৈঠক শেষে শ্রীনি শিবির থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, বোর্ড অনুমোদিত তিরিশ সংস্থার মধ্যে চব্বিশটা উপস্থিত ছিল বেঙ্গালুরুতে। কিছুক্ষণের মধ্যে লোঢা কমিশন থেকে যার পাল্টা চলে আসে। বলা হয়, শনিবারই ২১ রাজ্য সংস্থা চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে তারা যাবতীয় লোঢা সংস্কার মেনে নিতে প্রস্তুত। যাঁরা বেঙ্গালুরু বৈঠকে গিয়েছেন, তাঁরা ছিলেন লোঢা নিয়মে নানা ভাবে অপসারিত। তাই তাঁরা কী বললেন, কী করলেন কিছু যায় আসে না।

Advertisement

মুশকিল হল, এ সব সত্বেও ‘অসহযোগ আন্দোলনের’ তেজ বাড়ছে। রবিবার যেমন। এ দিন বিভিন্ন মিডিয়ায় দুটো খবর ছড়িয়ে যায়। দু’টো রাজ্য সংস্থা ম্যাচ আয়োজন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থা বলেছে যে, ফেব্রুয়ারিতে ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট তারা আয়োজন করতে পারবে না। কারণ, ম্যাচ আয়োজনের যথেষ্ট টাকা নেই। বোর্ডকে ই-মেল করে নাকি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শ্রীনিবাসনের তামিলনাড়ু আর এক সংস্থা। তামিলনাড়ু জানিয়ে দেয়, ফেব্রুয়ারিতে অনূর্ধ্ব ১৯ ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট করাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। হায়দরাবাদ সরকারি ভাবে খবরটা মানতে চাইছে না। কিন্তু তামিলনাড়ুর পক্ষ থেকে খবরের সত্যতা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।

‘‘লোকে ভাবছে লোঢা সংস্কার মানব না বলে এটা হল। কিন্তু এর সঙ্গে লোঢা সংস্কারের কোনও সম্পর্কই নেই,’’ চেন্নাই থেকে ফোনে বলছিলেন তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার মহাকর্তা কাশী বিশ্বনাথন। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘আমাদের ওয়েবসাইটটা খুলে দেখুন। ঘরোয়া খেলা আছে। রঞ্জি শেষ হলে ওগুলো আমাদের করতে হয়। ফেব্রুয়ারিতে না করলে আর কবে করব?’’ হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থা প্রেসিডেন্ট আর্শাদ আয়ুব আবার অভিযোগ পত্রপাঠ উড়িয়ে দিলেন। ফোনে বলছিলেন, ‘‘সর্বৈব মিথ্যে। কারা যে বলছে আমরা টেস্ট আয়োজন করছি না, জানি না। আমি বলছি, ভারত বাংলাদেশ টেস্ট হচ্ছে। হায়দরাবাদেই হচ্ছে। সব কাজকর্ম শুরু হয়ে গিয়েছে। টেস্ট হবে না মানে?’’

সরকারি স্বীকৃতি কোথাও নেই। কিন্তু শ্রীনির ঘনিষ্ঠমহল থেকে বলা হচ্ছে, এটা সবে শুরু। পুণে এবং কটক— দু’জায়গাতেই ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ হওয়া নিয়ে নাকি যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ওড়িশায় নাকি প্রশাসনিক কিছু সমস্যা। আর অজয় শিরকে নাকি আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ম্যাচ না-ও করতে পারে পুণে। শনিবার বেঙ্গালুরু বৈঠকে সেই ইঙ্গিত নাকি আরও জোরালো হয়েছে।

দু’পক্ষকেই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে। যুদ্ধ এখন কতটা জোরদার হয়, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন