‘এলগারকে বললাম এ সব শট তুমি জো’বার্গে খেলো’

ডিন এলগারকে আউট করার পর তাঁকে কী যেন একটা বললেন। শাসালেন নাকি? দেখে সে রকমই মনে হল। ম্যাচের পর বলেই ফেললেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। বললেন, ‘‘ও সব শট জো’বার্গে গিয়ে খেলো, এখানে কায়দা মারতে এসো না।’’

Advertisement

রাজীব ঘোষ

মোহালি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:২১
Share:

ডিন এলগারকে আউট করার পর তাঁকে কী যেন একটা বললেন।

Advertisement

শাসালেন নাকি? দেখে সে রকমই মনে হল। ম্যাচের পর বলেই ফেললেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। বললেন, ‘‘ও সব শট জো’বার্গে গিয়ে খেলো, এখানে কায়দা মারতে এসো না।’’

আগের রাতে এলগারের একাধিক ইনিংসের ভিডিও দেখেছিলেন ইউ-টিউবে। কোন শট বেশি খেলেন, কোনগুলোয় আউট হওয়ার প্রবণতা, বুঝে নেন। শুক্রবার বল হাতে পেয়ে সেই শটগুলোই তাঁকে বেশি খেলানোর চেষ্টা করছিলেন। ‘‘জানতাম ও ওই শটগুলো বেশি খেলবে। ওকে বুঝিয়ে দিলাম ও সব জো’বার্গেই চলে। এখানে নয়।’’

Advertisement

শেন ওয়ার্নের পর এমন আগ্রাসী স্পিনার আর দেখা গিয়েছে? সম্ভবত না।

একটু আগেই ২৯ টেস্টে দেড়শো উইকেট নিয়ে এরাপল্লি প্রসন্নর রেকর্ড ভেঙেছেন। ৩৪ টেস্টে দেড়শো শিকারের নজির ছিল যাঁর। কাকতালীয় ভাবে ঠিক চার বছর আগে এই দিনেই ফিরোজ শাহ কোটলায় টেস্ট অভিষেক হয়েছিল তাঁর, যেখানে অনিল কুম্বলে একাই ইনিংসে দশ উইকেট নিয়ে মহানজির গড়েন।

এ দিন কুম্বলে স্বচক্ষে দেখলেন উত্তরসূরির অসাধারণ স্পেল। প্রশংসার বন্যাও বইয়ে দিলেন। বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে তাঁকে নিয়ে বলতে গিয়েও বেশ উত্তেজিত প্রসন্ন। বললেন, ‘‘দারুণ বল করছে ছেলেটা। কী নিখুঁত রিলিজ।’’ কিন্তু স্পিন সহায়ক উইকেটে তো তিনি ভাল বল করবেনই, বলতে না বলতে প্রায় ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, ‘‘কে বলেছে উইকেটের সাহায্য না পেলে ও এই বলটা করতে পারত না? আমি বলছি পারত। এ ভাবে বল করতে থাকলে ও যে কোনও উইকেটে সোনা ফলাবে।’’

অশ্বিন নিজেও বলছেন সে কথা। ‘‘এখন আমার ভাল বল করার জন্য উইকেট থেকে বেশি টার্নের দরকার কী? আমার হাত থেকে বল কী ভাবে বেরোচ্ছে, এটাই আসল। এখন আমার বল একেবারে নিখুঁত রিলিজ হচ্ছে।’’

পরপর সাফল্য। এত দ্রুত টেস্টে দেড়শো উইকটের ক্লাবে ঢুকে পড়া। কিংবদন্তিদের ক্লাবেই বা ঢুকে পড়বেন না কেন? প্রসন্ন এ বার একটু ডিফেন্সিভ। বললেন, ‘‘আমি কখনও তুলনায় যাই না। আমাদের মতো কি না, আমাদের চেয়ে ভাল কি না, ও সব ছেড়ে লিখুন, ও আরও উন্নতি করবে। নজির গড়বে।’’

সাইড স্ট্রেনের জন্য ওয়ান ডে সিরিজ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন। তাঁর প্রথম টেস্ট খেলা নিয়েও সন্দেহ ছিল। তার পর যে লড়াইটা লড়লেন, সেটাও তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে। অশ্বিন বলছেন, ‘‘স্ট্রেন হওয়ার পর তৃতীয় দিনই বল করার চেষ্টা শুরু করি। প্রধান রিহ্যাব ছিল বল হাতে না নিয়ে অ্যাকশনটা বারবার প্র্যাকটিস করে যাও। প্রচুর অফস্পিনের ভিডিও দেখাটাও তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে খুব সাহায্য করেছে।’’

আগের দিন ইনিংসের শুরুতেই অশ্বিনের হাতে নতুন বল তুলে দিয়েছিলেন কোহলি। এ দিন সকালে অমিত মিশ্রকে দিয়ে শুরু করার বেশ কয়েক ওভার পর অশ্বিনকে আক্রমণে আনেন। তার পরই ধস নামতে শুরু করে প্রোটিয়া ইনিংসে। এলগার, আমলা, ভিলাস, তাহিরকে ফেরান তিনি। এবিকে না নিতে পারা কি আফসোসের? বললেন, ‘‘আজ ওর বিরুদ্ধে যে তিন ওভারের স্পেলটা করলাম, তাতে যে কোনও সময় ওকে আউট করে দিতে পারতাম। লাইনটা নিখুঁত হচ্ছিল তখন। দুর্দান্ত একটা স্পেলের মধ্যে ছিলাম। ওকে নিতে পারলে খুব ভাল হত।’’

বিপক্ষ দেশের সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমলাদের একহাত নিতেও ছাড়লেন না অশ্বিন। প্রোটিয়াদের শট দেখে অবাক হয়েছেন? প্রশ্নটা শুনে বললেন, ‘‘বরং প্রথম ইনিংসে আমাদের ব্যাটসম্যানদের কয়েকটা শট দেখেই অবাক হয়েছি।’’

মাঠে পাঁচ উইকেট নিলেও মাঠের বাইরে যে মেজাজে ছিলেন তিনি, সেই মেজাজে থাকলে হয়তো দশটা উইকেটই নিয়ে নিতেন। ভারতীয় দলে এমন কথা বলার লোক বড় একটা নেই বোধহয়। কেমন কথা? অশ্বিন বলছেন, ‘‘ভুলের কথা বলছেন? ভুল হওয়া দরকার। ভুল থেকেই মানুষ শেখে। ভুল না করলে আমরা শিখব কী করে? তাই আমার ধারণা, যত ভুল হবে, সেটা আমার পক্ষে তত ভাল। কেরিয়ারটা যেহেতু আমার, তাই কারও কাছে জবাবদিহি করার কোনও তাগিদ নেই। আমার মাথায় ও মনে যা ছিল, মাঠে গিয়ে সেগুলোই দিয়ে এসেছি। তাতে অনেক কিছু শিখলামও। আর এই যে আমি এ সব বলছি আপনাদের, তাতে আমার গায়ে কেউ ঔদ্ধত্যের লেবেল এঁটে দিতে পারে। কিন্তু আমি এ রকমই।’’

মাঠেও নিজেকে এ রকম রাখতে চান অশ্বিন। সোজাসাপটা, আগ্রাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন