Tokyo Olympics

Tokyo Olympics: যে সবার আগে আমায় জড়িয়ে ধরেছিল, সেই সিমোনে বাইলসকে কোনও ভাবেই চিনতে পারছি না

আর্টিস্টিক জিমন্যাসটিক্সে বাইলস প্রবাদপ্রতিম। ক্রিকেটে সচিন তেন্ডুলকরের মতো। ওর এমন পরিণতি, ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে! এমন ভাবে চোখের জলে বিদায় নেবে ভাবতেই পারছি না।

Advertisement

দীপা কর্মকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২১ ১৭:৪১
Share:

সিমোনে বাইলসকে নিয়ে লিখলেন দীপা কর্মকার।

এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। যা শুনলাম ঠিক তো! এই সিমোনে বাইলসকে তো আমি চিনি না। ও আর্টিস্টিক জিমন্যাসটিক্সে প্রবাদপ্রতিম। অনেকটা ক্রিকেটে সচিন তেন্ডুলকরের মতো। ওর এমন পরিণতি, ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে! এমন ভাবে চোখের জলে বিদায় নেবে ভাবতেই পারছি না।

শারীরিক হোক বা মানসিক সমস্যা, গোটা পৃথিবী কিন্তু সেটা বুঝবে না। আমার মতো সবাই দেখল সিমোনে খারাপ ভল্ট দিল। ওর শরীরি ভাষায় সেই খুনে মেজাজ ধরা পড়ছিল না। আমার মতে ভল্টিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করার এটাই বড় কারণ। এমনকি পরের স্টার্ট লিস্টেও ওর নাম ছিল না। অন্য একজনের নাম ছিল। জানি না আদৌ বাকি ইভেন্টগুলিতে ও নামবে কিনা। সিমোনের না থাকা এই টোকিয়ো অলিম্পিক্সের জৌলুস অনেক কমিয়ে দিল। এত বড় মাপের অ্যাথলিট পরপর ইভেন্টগুলি থেকে থেকে নাম তুলে নিচ্ছে, ভাবলেই অবাক লাগছে!

Advertisement

ওর সঙ্গে আলাপ অনেক বছরের। কোনও দিন চাপ নিতে দেখিনি। জিম থেকে শুরু করে অনুশীলনের সময়, সারাক্ষণ মজা করতেই ব্যস্ত থাকে সিমোনে। কিন্তু এ বার যে কেন এমন হল! শুধু অলিম্পিক্স নয়, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সময়ও ওর সঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছি। দুজনে একসঙ্গে ভল্ট ইভেন্ট করেছিলাম। অলিম্পিক্সে আমি পদক হাতছাড়া করার পর ও সবার আগে এসে জড়িয়ে ধরেছিল। সেই মেয়েটা এ ভাবে পিছিয়ে যাবে বিশ্বাস হচ্ছে না।

সিমোনে বাইলসের সঙ্গে রিয়ো অলিম্পক্সে দীপা।

দলগত ফাইনাল থেকে নাম তুলে নেওয়ার পরেই নেট মাধ্যমে জানতে পারলাম ওর নাকি মানসিক সমস্যা হয়েছে। তাই এত বড় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হল।

Advertisement

পাঁচ বছর আগে রিয়ো অলিম্পিক্সে সিমোনে মোট চারটি সোনা জিতেছিল। এর মধ্যে একটি সোনা পেয়েছিল দলগত ইভেন্ট থেকে। ফলে সবার ওর কাছ থেকে বিপুল প্রত্যাশা ছিল। সেটাই তো স্বাভাবিক। সব প্রতিযোগিতায় চাপ থাকে। তবে অলিম্পিক্সে নিজেকে মেলে ধরার চাপ মারাত্মক। এটা লেখায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যে অলিম্পিক্সে নামে সে জানে এই চাপের মাহাত্ম।

দলগত ফাইনালে নামার আগে সিমোনে ইনস্টাগ্রামে একটা লেখা পোস্ট করেছিল। একজন সর্বোচ্চ স্তরের ক্রীড়াবিদ এত বড় মঞ্চে নামার আগে কতটা চাপে থাকে, সেটা ওর সেই লেখা পড়লেই বোঝা যায়। লিখছে, ‘আমি যেন নিজের কাঁধে গোটা দুনিয়ার ভার বহন করে নিয়ে চলেছি! অনেকেই ভাবছে আমি সব চাপ কাটিয়ে অলিম্পিক্সে ফের স্বমহিমায় ধরা দেব। তবে অলিম্পিক্স কিন্তু মজা করার জায়গা নয়।’ ওর এই লেখা পড়লেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা ভাল নেই। পরিবারকে ছেড়ে থাকাও ওর কাছ সমস্যার, সেটাও বুঝতে পারলাম। বাকিটা তখন জানতে পারব, যদি ও এই বিষয়ে মুখ খোলে।

সিমোনে বাইলস।

চাপের ধরনটা দুই ধরনের ক্রীড়াবিদদের জন্য আলাদা। একজন তরুণ অ্যাথলিট অলিম্পিক্সের আসরে নামলে তার চাপ এক রকম। কিন্তু সিমোনের মতো মানুষদের চাপ একেবারে আলাদা। এই চাপের পরিধি সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। এখন অলিম্পিক্সে অংশ নেওয়া ও পদক জয়ের মধ্যে সব কিছু থেমে থাকে না। দেশবাসীর চাপ, স্পনসরদের চাপ, বিপক্ষের বিরুদ্ধে জয় পাওয়ার চাপ এবং সর্বোপরি নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চাপ। এত কিছুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হয়।

তাই সিমোনের মতো মানুষও ভেঙে পড়তে পারে। দিনের শেষে সিমোনে তো আমার আপনার মতোই রক্ত-মাংসের মানুষ।

(লেখক প্রাক্তন অলিম্পিয়ান)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন