হাড় ভাঙার সঙ্গে মনও ভেঙে পড়ে। সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করে যে টিমটাকে ট্রফি জয়ের একেবারে কাছাকাছি নিয়ে এলেন, সেই আটলেটিকো দে কলকাতার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ছবিতে তিনি-ই কি না ফ্রেমের বাইরে!
আইএসএল শেষ হয়ে গিয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ আগে। কিন্তু মাঠে কাপ তুলতে না পাড়ার আফসোস এখনও যাচ্ছে না অর্ণব মণ্ডলের। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম সেমিফাইনালের আগে হঠাৎ হাঁটুটা লক হয়ে গেল। বুঝে যাই, শেষ পর্যন্ত খেলতে পারব না। চ্যাম্পিয়ন হলে কাপটাও তুলতে পারব না হিউমের সঙ্গে।’’
ভারতের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারের চোটে এটিকে-র চ্যাম্পিয়ন হতে কোনও অসুবিধা হয়নি। তবে অর্ণবের জন্য ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের কতটা সমস্যা হবে? যা পরিস্থিতি তাতে, আরও তিন সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাঁকে। অর্ণব তাড়াহুড়ো করতে চাইছেন না। সুস্থ হয়েই ফিরতে চাইছেন। বলছিলেন, ‘‘এখন দিনে আড়াই ঘণ্টা মতো রিহ্যাব করছি। সোমবার ড্রেসিং খুলব। তার পরে সুইমিং, সাইক্লিং শুরু হবে। স্যান্ড ব্যাগের ওজনটাও বাড়াব। আমাকে ইস্টবেঙ্গলের ফিজিও সাইমন যেমন ভাবে বলছেন, ঠিক তেমন ভাবেই রিহ্যাব করছি।’’
ট্রেভর মর্গ্যান অবশ্য অর্ণবকে জোর দিচ্ছেন না। আসলে আই লিগের জন্য বেহালার বাসিন্দার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ টিমে, সেটা লাল-হলুদের সাহেব কোচের থেকে বেশি কে আর জানে! যদিও আই লিগের প্রথম দু’তিনটে ম্যাচে দলের সেরা ডিফেন্ডারকে পাওয়া যাবে না বলে তিনিও বেশ চিন্তিত। অর্ণব অবশ্য বললেন, ‘‘আমি শুরুর দিকে না থাকলেও, মনে হয় না তেমন কোনও অসুবিধা হবে। আনোয়ার, গুরবিন্দর ছাড়াও বুকেনিয়া আছে। ওরা ঠিক সামলে নেবে।’’
আইএসএলে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন অর্ণবের টিম এটিকে। কিন্তু আই লিগে কোথায় সমস্যা হচ্ছে তাঁর টিম ইস্টবেঙ্গলের, সেটাও এদিন জানালেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ক্লাব ফুটবলে সবচেয়ে বড় সমস্যা ফিটনেসের। এগারো জন নয়, দলের চব্বিশ জন ফুটবলারকেই ফিট থাকতে হবে। যেটা এটিকে-তে ছিল। তাই তো মলিনাও ন’জন ফুটবলার পরিবর্তন করার সাহস দেখাতে পেরেছিলেন। তা ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স লাক বলেও একটা ফ্যাক্টর আছে। আমরা খুব কাছাকাছি এসেও, ট্রফি পারছি না। তবে আইএসএলে পারিনি। আই লিগ ট্রফিটা হাতে নিয়েই মাঠ ছাড়তে চাই।’’
অর্ণব এমন এক জন ফুটবলার যিনি মর্গ্যানের কোচিংয়েও খেলেছেন, আবার মলিনার কোচিংয়েও খেলেছেন। এবং এটিকে কোচের সঙ্গে লাল-হলুদ কোচের প্রচুর মিল খুঁজে পেলেন তিনি। বলছিলেন, ‘‘দু’জনেই খুব শান্ত। উচ্ছ্বাসহীন। হারলে মাথায় বাজ পড়ে না। আবার জিতলেও লাফালাফি করেন না। বরং দু’জনের মধ্যেই একই প্রবণতা— আরও ভাল করতে হবে। এমনকী ট্রফি জেতার পরে কিংবা ভাল গোল করলেও, সেটাই বার বার বলেন। তা ছাড়া দু’জনের ম্যাচ রিডিং খুব ভাল।’’
কিন্তু মলিনার মতো সাহস মর্গ্যান কি দেখাতে পারবেন ম্যাচে? প্রথমে খানিকক্ষণ চুপ। তার পরে অর্ণব বলে উঠলেন, ‘‘যতটুকু মর্গ্যানকে আমি চিনি, উনি ভয় পাবেন না। ও রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে, উনিও পারবেন সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে। তবে নেবেন কি না সেটা পুরোটাই তার ওপর।’’