রিওয় সোনা জিতে বোল্ট নামলেন অমরত্ব খুঁজতে

উসেইন বোল্ট মানেই বিদ্যুৎ এবং একই সঙ্গে ঝড় জানাই ছিল। তিনি এলেন, দেখলেন এবং অলিম্পিক্সে টানা তিন বার এক নম্বর দ্রুততম মানব হওয়ার সোনা পকেটেও পুরে ফেললেন। আর সাংবাদিক সম্মেলনে এসে হুঙ্কার দিলেন, ‘‘অনেকেই বলছেন আমি নাকি অমর হয়ে থাকব অলিম্পিক্সে। অমর তো হবই। আরও দু’টো ইভেন্ট জিততে দিন শুধু।’’

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

রিও দে জেনেইরো শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫৪
Share:

তৃতীয় বারেও ম্যাজিক অটুট। রিও অলিম্পিক্সে সোনা জয়ের পরে মেজাজে উসেইন বোল্ট। ছবি: পিটিআই

উসেইন বোল্ট মানেই বিদ্যুৎ এবং একই সঙ্গে ঝড় জানাই ছিল। তিনি এলেন, দেখলেন এবং অলিম্পিক্সে টানা তিন বার এক নম্বর দ্রুততম মানব হওয়ার সোনা পকেটেও পুরে ফেললেন। আর সাংবাদিক সম্মেলনে এসে হুঙ্কার দিলেন, ‘‘অনেকেই বলছেন আমি নাকি অমর হয়ে থাকব অলিম্পিক্সে। অমর তো হবই। আরও দু’টো ইভেন্ট জিততে দিন শুধু।’’

Advertisement

লন্ডন ও বেজিং মিলিয়ে ছ’টি সোনার পদক। রিওয় একশো মিটারে সোনা জিতে প্রথম অ্যাথলিট হিসেবে অলিম্পিক্সের অন্যতম গ্ল্যামার ইভেন্টে টানা তিন বার প্রথম হওয়ার নজির গড়লেন বোল্ট। এর পর যাঁকে অনায়াসে কিংবদন্তি বলাই যায়।

কিন্তু তাঁর নাম যে উসেইন বোল্ট। যিনি কিংবদন্তি হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চান না। অ্যাথলেটিক্সের ইতিহাসে ‘অমরত্ব’ লাভ করতে চান জামাইকান সুপারস্টার। আর বোল্টের মতে, তাঁর এই দুর্লভ কৃতিত্বের জন্য এখনও চাই আরও দুটো সোনার পদক। সেই অবিশ্বাস্য ‘ট্রিপল ট্রিপল’ স্বপ্নকে বাস্তব করাই প্রধান লক্ষ্য। পারবেন তো? বোল্ট বলছেন, ‘‘অবশ্যই বাকি দুটো রেসও জিতব। অমর হতে যেটা আমার দরকার।’

Advertisement

লন্ডন অলিম্পিক্সে তিনটি সোনা অনায়াসেই পকেটে পুরে নেওয়ার পর বলেছিলেন, ‘‘আই অ্যাম দ্য গ্রেটেস্ট।’’ আর রিও-তে জীবনের শেষ অলিম্পিক্সে ‘ট্রিপল ট্রিপল’ করে খুঁজছেন অমরত্ব। বিশ্বের তাবড় সাংবাদিকরা হাজির সাংবাদিক সম্মেলনে। সবাই প্রশ্ন করতে চায়। কিন্তু ‘অমর’ শব্দটা জামাইকান অ্যাথলিটের মুখ থেকে বেরোনোর পর কোথাও এতটুকু উসখুসানি দেখলাম না কারও মধ্যে। সবাই যেন ধরে নিয়েছেন, বোল্ট যা বলবেন সেটাই সত্য। কারণ তিনি সেটা করবেনই।

কিন্তু বোল্টের দৌড়ের প্রসঙ্গে পড়ে আসছি। তাঁর আসার আগের মঞ্চের কথাটা একটু বলে নেওয়া যাক। সেটা কেমন?

ভাবিনি, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের একটা একশো মিটারের দৌড় দেখতে লোক দুপুর থেকে লাইন দেবে। জামাইকার ইতিহাস তৈরি করা স্প্রিন্টার এখানে জীবনের সেরা সময় করেননি ঠিক। কিন্তু তাঁকে দেখার জন্য যে আবেগের বিস্ফোরণ দেখলাম তা কলকাতার ডার্বি ম্যাচকে হার মানাতে বাধ্য। রবিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ছিল বোল্টের ইভেন্ট। দুপুর একটাতেই অলিম্পিক্স স্টেডিয়ামের বাইরে লম্বা লাইন। যে লাইন সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলেছে। তাঁরা কখন স্টেডিয়ামে ঢুকবেন কেউ জানে না। অপেক্ষার কোথায় শেষ তা-ও কেউ জানে না।

বোল্ট মাঠে ঢুকতেই শব্দব্রহ্ম। ‘বোল্ট, বোল্ট’ চিৎকারে পাশে কে কী বলছে শোনা যায় না। বিশ্বের সর্বকালের সেরা স্প্রিন্টার মাঠে ঢুকেই হাত তুললেন। গর্জন যেন আরও বেড়ে গেল।

এ বার স্টার্টিং পয়েন্টে দাঁড়ালেন বিদ্যুৎ। সঙ্গে তাঁর এক নম্বর এবং ঘোষিত সমালোচক যুক্তরাস্ট্রের জাস্টিন গ্যাটলিন। দৌড় শুরু হতে না হতে শেষ। পঞ্চাশ মিটার পর্যন্ত গ্যাটলিন এগিয়ে। সত্তর মিটার পর্যন্ত বোল্ট পিছিয়ে। স্টেডিয়াম হঠাৎ-ই স্তব্ধ। কিন্তু জিনিয়াসরা যে এ রকমই হন। ছিলার থেকে তির যে রকম বের হয়, তেমনই ছিটকে বেরোলেন বোল্ট। শেষ তিরিশ মিটারে তিনি সত্যিই যেন বিদ্যুৎ। ফিনিশিং লাইনে পৌঁছেই জামাইকান পতাকা নিয়ে দৌড়লেন। তারপর গ্যালারিতে গিয়ে সমর্থকদের সঙ্গে হাত মেলানো। সেলফির আব্দার মেটানো। উচ্ছ্বাস প্রকাশ। কে বুঝবে, এই লোকটা জিনিয়াস।

সময় ভাল হয়নি তাঁর। বেজিংয়ে করেছিলেন ৯.৬৯। লন্ডনে করেছিলেন ৯.৬৩। সেটা ছিল অলিম্পিক্স রেকর্ড। আর রিও-তে ৯.৮১। ‘‘আমার শুরুটা আজ ভাল হয়নি। কিন্তু আমি আমার লক্ষ্যে সফল। দিনের শেষে কিন্তু আমিই চ্যাম্পিয়ন,’’ ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন বোল্ট। অথচ তাঁর চোট নিয়ে কত জল্পনাই না ছিল।

জুলাই মাসেই হ্যামস্ট্রিং ছিঁড়ে যায় বোল্টের। এক সময় তো মনে হয়েছিল রিও হয়তো নামাই হবে না বোল্টের। কিন্তু এরই তো নাম বোল্ট। যিনি শুধু হ্যামস্ট্রিং চোট সারিয়ে ফিরলেন না। সোনার পদকটাও ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন। বোল্টের ধারাবাহিকতার রহস্য কী? জামাইকান কিংবদন্তি বললেন, ‘‘আমি এখন অনুশীলনের সময় কমিয়ে দিয়েছি। আগে দু’ঘণ্টা করতাম। এখন এক ঘণ্টা ২০ মিনিট করি।’’

১০০ মিটার শুরুর আগে বোল্টকে সমালোচনা করতে ছাড়েননি গ্যাটলিন। বোল্টে আদৌ একশো শতাংশ ফিটনেস নিয়ে অলিম্পিক্সে এসেছেন কিনা সেই ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন গ্যাটলিন। নিজের সেরা সমালোচকের মুখ বন্ধ করে তাই স্বভাবতই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন বোল্ট। গ্যাটলিন প্রসঙ্গ উঠতেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘গ্যাটলিন প্রতি বারই চ্যালেঞ্জ জানায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারে না। প্রতিপক্ষের তো এটাই কাজ। ও সেটা করছে।’’ আরও কত প্রশ্ন। বোল্ট ধৈর্য ধরে শুনলেন। উত্তরও দিলেন। যাওয়ার সময় বলে গেলেন, ‘‘আর একটা দিন ধৈর্য ধরুন, আমার একটা রেকর্ড দেখতে পাবেন।’’

বোঝাই যাচ্ছিল, ২০০ মিটারের মানসিক প্রস্ততি এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছেন উসেইন বোল্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন