একান্ত সাক্ষাৎকারে অন্য কাতসুমি

রোজগারের জন্য এক সময় মদ ঢেলেছি, জোকার সেজেছি

তিনি ফুটবলার হিসেবে অনেক কথা বলেছেন আগে। কিন্তু ব্যক্তি ইউসা কাতসুমি কখনও এ ভাবে মেলে ধরেননি নিজেকে। গঙ্গাপারের ক্লাব তাঁবুতে এত দিনেও যা বলেননি, আরবসাগরের পারে টিম হোটেলে বসে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জীবনের সেই অন্য এক দিকের কথা বলে দিলেন অকপটে।

Advertisement

প্রীতম সাহা

মুম্বই শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৪
Share:

তিনি ফুটবলার হিসেবে অনেক কথা বলেছেন আগে। কিন্তু ব্যক্তি ইউসা কাতসুমি কখনও এ ভাবে মেলে ধরেননি নিজেকে। গঙ্গাপারের ক্লাব তাঁবুতে এত দিনেও যা বলেননি, আরবসাগরের পারে টিম হোটেলে বসে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জীবনের সেই অন্য এক দিকের কথা বলে দিলেন অকপটে।

Advertisement

প্রশ্ন: প্রচারের আলো আর কাতসুমি যেন বিপরীত দু’টো গ্রহ!

কাতসুমি: (একটু হেসে) শুরুতে মিশতাম। এখন সব ছেড়ে দিয়েছি। বিরক্ত লাগে।

Advertisement

প্র: কেন?

কাতসুমি: এক জন ফুটবলার সব সময় দারুণ পারফরম্যান্স দিতে পারে না। কিন্তু আমার যে ম্যাচটা মনে হয় দারুণ খেলেছি, সেটা মিডিয়ার মনে হয় খুব খারাপ খেলেছি। এ রকম ঘটনা বহুবার ঘটেছে। তখন নিজের কথা বোঝানোর জন্য আমি তো আর মারপিট করতে পারি না। তাই ঠিক করি, যে যা খুশি লিখুক আমি শুধু পারফর্ম করব। এ সব কথা কানে এলে খেলায় প্রভাব পড়ে।

প্র: তিন বছরেই আপনি মোহনবাগানের ঘরের ছেলে হয়ে উঠেছেন!

কাতসুমি: আমি আগে পেশাদার। তার পরে ফুটবোলিক (অ্যালকোহোলিকের মতো)। তার পরে ঘরের ছেলে, আবেগ, ভালবাসা, যা ইচ্ছে তাই বলুন। ভারতে আমি রোজগার করতে এসেছি। জাপানের সেই দিনগুলো কখনও ভুলব না।

প্র: কোন দিনগুলো?

কাতসুমি: (চোখ ছলছল) একটা সময় আমার কাছে কোনও ক্লাব ছিল না। একটা অ্যামেচার ক্লাবে খেলতাম। পেমেন্ট দিত না। রোজগারের জন্য পার্টিতে বেয়ারার কাজ করেছি। মানে কখনও হোটেল বয়। কখনও জোকার। বেড়াল, বাঘের ম্যাসকট সেজে বাচ্চাদের আনন্দ দিয়েছি। সারা দিন এক ভাবে দাঁড়িয়ে থেকেছি। মাঝে কখনও আধ ঘণ্টার বিশ্রাম পেতাম। কখনও সেটাও জুটত না। এমনকী জলও খেতে পারতাম না। আমি কারখানায় খালাসির কাজ পর্যন্ত করেছি। কিন্তু একটা কথা, ওই মদের গ্লাস সার্ভ করার সময়ও মাথায় ঘুরত, জোকার সেজে দাঁড়িয়ে থাকার সময়ও মাথায় ঘুরত— আমাকে এক দিন ফুটবল খেলে রোজগার করতে হবে!

প্র: অনেক কঠিন হার্ডল পেরিয়ে করে সাফল্য পেয়েছেন তা হলে?

কাতসুমি: হ্যাঁ। তবে ওই সময়টা আমাকে মানসিক দৃঢ়তাও দিয়েছে। সমন্বয়শক্তি বাড়িয়েছে। হয়তো সে কারণেই আমি সাফল্য পেয়েও বদলাইনি। বাজে খরচ করি না। কোনও খারাপ অভ্যাস নেই। ভারতে এসে শুরুতে ওএনজিসির প্লেয়ার্স কলোনিতে থাকার পরে এখন কলকাতার বহুতলে ঝকঝকে ফ্ল্যাটে থাকছি। কিন্তু এখনও আমার দিন শুরু হয় ধ্যান করে। শেষও হয় ধ্যান করে।

প্র: সবার ধারণা কাতসুমি দাম্ভিক, সিরিয়াস। আপনার মতে ব্যক্তি কাতসুমি কেমন?

কাতসুমি: একটুতেই টেনশন করে। আর প্রচণ্ড হতাশায় ভোগে।

প্র: আপনাকে দেখে তো সেটা মনে হয় না! বরং মাঠে মোহনবাগানের ইঞ্জিন বলা হয়?

কাতসুমি: ওটাই আমার দুর্বলতা। তবে সেটা আমি পরিশ্রম আর শৃঙ্খলা দিয়ে ঢেকে ফেলি। দিনের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দু’ঘণ্টা কোচের (প্র্যাকটিসের জন্য)। বাকি বাইশ ঘণ্টা আমি প্ল্যান করি। সময়ে খাওয়া, সময়ে ঘুমোনো। এমনকী স্নানের সময়ও বাঁধা আমার।

প্র: ফুটবলের বাইরে আপনার জগৎটা একটু ব্যাখ্যা করবেন?

কাতসুমি: আমি বাড়িতে থাকতেই বেশি ভালবাসি। অবসর সময়ে আমি জাপানি সিনেমা কিংবা কমেডি সিরিয়াল দেখি।

প্র: ফুটবলার না হলে কী হত কাতসুমি?

কাতসুমি: বেসবলার কিংবা অ্যাথলিট। আমি স্কুলে ১৫০০ মিটার করতাম। দৌড়তে আমার খুব ভাল লাগে।

প্র: তা হলে ফুটবলার হলেন কী ভাবে?

কাতসুমি: বেসবলে এত দৌড়াদৌড়ি নেই। ফুটবলে দৌড়ের সঙ্গে আছে ট্যাকটিক্স আর বিনোদনও। যেটা ১৫০০ মিটারে নেই।

প্র: আপনি এত হ্যান্ডসাম। গার্লফ্রেন্ডদের তো লাইন পড়ার কথা জাপানে?

কাতসুমি: (লাজুক হাসি) একেবারে না। স্কুল থেকেই আমি একজনকে ভালবাসি। গত বছর ওকে বিয়েও করেছি। আর ও আমার জীবনে আসার পরেই আমার হতাশা অনেকটা মুছে গিয়েছে।

প্র: কলকাতার কোন জায়গা আপনাদের সবচেয়ে পছন্দের? কোথায় যেতে পছন্দ করেন?

কাতসুমি: আমরা শপিং মলে ঘুরতে বেশি ভালবাসি। ইতালিয়ান ফুড আমাদের ফেভারিট।

প্র: এই তিন বছরে কলকাতায় কী শিখলেন আর জাপানের কী অভ্যাস ছাড়লেন?

কাতসুমি: কলকাতা আমাকে স্টারডম দিয়েছে। আমার স্বপ্নপূরণ করেছে। আর অভ্যাস? (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) সারা দিন আর বাঘ-বেড়ালের মুখোশ পরে দাঁড়াতে হয় না। মদের গ্লাস সার্ভ করতে হয় না। ভারী ভারী বস্তা টানতে হয় না…।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন