Harry Kane

Euro 2020: সমাজসেবী, প্রচারবিমুখ, কার্টুনপ্রেমী, এই হ্যারি কেনকে আমরা কেউ চিনি না

সব রকম ভাবে গোল করার অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে। সেই যে সাত বছর আগে গোল করা শুরু করেছিলেন, তা এখনও থামেনি।

Advertisement

অভীক রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২১ ০৯:১১
Share:

তিনি গোল করতে ভালবাসেন এবং গোল করেন। অনায়াস দক্ষতায়, যখন খুশি। —ফাইল চিত্র

হ্যারি কেনের সম্পর্কে এমন অনেক তথ্যই আছে, যা আমরা সবাই জানি। প্রথমত, তিনি ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। এমন একটা পদ, যা সবার ভাগ্যে জোটে না। খ্যাতি এবং বিড়ম্বনা, দুই-ই এই পদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত।

Advertisement

দ্বিতীয়ত, তিনি গোল করতে ভালবাসেন এবং গোল করেন। অনায়াস দক্ষতায়, যখন খুশি। দুই পা দিয়ে, মাথা দিয়ে, দূর থেকে বা কাছ থেকে। সব রকম ভাবে গোল করার অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে। সেই যে সাত বছর আগে গোল করা শুরু করেছিলেন, তা এখনও থামেনি।

খুব শীঘ্র হয়তো থামবেও না। প্রিমিয়ার লিগে ইতিমধ্যেই তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় সাত নম্বরে। আগামী মরসুমে আরও কয়েক ধাপ উপরে উঠে আসবেন। ছাপিয়ে যাবেন অ্যালান শিয়েরারকেও। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ওয়েন রুনির রেকর্ডও আজ সুরক্ষিত নয় তাঁর দাপটের সামনে। এবারের ইউরোতেও প্রথম তিন ম্যাচে গোল করতে না পারলেও, পরের দু’ম্যাচে তিন গোল করে ফেলেছেন।

Advertisement

ফুটবলের বাইরেও হ্যারির একটা আলাদা জীবন রয়েছে, যে জীবনের কথা আমরা কেউ জানি না। —ফাইল চিত্র

হ্যারি কেন এবং টটেনহ্যাম, এই দুটি জিনিস যেন একে অপরের পরিপূরক। ছোট থেকে একটাই স্বপ্ন দেখতেন তিনি, টটেনহ্যামের জার্সি গায়ে খেলা। আদর্শ ডেভিড বেকহ্যাম। তাই ইংল্যান্ডের জার্সিও তাঁর কাছ সমান লোভনীয় ছিল।

কিন্তু ইউরো কাপ খেলতে আসার আগে সেই ক্লাব নিয়েই টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যে ক্লাবে খেলার স্বপ্ন দেখতেন, সেই ক্লাবই ত্যাগ করার কথা ভেবেছেন। টাকার থলি নিয়ে তাঁর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে চেলসি এবং দুই ম্যাঞ্চেস্টার। ইউরো কাপ শেষ হলেই হয়তো সেই নাটকের যবনিকা পতন হতে চলেছে।

কিন্তু ফুটবলের বাইরেও হ্যারির একটা আলাদা জীবন রয়েছে, যে জীবনের কথা আমরা কেউ জানি না। বেকহ্যাম যে স্কুলে পড়েছেন, সেই একই স্কুলে পড়েছেন তিনি। টিভিতে কার্টুন, বিশেষত ‘ডেক্সটার’ দেখতে প্রচণ্ড ভালবাসেন। আমেরিকার জাতীয় ফুটবল লিগের অন্ধ ভক্ত। ভাল লাগে টম ব্র্যাডিকে।

নিজেকে ‘সেলিব্রিটি’ ভাবতে একেবারেই পছন্দ করেন না। একবার টটেনহ্যামের হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে গিয়েছিলেন। সন্ধে বেলায় হাঁটতে বেরিয়েছিলেন স্থানীয় একটি মলে। কিছুক্ষণ পরেই আবিষ্কার করেন তিনি হাজার হাজার সমর্থকের মাঝে বন্দি। সবাই একবার তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তুলতে চান, অথবা হাত মেলাতে চান। সে যাত্রায় ক্লাব তাঁকে বাঁচিয়ে দেয়। কিন্তু ওই একটি ঘটনায় হ্যারি বুঝতে পেরেছিলেন, খ্যাতির বিড়ম্বনা সবে শুরু হল।

নিজেকে সেলিব্রিটি না ভাবার পিছনেও লম্বা ইতিহাস। ছোটবেলা থেকে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও, নানা কারণে তাঁর প্রতিভার বিকাশ হয় দেরিতে। একের পর এক সুযোগ হারাচ্ছিলেন। এই ক্লাব থেকে সেই ক্লাবে লোনে কাটছিল তাঁর ফুটবলজীবন। এক সময় ভেবেছিলেন খেলা ছেড়ে দেবেন। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন হতাশার দিকে। তখনই জীবনে আসে বদল। হ্যারি নিজের দুঃখের দিনের কথা ভুলে যাননি।

কঠোর পরিশ্রমের জন্য গোটা বিশ্বে সমাদর করা হয় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে। হ্যারিও তাঁর থেকে কম যান না। ছোট ক্লাবে খেলার সময় থেকেই ফুটবলের ছোটখাটো জিনিস নিয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করেছেন তিনি। কোথাও খামতি রাখতে চাননি। পা হোক বা মাথা, সব রকম ভাবেই গোল করায় পারদর্শী হতে চেয়েছেন। ‘পাগল’, ‘মাথা খারাপ’ জাতীয় তকমা ধেয়ে এসেছে অহরহ। আজও, নিজের ফুটবলজীবনের তুঙ্গে থাকা সময়েও প্রতিনিয়ত নিজের খেলার উন্নতি করার ব্যাপারে ভাবেন তিনি।

মেসি, রোনাল্ডোর মতো আর্থিক ভাবে বলশালী তিনি হয়তো নন। —ফাইল চিত্র

মেসি, রোনাল্ডোর মতো আর্থিক ভাবে বলশালী তিনি হয়তো নন। কিন্তু সেই সুযোগ তাঁর কাছেও ছিল। একাধিক নামী সংস্থা প্রচুর অর্থের টোপ দেখিয়ে তাঁকে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। হ্যারি রাজি হননি। ঠিক করে নিয়েছেন সেই ধরনের বিজ্ঞাপনই করবেন, যা তাঁর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে খাপ খায়।

একাধিক চ্যারিটি রয়েছে হ্যারির। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে তাদের সাহায্য করেন। অতিমারির সময়ে তাঁর ছোটবেলার ক্লাব কেটন লোরিয়েন্ট উঠে যেতে বসেছিল। হ্যারি তাদের জার্সির স্পনসর হয়ে যান।

কেন নিজেকে প্রচারের আলো থেকে দূরে রাখতে চান? এক সাক্ষাৎকারে তার উত্তর দিয়েছিলেন হ্যারি। বলেছিলেন, “আমি লোকের নজর কাড়তে চাই না। খুব সতর্ক ভাবে এ সব জিনিস এড়িয়ে চলি। ফুটবল খেলাই আমার কাজ। আজ যেখানে এসেছি, তার পিছনে কঠোর পরিশ্রম জড়িয়ে রয়েছে। এটার জন্যই আমি টাকা পাই। তাই আমার ফুটবল দেখে লোকে বেশি আনন্দ পাক, এটাই চাই।”

অনেকেই হয়তো জানেন না। হ্যারি গল্ফ খেলতে খুব ভালবাসেন। সুযোগ পেলেই ছুটে যান স্থানীয় গল্ফ কোর্সে। এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “গল্ফ আমাকে শান্তি দেয়। আমার কাছে এটা এক ধরনের ধ্যান। চার-পাঁচ ঘণ্টা ফুটবল থেকে দূরে থাকি। শুধু গল্ফ নিয়ে ভাবি। তাই পরে আবার ফুটবল খেলার সময় অনেক তরতাজা হয়ে নামতে পারি।”

গল্ফ খেলতে খেলতেই কথায় কথায় ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক্তন ফুটবলার গ্যারি নেভিলকে জানিয়েছিলেন, তিনি টটেনহ্যাম ছাড়তে চান। জীবনে নতুন কিছু অর্জন করতে চান। এমন কিছু করতে চান, যাতে খেলা ছাড়ার পরেও লোকে তাঁকে মনে রাখে।

সেই ভাবনা এখনও যায়নি। তবে আপাতত তাঁর কাছে ইংল্যান্ডকে ইউরো কাপ জেতানোই প্রধান লক্ষ্য। প্রতিযোগিতা খেলতে আসার আগে বলেছিলেন, “ইংল্যান্ড আমার কাছে সবার আগে। এই দেশের জার্সিতে খেলা আমার জীবনের সব থেকে বড় প্রাপ্তি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বা প্রিমিয়ার লিগ প্রতি বছর আসে। কিন্তু এবার ইংল্যান্ডের হয়ে কিছু জিততে চাই।”

কোনওদিন ইউরো কাপ জেতেনি ইংল্যান্ড। ৬০ বছর পর তাঁর হাত ধরেই খরা কাটানোর স্বপ্ন দেখছেন ইংরেজরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন