নেটেও কুম্বলে-কোহালি উষ্ণতার দেখা নেই

একেবারে প্রথম নেটে শুরুতেই ব্যাট করতে ঢুকলেন কোহালি। পাশের নেটে কোচ কুম্বলে। মানে শুরুতেই মশলা। দু’জনে দুই নেটে। জল্পনা চালু হয়ে গেল, সম্পর্ক এখনও স্বাভাবিক হয়নি দলের দুই প্রধান মস্তিষ্কের মধ্যে।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ০৩:৩৯
Share:

—ফাইল চিত্র।

বার্মিংহামের আবহাওয়া ভোজবাজির মতো পাল্টে গিয়ে শুক্রবারের অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ শুরু হওয়ার মতোই আজগুবি শোনাতে পারে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে অনুমতি দিয়ে দেওয়া হল যে, আপনারা ভিতরে ঢুকে বিরাট কোহালিদের নেট প্র্যাকটিস দেখতে পারেন!

Advertisement

তা-ও আবার কী, তখন বৃষ্টি পড়ছে। এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ স্থগিত। কোহালিদের আউটডোর প্র্যাকটিস ভেস্তে গিয়েছে। তাঁরা এলেন ইন্ডোরে। বাইরে হলে তা-ও কালো পর্দার ফাঁক দিয়ে ছবি বা ভিডিও তোলা যায়। এখানে তো মুখের উপর সটান দরজাই বন্ধ করে দেওয়া যাবে ইন্ডোর হলের।

অপ্রত্যাশিত ভাবে সেই দরজা বন্ধ না করে দিয়ে মিডিয়ার জন্য খুলে দেওয়া হল। হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়া ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দল ওপর থেকে ক্যামেরা তাক করে ফেলল দু’টি নেটে। একেবারে প্রথম নেটে শুরুতেই ব্যাট করতে ঢুকলেন কোহালি। পাশের নেটে কোচ কুম্বলে। মানে শুরুতেই মশলা। দু’জনে দুই নেটে। জল্পনা চালু হয়ে গেল, সম্পর্ক এখনও স্বাভাবিক হয়নি দলের দুই প্রধান মস্তিষ্কের মধ্যে।

Advertisement

আরও পড়ুন: শুরুতেই শেষ ক্রিস ওকসের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অভিযান

ওভালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ার্ম-আপ ম্যাচের পরে যা দেখা গিয়েছিল, এখানে পরিস্থিতি তার চেয়ে সামান্য ভাল বলা যেতে পারে। ওভালে দু’জনকে কথা বলতেই দেখা যায়নি। এখানে তা-ও দু’একবার কথা হল। কিন্তু সেই কথোপকথনে খুব বেশি উষ্ণতা রয়েছে বলে কখনওই মনে হয়নি। আর আটচল্লিশ ঘণ্টা পরে পাকিস্তান ম্যাচ। তার আগে ব্যক্তিগত ব্যবধান ভুলে টিমের স্বার্থে এক হওয়ার চেষ্টা করলেন দু’জনে— এর বেশি কিছু শান্তির বার্তা দেওয়া গেল না। বরং ভারতীয় ক্রিকেট দলের কভারেজের সঙ্গে পরিচিত সাংবাদিকদের নজর এড়াল না যে, শুক্রবারও কোহালিদের পক্ষ থেকে কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে এলেন না।

কিন্তু সেটা বললে প্রায় কিছু বলা হয় না। মনে করিয়ে দেওয়া দরকার ভারতীয় দলের সাম্প্রতিককালের রীতি। সেই রীতি হচ্ছে, অধিনায়ক কথা বলতে আসেন ম্যাচের আগের দিন। আর তার আগের দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কোচ। রবি শাস্ত্রী ডিরেক্টর থাকার সময় থেকে এই প্রথা চালু হয়েছিল। এতদিন পর্যন্ত এই রেওয়াজ চলেছিল। শুক্রবারের বার্মিংহামে সেটা ভেঙে ফেলা হল। আর কখনও তা ফিরবে কি না, সময়ই বলবে। তবে কোচ কুম্বলে সাংবাদিকদের সামনে আসা মানে অধিনায়কের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অগ্ন্যুৎপাত নিয়ে একঝাঁক প্রশ্নবাণের সামনে পড়া। সেই ঝক্কি ভারতীয় দল নিতে চায়নি।

কুম্বলে-কোহালি নাটকের দৃশ্য বলতে আর যা যা দেখা গেল, তা এ রকম—

১) কোহালি নেটে ঢোকার আগে প্যাড পরে যুবরাজ সিংহের পাশে বসা। কুম্বলে হাঁক পাড়লেন নেট শুরু। কোহালি-যুবি দু’জনে এগিয়ে গেলেন দুই নেটের দিকে। কোহালি-কুম্বলে কোনও কথা নেই।

২) কোহালি প্রথম নেটে। দ্বিতীয় নেটে যুবরাজ। প্রথম নেটে বল ছুড়ে ছুড়ে প্র্যাকটিস করাচ্ছেন ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার। পাশের নেটে যুবিকে প্র্যাকটিস করাচ্ছেন কুম্বলে। এখানে লক্ষণীয় হচ্ছে, যুবির সঙ্গেও কথা বলতে দেখা গেল না কোচকে।

৩) ধোনি বল ছুড়ে প্র্যাকটিস করাতে শুরু করলেন যুবিকে। তাঁকে বিশেষ করে পাঁজর লক্ষ্য করে বল ছুড়তে বললেন যুবি। যা রবিবার পাকিস্তান ম্যাচে মহম্মদ আমির-রা প্রচুর করবেন। ধোনির সঙ্গে হাল্কা কথা হল কুম্বলের। ব্যাটসম্যান যুবি বা পাশের নেটে থাকা কোহালির সঙ্গে কোনও কথাবার্তা নেই।

৪) হঠাৎ নেট পরিবর্তন করলেন কুম্বলে। যুবিকে ছেড়ে কোহালির নেটে ‘থ্রো-ডাউন’ (বল ছুড়ে ব্যাটসম্যানকে প্র্যাকটিস দেওয়ার ভঙ্গি) দিতে শুরু করলেন। খুব বেশি হলে দু’ওভার মতো চলল সেই প্র্যাকটিস। তার পরেই দ্বিতীয় নেটে ফিরে গেলেন কুম্বলে। সহকারী কোচ চলে এলেন কোহালির নেটে। সেই দু’ওভারে কথাবার্তা? নাহ্‌, নেই!

৫) চল্লিশ মিনিট মতো ব্যাটিং চলার পরে কুম্বলে হাঁক পাড়লেন লাস্ট রাউন্ড। শেষে বললেন, লাস্ট টু বল্‌স। বাধ্য ছাত্রের মতো দু’টো বল খেলে বেরিয়ে এলেন কোহালি। ওপর থেকে দেখে মনে হল, যুবি আরও দু’টো বল খেলার অনুরোধ করলেন। তার পর দু’জনেই বেরিয়ে এলেন। দেখে এটুকু পরিষ্কার হল, নেট পরিচালনার দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেননি কুম্বলে।

নেটের এমন লাইভ ধারাভাষ্য দিয়েও যেটা বোঝানো সম্ভব নয়, তা হচ্ছে, কোচ এবং অধিনায়কের মধ্যে কতটা উষ্ণতার অভাব। কথাবার্তা হয়তো টুকরো-টাকরা এখনও বলছেন দু’জনে, এক বার কোচের নির্দেশে ঘাড় নাড়তেও দেখা গেল কোহালিকে। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছিল যেন দু’টো পুতুলকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে চাবি ঘুরিয়ে দম দিয়ে কেউ ছে়ড়ে দিয়েছে। ধড় আছে, সম্পর্কে প্রাণ নেই। যতক্ষণ চাবির দম থাকবে, ততক্ষণ চলাফেরা করবে। দম শেষ হলেই ধড়াস করে পড়ে যাবে। পাকিস্তান ম্যাচের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে কোহালির মতো চনমনে আর এনার্জিসম্পন্ন কেউ থাকতেও ভারতীয় নেটকে এমন নির্জীব দেখায়নি কখনও।

দেখেশুনে মনে হচ্ছে, রবিবারের মহারণের আগে ভারতীয় ক্রিকেটভক্তদের প্রার্থনা দু’টি। ১) বার্মিংহামে বৃষ্টির পূর্বাভাস যেন ঠিক না হয়। যেন খেলা হয়। ২) সম্পর্ক না ফিরলে না ফিরুক, কোহালিদের মহড়ায় যেন প্রাণটা অন্তত ফেরে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement