আইএসএল

টানা চার ম্যাচে হেরে প্রায় বিদায় কলকাতার

বেঙ্গালুরুকে শেষ একুশ মিনিট দশজনে পেয়েও শনিবার হারাতে পারেনি এটিকে। উল্টে শেষ গোলটা হয়ে গেল ওই সময়। টানা চারটি ম্যাচে হারের লজ্জা নিয়ে শেষ চারে যাওয়ার আশাও শেষ হয়ে গেল গতবারের চ্যাম্পিয়নদের।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:৩২
Share:

উল্লাস: এটিকের বিরুদ্ধে গোলের পরে উচ্ছ্বসিত মিকু। ছবি: আইএসএল।

এটিকে ০ • বেঙ্গালুরু ২

Advertisement

তাঁর পুরনো ছাত্ররা জয়ের উচ্ছ্বাসে হাততালি দিতে দিতে গ্যালারির দিকে যাচ্ছেন।

Advertisement

সে দিকে একমনে তাঁকিয়ে ছিলেন অ্যাশলে ওয়েস্টউড। ব্রিটিশ কোচের মুখে অমাবস্যার অন্ধকার। হতাশার গ্রহণ লেগেছে যেন। যে ক্লাবকে ভারতীয় ফুটবল মানচিত্রে তুলে এনেছিলেন, প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন, তারাই জয়োল্লাস করছেন তাঁকে হারিয়ে— এটা মেনে নেওয়া যে কোনও পেশাদারের পক্ষেই যন্ত্রণার। হয়তো সে জন্যই রবি কিন-রা মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও তাঁকে দেখা গেল দীর্ঘক্ষণ নিজেদের রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। একজন মাঠ কর্মী তাঁকে এসে হাত ধরে নিয়ে গেলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। ম্যাচের পর অ্যাশলের গলায় তাই শুধুই আক্ষেপ। ‘‘আমরা যা সুযোগ পেয়েছি তাতে এই শাস্তি প্রাপ্য ছিল না। শুরুতে খারাপ গোল খাওয়ার পরও তিনটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ পেয়েছিলাম আমরা।’’

বেঙ্গালুরুকে শেষ একুশ মিনিট দশজনে পেয়েও শনিবার হারাতে পারেনি এটিকে। উল্টে শেষ গোলটা হয়ে গেল ওই সময়। টানা চারটি ম্যাচে হারের লজ্জা নিয়ে শেষ চারে যাওয়ার আশাও শেষ হয়ে গেল গতবারের চ্যাম্পিয়নদের। শুধু তাই নয়, টুর্নামেন্টে প্রথমবার সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ হারাতে চলেছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের টিম। এবং সেটা জঘন্য পারফরম্যান্স দেখিয়ে। শুরুতে আত্মঘাতী গোল হজমের পর শেষ দিকে নিকোলাস ফেডোর গোল বেঙ্গালুরুকে রেখে দিল লিগ টেবলের শীর্ষেই। এটিকে কোচ স্বীকার করে নিলেন, তাদের এ বার নিয়মরক্ষার ম্যাচই খেলতে হবে। ‘‘ফুটবলাররা তো শেষ ম্যাচ খেলা পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ। ভাল খেলার তাগিদ তাদের থাকা উচিৎ নিজেদের স্বার্থেই। এটাই এখন একমাত্র মোটিভেশন আমাদের।’’ কিন্তু অ্যাশলে কী নিজে আর কোচের পদে থাকতে পারবেন? টুর্নামেন্টের যা নিয়ম তাতে অস্থায়ী কোচ থাকতে পারবেন তিন ম্যাচ। সেটা তো হয়ে গিয়েছে। এটিকে কোচ অবশ্য বললেন, ‘‘নিয়মটা আমার জানা নেই।’’ শোনা যাচ্ছে, রবি কিন-কে কোচ কাম ফুটবলার করার কথা ভাবা হচ্ছে বাকি ম্যাচের জন্য।

লিগ এক নম্বর টিমের সঙ্গে আট নম্বর টিমের খেলা থাকলে যা হয়, শুরু থেকেই একটা কাঁপুনি কাজ করে। তার জেরে যে এভাবে দু’বারের চ্যাম্পিয়নদের উপর আছড়ে পড়বে সেটা বোঝা যয়নি। শুরুর তিন মিনিটের মধ্যেই এ ভাবে কেউ আত্মঘাতী হয়! যুবভারতীর অদূরে বাইপাসে এ দিন সকালে একটি মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনা ঘটে। অ্যাশলের দল গোলটাও হজম করল সে রকমই অপ্রত্যাশিত দুঘর্টনা ঘটিয়ে। বেঙ্গালুরুর উদান্ত সিংহ ডান দিক থেকে স্কোয়ার পাস করতে গিয়েছিলেন সুনীল ছেত্রীকে। সুনীলের পায়ে বলটা যাওয়ার আগেই নিজের গোলে তা ঢুকিয়ে দেন এটিকের এ দিনের অধিনায়ক জর্ডি মন্টেল। সুনীল যা করতেন, সেটাই করে দেখালেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার।

হারের হ্যাটট্রিকের পর এমনিতেই কোণঠাসা ছিল অ্যাশলের টিম। তবুও ব্রিটিশ কোচ সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও চেষ্টা করেছিলেন পাল্টা আক্রমণের ঝড় তুলে ফায়দা তুলতে। প্যাটারসনকে একমাত্র স্ট্রাইকার করে পাঁচ মিডিও নামিয়ে মাঝমাঠের পায়ের জঙ্গল তৈরি করছিল এটিকে। কিন্তু সুনীল ছেত্রী, উদান্ত, নিকোলাস ফেডোর (মিকু), লেনি রডরিগেসরা সেটা সামাল দিলেন যথেষ্ট দাপট দেখিয়ে। একটা সময় দেখা গেল লাল-সাদা জার্সির দশজনই নিজেদের অর্ধে খেলছে। রোকার দল মাঝমাঠের দখল নিলেও এটিকে কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই দুটো সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। জয়েশ রানের শট পোস্টে লেগে ফেরে। রায়ান টেলরের পঁচিশ গজের শট বেঙ্গালুরুর কিপার গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচান।

বিরতির আগে এটিকে-কে যতটা হতোদ্যম মনে হচ্ছিল, পরের অর্ধে সেটা সামান্য বদলাল রবি কিন নামার পর। প্রায় আড়াই কোটি টাকা নেওয়া তারকা সাড়ে চারটি ম্যাচ খেলছেন শেষ বারো ম্যাচের মধ্যে। তারপর চোট সারিয়ে দেশ থেকে ফিরে আবার নামলেন এ দিন। কিন্তু আয়ারল্যান্ড তারকা তো পুরো সুস্থই নন। মাঠে নামলে টাকা পাবেন, সে জন্যই নেমে পড়লেন। তাতে অবশ্য লাভ হয়নি। তার উপর ৬৯ মিনিটে লালকার্ড দেখে বাইরে চলে গেলেন বেঙ্গালুরুর রাইটব্যাক রাহুল ভেকে। ভাবা গিয়েছিল অ্যাশলের দল সেই সুযোগ কাজে লাগাবে।

তা তো হলই না। উল্টে টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে গেল কলকাতা। এ বারের আইএসএলে তারা এখন শুধুই দর্শক।

এটিকে: দেবজিৎ মজুমদার, আশুতোষ মেটা, জর্ডি মন্টেল, কোনর থমাস, কিগান পেরিরা, রায়ান টেলর, জয়েশ রানে, ডারেন কালডেরিয়া (শঙ্কর সাম্পানগিরাজ), রুপেট ননগ্রুম (রবি কিন), বিপিন সিংহ (কোমল থাটাল), মার্টিন প্যাটারসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন