প্রিয় শহরে পাক সম্রাট

আফ্রিদির টেনশনই শেষ করে দিল

আজ সকালে শাহিদ আফ্রিদিকে দেখামাত্র বুঝে গিয়েছিলাম, ও ভীষণ টেনশনে আছে। অনেক বার ওকে বললাম, রিল্যাক্স করো। কিন্তু ও সেটা পারল কোথায়? ওকে মাঠে নামতে দেখেও মনে হল, সেখানেও টেনশনটা নিয়ে এসেছে আফ্রিদি। শনিবার ওর ব্যাটিং বলুন বা বোলিং, দুটোতেই স্পষ্ট ফুটে উঠল সেই টেনশনটা। আর দিনের শেষে এটাই ভারত আর পাকিস্তান, দুটো টিমের মধ্যে তফাত গড়ে দিল।

Advertisement

ইমরান খান

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৬ ০৪:২৩
Share:

ইডেন যুদ্ধ তখনও শুরু হয়নি। শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে লাঞ্চে ইমরান খান।-সুব্রত কুমার মণ্ডল

আজ সকালে শাহিদ আফ্রিদিকে দেখামাত্র বুঝে গিয়েছিলাম, ও ভীষণ টেনশনে আছে। অনেক বার ওকে বললাম, রিল্যাক্স করো। কিন্তু ও সেটা পারল কোথায়? ওকে মাঠে নামতে দেখেও মনে হল, সেখানেও টেনশনটা নিয়ে এসেছে আফ্রিদি। শনিবার ওর ব্যাটিং বলুন বা বোলিং, দুটোতেই স্পষ্ট ফুটে উঠল সেই টেনশনটা। আর দিনের শেষে এটাই ভারত আর পাকিস্তান, দুটো টিমের মধ্যে তফাত গড়ে দিল।

Advertisement

ভারতের অধিনায়ক ধোনির কথা আর নতুন করে কী বলব? ওর শান্ত, ধীরস্থির ক্যাপ্টেন্সি আর ইডেনের উইকেটটা দুর্দান্ত ভাবে পড়া— এই দুটো জিনিস ওর দলকে এ দিন এগিয়ে রেখেছিল। অন্য দিকে পাকিস্তান অধিনায়ক কী কী ভুল করল? প্রথমত ইডেনের উইকেটটা একদম বুঝতে পারেনি আফ্রিদি। এটা যে স্কোয়ার টার্নার, এখানে যে বা়ড়তি স্পিনার খেলাতে হবে, সেটা ওর মাথায় আসেনি। আর সবচেয়ে বড় ভুল, নিজের টেনশনটা অত প্রকট ভাবে সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়া। ক্যাপ্টেন নিজে যে চাপে রয়েছে, সেটা নিজের টিমের মজ্জায় ঢুকিয়ে দেওয়া।

চাপের মুখে টিম তাকিয়ে থাকে তার ক্যাপ্টেনের দিকে। সেখানে অধিনায়কই যদি এত টেনশনে থাকে আর নিজের টেনশনটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়, তা হলে বাকিদের কী অবস্থা হবে? ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে প্রত্যাশার চাপ নিয়ে খুব বেশি ভেবে ফেলেছিল আফ্রিদি। কুড়ি বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পরেও ওর কেন সেটা হবে, আমাকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিতে পারব না।

Advertisement

উল্টো দিকে ধোনিকে দেখুন। ভারত যে এই ম্যাচটা পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে থেকে শুরু করেছিল, ওরা যে বেশি চাপে ছিল, সেটা ওর হাবভাব দেখে একবারও বোঝা গিয়েছে?

আমি আফ্রিদির জায়গায় থাকলে প্রথমেই একজন বাড়তি স্পিনার খেলাতাম। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ওয়ার্ম আপ ম্যাচে স্পেশ্যালিস্ট বাঁ-হাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম চারটে উইকেট নিয়েছিল। ইডেনেই। ওকে এই ম্যাচটায় অবশ্যই খেলানো উচিত ছিল। তবে আমার সবচেয়ে বেশি আফসোস হচ্ছে, ভারতের যখন মাত্র ২৩ রানে তিনটে উইকেট পড়ে গিয়েছে, তার পরেও বোলিং আক্রমণে স্পিনার আনল না আফ্রিদি। উইকেটের জন্য ঝাঁপাল না। একটুও লড়ল না। এত সহজেই হেরে গেল!

আমি একজন স্পোর্টসম্যান। আমি সব সময় মনে করে এসেছি, খেলায় হার-জিত থাকবেই। লড়াই করে হেরে তাই কোনও দিন বিশেষ দুঃখ পাইনি। আর এই জন্যই আজকের এই হারটা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। কারণ আজ এক মুহূর্তের জন্যেও পাকিস্তানকে লড়তে দেখলাম না। বরং সুযোগ পেয়েও সেটাকে অলস ভাবে হাত থেকে বেরিয়ে যেতে দিতে দেখলাম।

আপনাদের শহরে আসার সময় মনে হচ্ছিল, শনিবার আমি নিজেই বুঝি খেলতে নামব। আমার ভারতে আসার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল এই পাকিস্তান টিমটাকে এমন মানসিক ভাবে তৈরি করা যাতে ওরা নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী খেলতে পারে। কিন্তু দিনের শেষে মনে হচ্ছে, অত পেপটক দিয়ে লাভটা কী হল? ও সব বক্তৃতা শুনে কোনও দিন টিম জিততে পারে না। এ বার কি তা হলে আমাকে নিজেকেই মাঠে নামতে হবে?

দেখুন, বিপক্ষ টিম যত শক্তিশালী হোক না কেন, কোনও না কোনও সময় সে আপনাকে একটা সুযোগ দেবে। আর আপনি যদি খুনে মানসিকতার ক্যাপ্টেন হন, তা হলে সেই সুযোগটায় ঝাঁপিয়ে পড়বেন। আফ্রিদি আজ সেটা পারল না। গোটা ম্যাচে একটাই সুযোগ পেয়েছিল ও। ভারত যখন ২৩-৩ হয়ে গিয়েছে, তখন। কিন্তু সেটাকে কাজে লাগাতে পারল না। কোনও ঝুঁকি নিল না। স্পিনার আনল না। উইকেটের জন্য ঝাঁপাল না। জানি পাকিস্তানের হাতে রানটা খুব বেশি ছিল না। কিন্তু উইকেটটা কঠিন ছিল। স্পিনারদের মারতে গেলে ব্যাটসম্যান ভুল করলেও করতে পারত। হয়তো ঝুঁকি নিয়েও পাকিস্তান হারত। কিন্তু তবু তো একটা বলার জায়গা থাকত যে, আমরা লড়ে হেরেছি। সহজ আত্মসমর্পণের রাস্তায় যাইনি।

বিরাট কোহালিকে দেখে শিখতে পারে পাকিস্তান। ও যখন নেমেছে, টিম তখন মোটেই স্বস্তির জায়গায় নেই। কিন্তু এটাই বিরাট। যে কঠিন পরিস্থিতিতেও দারুণ খেলে ম্যাচ বার করে নিয়ে যেতে পারে। আর সেটা অত্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে। টেকনিক, টেম্পারামেন্ট, ট্যালেন্ট— তিনটেই ওর আছে। তাই কোহালি এত ধারাবাহিক, চাপের পরিস্থিতিতে এত ভাল। গোটা ইনিংসে এক বারও পাকিস্তানকে কোনও সুযোগ দেয়নি। কোহালির ইনিংস যত এগিয়েছে, ওর টিমের উপর থেকে চাপ তত কমেছে।

এত তোড়জোড় করে পাকিস্তানের একটা ম্যাচ দেখতে এলাম আর টিম হারল। পাকিস্তানি হিসেবে দুঃখ তো হবেই। কিন্তু বহু দিন পর ইডেনে এসে আজ যে অভিজ্ঞতা হল, তাতে একটা ভাল লাগাও তৈরি হয়েছে। ইডেনে কাটানো কয়েক ঘণ্টাকে এক কথায় বলব, দুর্দান্ত। আজকাল আমার আর ক্রিকেট দেখাই হয় না। নানা কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতে হয় যে, খেলা দেখার সুযোগ পাই না। এতটা সময় বের করে এ রকম একটা দিন যে কত বছর কাটানো হয়নি!

নিজের দেশের খেলায় হতাশ, এটা ঠিকই। কিন্তু মনে হচ্ছে, ছোটখাটো একটা ছুটি কাটিয়ে গেলাম আপনাদের এখানে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন