ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে ২-০ সিরিজ জয় ভারতের

‘ডনের দেশে লড়ার রসদ আছে, দেখালেন বিরাটরা’

প্রথমে রবিবারের নায়কের কথা বলি। উমেশ যাদব। তিন নম্বর ভারতীয় পেসার হিসেবে দেশের মাটিতে ম্যাচে দশ উইকেট নিলেন তিনি। রবিবার চার উইকেট নিয়ে আবার ভাঙলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ভারতের দশ উইকেটের জয়ে তিনিই ম্যাচের সেরা।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:২৯
Share:

সেরা: তিন দিনে শেষ দ্বিতীয় টেস্টও। উমেশ যাদবের বোলিংয়ের সামনে আবার ভেঙে পড়ল ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং। দশ উইকেটে জিতে ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। রবিবার হায়দরাবাদে। ছবি: এএফপি।

দুই টেস্টের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই রকম আত্মসমর্পণ দেখে অনেকেই একটা প্রশ্ন করছেন আমাকে। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট খেলার জন্য এটা কি আদর্শ প্রস্তুতি হল?

Advertisement

এর জবাবে একটা কথা বলতে চাই। মানছি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ অত্যন্ত দুর্বল দল। দ্বিতীয় টেস্টেও ভারতের সামনে কোনও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারল না। তিন দিনে হারল। কিন্তু তাও সিরিজটা দেখে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে গেল। ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে লড়াইয়ের রসদ আছে ভারতের।

কেন বলছি এ কথা? অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিপক্ষের সব চেয়ে বড় সমস্যার কারণ কী? বাউন্স। ইংল্যান্ডে যেমন সুইং, ওখানে সে রকম বাউন্স। আর এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ভারতের খেলা দেখে বোঝা যাচ্ছে, সেই বাউন্সের ফায়দা তোলার মতো ক্রিকেটার বিরাট কোহালির হাতে আছে।

Advertisement

প্রথমে রবিবারের নায়কের কথা বলি। উমেশ যাদব। তিন নম্বর ভারতীয় পেসার হিসেবে দেশের মাটিতে ম্যাচে দশ উইকেট নিলেন তিনি। রবিবার চার উইকেট নিয়ে আবার ভাঙলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ভারতের দশ উইকেটের জয়ে তিনিই ম্যাচের সেরা। গতির সঙ্গে দেখলাম, সুইং-রিভার্স সুইং দুটোই পাচ্ছেন। হায়দরাবাদের এই পাটা উইকেটে এ রকম আগুন ঝরানো বোলিং কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার আগে ভারতের শক্তির ইঙ্গিত দিয়ে রাখল। মাথায় রাখতে হবে, উমেশ দলের প্রথম তিন পেসারের মধ্যে নেই। ইংল্যান্ডে তো বেশ কয়েকটা টেস্টে বসে থাকতে হয়েছিল। এই ফর্মের উমেশকে অবশ্য বাইরে রাখা কঠিন হবে।

হায়দরাবাদের উইকেটের চেয়ে অনেক বেশি বাউন্সসম্পন্ন আর গতিশীল উইকেট থাকবে অস্ট্রেলিয়ায়। যেটা উমেশ, মহম্মদ শামি, যশপ্রীত বুমরাদের অনেক সাহায্য করবে। তা ছাড়া দেশের মাঠে এস জি বল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন উমেশ। অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে হবে কুকাবুরা বলে। ইংল্যান্ডের ডিউক বলের মতো কুকাবুরা অনেকটা সময় ধরে হয়তো মুভ করবে না, কিন্তু এস জি-র চেয়ে শক্ত থাকবে। সিমটাকে কাজে লাগাতে পারবে বোলারেরা। এস জি বলে যখন জীবনের সেরা বোলিং করে গেলেন, তখন অস্ট্রেলিয়ায় নিশ্চয়ই কোনও সমস্যা হবে না উমেশের।

এ বার দলের দুই তরুণ ব্যাটসম্যানের কথায় আসছি। পৃথ্বী শ এবং ঋষভ পন্থ। পৃথ্বী মুম্বইয়ের ব্যাটসম্যান হলেও একটু ব্যতিক্রম। ব্যাকফুটে ভীষণ শক্তিশালী। যে কারণে অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেটে ওর সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আমরা দেখে এসেছি, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানেরা স্বাভাবিক ভাবেই পুল, হুক, কাট— এ সব শটে বেশি পারদর্শী হয়। সে ডন ব্র্যা়ডম্যান থেকে রিকি পন্টিং, সবাই। কারণ ওঁরা সবাই ব্যাকফুটে শক্তিশালী। পৃথ্বীও কিন্তু পুল বা কাট শটে যথেষ্ট দক্ষ। আমি আশাবাদী, পৃথ্বী অস্ট্রেলিয়াতেও রান পাবেন। এই সিরিজের দুটো টেস্ট ওর আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিল। রবিবার হায়দরাবাদে ভারতের জয়সূচক রানটাও এল ওঁর ব্যাট থেকে।

আরও এক তরুণ প্রতিভাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় স্বপ্ন দেখা যায়। ঋষভ। যে রকম ফর্মে আছেন, তাতে ভারত ছ’নম্বরে এক জন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান পেয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বাড়তি এক জন বোলার নিয়ে খেলতে পারবেন কোহালিরা। পাঁচ বোলার হাতে থাকলে এক জনের কোনও সমস্যা হলে সেটা সামলে দেওয়া যায়। যেমন হায়দরাবাদ টেস্টে হল। শার্দূল ঠাকুর চোট পেয়ে উঠে গেলেও সেটা বড় সমস্যা হল না।

ঋষভকে নিয়ে একটা অদ্ভুত পরিসংখ্যান দেখলাম। প্রথম টেস্টেও ৯২ রানে আউট হয়েছিলেন, এই টেস্টেও তা-ই। মনে হচ্ছে, নার্ভাস নাইনটির শিকার হয়ে পড়ছেন। অনেকেই এর শিকার। কিন্তু তিন জনের কথা মনে পড়ছে, যাঁরা কোনও দিন টেস্টে নার্ভাস নাইনটির শিকার হননি। যেমন ২৯ সেঞ্চুরি করা ডন ব্র্যাডম্যান, ২৪ সেঞ্চুরি করা গ্রেগ চ্যাপেল এবং ১৮টি সেঞ্চুরির মালিক মাইকেল ভন। আশা করব, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এই নার্ভাস নাইনটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন পন্থ।

স্কোরকার্ড
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩১১ ও ১২৭
ভারত ৩৬৭ ও ৭৫-০

ভারত(৩০৮-৪ এর পর থেকে প্রথম ইনিংস)

অজিঙ্ক রাহানে ক হোপ বো হোল্ডার ৮০
ঋষভ পন্থ ক হেটমায়ার বো গ্যাব্রিয়েল ৯২
জাডেজা এলবিডব্লিউ বো হোল্ডার ০
আর অশ্বিন বো গ্যাব্রিয়েল ৩৫
কুলদীপ যাদব বো হোল্ডার ৬
উমেশ ক হ্যামিল্টন বো ওয়ারিক্যান ২
শার্দূল ন. আ. ৪
অতিরিক্ত ১৯
মোট ৩৬৭
পতন: ১-৬১ (রাহুল, ৮.৪), ২-৯৮ (পৃথ্বী, ১৮.৪), ৩-১০২ (পূজারা, ১৯.৬), ৪-১৬২ (কোহালি, ৪২.৫), ৫-৩১৪ (রাহানে, ৮৩.১), ৬-৩১৪ (জাডেজা, ৮৩.৩), ৭-৩২২ (পন্থ, ৮৬.৩), ৮-৩৩৪ (কুলদীপ, ৯৪.৪), ৯-৩৩৯ (উমেশ, ৯৯.২), ১০-৩৬৭ (অশ্বিন, ১০৬.৪)।
বোলিং: শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ২০.৪-১-১০৭-৩, জেসন হোল্ডার ২৩-৫-৫৬-৫, জোমেল ওয়ারিক্যান ৩১-৭-৮৪-২, রস্টন চেজ ৯-১-২২-০, দেবেন্দ্র বিশু ২১-৪-৭৮-০, ক্রেগ ব্রাথওয়েট ২-০-৬-০।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ (দ্বিতীয় ইনিংস)
ব্রাথওয়েট ক ঋষভ বো উমেশ ০
পাওয়েল ক রাহানে বো অশ্বিন ০
শাই হোপ ক রাহানে বো জাডেজা ২৮
হেটমায়ার ক পূজারা বো কুলদীপ ১৭
অ্যামব্রিস এলবিডব্লিউ বো জাডেজা ৩৮
রস্টন চেজ বো উমেশ ৬
শেন ডাউরিচ বো উমেশ ০
জেসন হোল্ডার ক ঋষভ বো জাডেজা ১৯
দেবেন্দ্র বিশু ন. আ. ১০
জোমেল ওয়ারিক্যান বো অশ্বিন ৭
শ্যানন গ্যাব্রিয়েল বো উমেশ ১
অতিরিক্ত ১
মোট ১২৭
পতন: ১-০ (ব্রাথওয়েট, ০.২), ২-৬ (পাওয়েল, ৩.৩), ৩-৪৫ (হেটমায়ার, ১২.৬), ৪-৪৫ (হোপ, ১৩.৪), ৫-৬৮ (চেজ, ২৪.৬), ৬-৭০ (ডাউরিচ, ২৬.১), ৭-১০৮ (হোল্ডার, ৩৬.৬), ৮-১০৯ (অ্যামব্রিস, ৩৮.৫), ৯-১২৬ (ওয়ারিক্যান, ৪৫.২), ১০-১২৭ (গ্যাব্রিয়েল, ৪৬.১)।
বোলিং: উমেশ যাদব ১২.১-৩-৪৫-৪, আর অশ্বিন ১০-৪-২৪-২, কুলদীপ যাদব ১৩-১-৪৫-১, রবীন্দ্র জাডেজা ১১-৫-১২-৩।

ভারত (দ্বিতীয় ইনিংস)
পৃথ্বী শ ন. আ. ৩৩
কে এল রাহুল ন. আ. ৩৩
অতিরিক্ত ৯
মোট ৭৫-০
বোলিং: জেসন হোল্ডার ৪-০-১৭-০, জোমেল ওয়ারিক্যান ৪-০-১৭-০, দেবেন্দ্র বিশু ৪.১-০-১৯-০, রস্টন চেজ ৪-০-১৪-০।

১০ উইকেটে জয়ী ভারত

ম্যাচের সেরা উমেশ যাদব

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন