দশ বছরের পরিশ্রমের ফল বিদর্ভের জোড়া রঞ্জি খেতাব

গত বছর তাঁরা রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে সেই ছবি বদলে ট্রফি-সহ দলের গ্রুপ ছবি বসানোর প্রস্তাব আসে। কিন্তু সেই পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন না দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার। কারণ, তাঁরা ট্রফির ছবিই সব সময় চোখের সামনে রাখতে চেয়েছিলেন।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪০
Share:

চ্যাম্পিয়ন: টানা দ্বিতীয় রঞ্জি ট্রফি জয়ের পরে উচ্ছ্বাস বিদর্ভের ক্রিকেটারদের। বৃহস্পতিবার নাগপুরে। পিটিআই

উমেশ যাদব, ওয়াসিম জাফরদের দলের হোয়াটস্যাপ গ্রুপের ‘ডিসপ্লে পিকচার’ বা ‘ডিপি’-তে রয়েছে রঞ্জি ট্রফির ছবি। এই গ্রুপের শুরুর দিন থেকে একই ছবি রয়েছে সেখানে।

Advertisement

গত বছর তাঁরা রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে সেই ছবি বদলে ট্রফি-সহ দলের গ্রুপ ছবি বসানোর প্রস্তাব আসে। কিন্তু সেই পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন না দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার। কারণ, তাঁরা ট্রফির ছবিই সব সময় চোখের সামনে রাখতে চেয়েছিলেন। যাতে এ বছরেও তাঁরা রঞ্জি জয়ের লড়াইয়ে সফল হওয়ার প্রেরণা পান। যাতে প্রমাণ করতে পারেন, গত বারের সাফল্যটা কোনও অঘটন ছিল না।

ভারতসেরা দলের সবচেয়ে সিনিয়র সদস্য ওয়াসিম জাফর বৃহস্পতিবার নাগপুর থেকে ফোনে বলেন, ‘‘ভোর থেকে রাতে শুতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত যদি চোখের সামনে রঞ্জি ট্রফির ছবি ভাসতে থাকে, তা হলে কার না মনে হয়, আমাকে ওটা হাতে তুলতেই হবে? সে জন্যই ডিপি বদলানোর পক্ষে ছিলাম না।’’

Advertisement

এই গ্রুপে সব চেয়ে বেশি সক্রিয় যিনি, সেই কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত বৃহস্পতিবার বিকেলে ফোনে বলছিলেন, ‘‘প্রথম দু’টো ম্যাচে এক পয়েন্ট করে পাওয়ার পরে গ্রুপে আমি লিখি, পরের ম্যচেও একই ফল হলে আমি ওই ডিপি-টাই বদলে ওখানে একটা বড় শূন্য বসিয়ে দেব। তাতেই কাজ হয়।’’ ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁকে সব চেয়ে সফল কোচ বললে বোধহয় ভুল হয় না। কোচ হিসেবে মুম্বইকে পরপর দু’বার (২০০৩, ২০০৪) রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন করার পরে বিদর্ভকেও টানা দু’বার জেতালেন। খেলোয়াড় হিসেবেও টানা দু’বার রঞ্জি জেতেন, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫-তে। রঞ্জি-ভাগ্যে সেরা পণ্ডিত যোগ করেন, ‘‘ক্রিকেটীয় ভুলভ্রান্তি শোধরানো বা কৌশল তৈরির চেয়ে আমার বেশি কাজ ওদের মানসিক ভাবে উদ্বুদ্ধ করা। ওদের দক্ষতা নিয়ে সংশয় নেই।’’

ফৈজ় ফজ়লদের চাঙ্গা থাকার আরও একটা বড় কারণ, চল্লিশোর্ধ ওয়াসিম জাফর। দুই রঞ্জি মরসুমে হাজারের বেশি রান তুলে যিনি নতুন নজির গড়েছেন। ২০০৮-২০০৯ মরসুমে মুম্বইয়ের হয়ে ১২৬০ করার পরে এই মরসুমে ১০৩৭ রান করেন তিনি। চারটি সেঞ্চুরি। ৪১ বছর বয়সেও এত ফিট ও পরিশ্রমী জাফরকেই কোচ পণ্ডিত বারবার দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেন দলের সামনে। কোচ বলেন, ‘‘ওয়াসিমের মতো চরিত্র থাকলে কোচিংটা অনেক সোজা হয়ে যায়। ড্রেসিংরুমের মধ্যেই এমন এক আদর্শ ক্রিকেটার থাকলে আর চিন্তা কী?’’

যাঁকে নিয়ে এত গর্ব কোচের, আট দিন পরেই ৪২-এ পা দিতে চলেছেন সেই জাফর। বিরাট কোহালির মতো ফিটনেস মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েই যে ক্রিকেট জীবনে পুনর্জন্ম হয়েছে, তা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই তাঁর। ২০১৭-য় যিনি কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই বিদর্ভের হয়ে খেলতে রাজি হয়ে যান শুধুমাত্র ক্রিকেটের টানে, সেই জাফর বৃহস্পতিবার দুপুরে নাগপুর থেকে ফোনে বলেন, ‘‘চোটের জন্য একটা বছর নষ্ট হওয়ার পরে মনে হয়, নিজেকে একশো শতাংশ ফিট রাখতে না পারলে বেশি দিন খেলতে পারব না। তাই ফিটনেস ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের উপরই বেশি জোর দিই আমি। গত দু’বছরে কোনও দিন সন্ধে ছ’টার পরে ডিনার করিনি।’’

বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থার (ভিসিএ) তৎকালীন প্রধান শশাঙ্ক মনোহরের উৎসাহে ও প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার প্রশান্ত বৈদ্যর উদ্যোগে ২০০৮-এ শুরু হওয়া ভিসিএ ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা ছেলেরাই এখন দেশের সেরা দলের সদস্য। মাইকেল ক্লার্ক, মিচেল স্টার্কদের কোচ নিল ডিকোস্টাকে নিয়ে এসে শুরু হয়েছিল যে অ্যাকাডেমি, তার সুফল শুধু এই চ্যাম্পিয়নরা নন, অনূর্ধ্ব-১৯ কোচবিহার ট্রফির ফাইনালে ওঠা ও অনূর্ধ্ব-২৩ সি কে নায়ডু ট্রফির সেমিফাইনালে বাংলার কাছে হেরে যাওয়া বিদর্ভ দলও পেয়েছে।

বর্তমানে ভিসিএ ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রশান্ত যে প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘অনেক পরিশ্রম ও অবদান রয়েছে এই অ্যাকাডেমির সাফল্যের পিছনে। আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ ও ২৩ দলও দারুণ খেলছে। ফলে প্রতিভার জোয়ার নিয়ে চিন্তা নেই আমাদের।’’ অ্যাকাডেমি শুরু করলেও তাঁদের ভাল শিক্ষক ও অভিভাবক প্রয়োজন ছিল বলে জানান প্রশান্ত। বলেন, ‘‘ডিকোস্টার পরে পরস মামরে, সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, এস বদ্রীনাথের মতো কোচ ও ভিনরাজ্যের ক্রিকেটারেরা আমাদের অনেক এগিয়ে দেয়। কিন্তু আসল লক্ষ্যে পৌঁছে দেয় পণ্ডিত ও জাফর।’’

২০১৭-য় দু’জনে একসঙ্গে যোগ দিয়েই বিদর্ভ ক্রিকেটের মোড় ঘুরিয়ে দেন। ‘‘মুম্বইয়ের ক্রিকেট থেকে এই দুই সোনার কাঠি তুলে এনেই এখানে সোনা ফলিয়েছি আমরা। তাই ওদের আমরা এখন ছাড়ছি না’’, বলে দেন ভিসিএ-র প্রধান ক্রিকেটার-কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন