নায়ক: ওয়ান ডে-তে ৩৪ নম্বর সেঞ্চুরি করে বিরাট কোহালি। বুধবার নিউল্যান্ডসে। ভারত জয়ী ১২৪ রানে। ছবি: রয়টার্স
কোনও দিন যদি রোবটদের ক্রিকেট ম্যাচ হয়, তা হলে হয়তো বিরাট কোহালিকে কেউ টপকে যেতে পারে। কিন্তু মানুষ যত দিন খেলবে, শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসন তত দিন বিরাটেরই প্রাপ্য!
বুধবারের কেপ টাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তৃতীয় ওয়ান ডে-তে বিরাটের ৩৪তম ওয়ান ডে সেঞ্চুরি দেখার পরে একটা কথা আমি বলে দিতে চাই। আমার কাছে ওয়ান ডে ক্রিকেটের ইতিহাসে বিরাট কোহালিই হল সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান। এবং শ্রেষ্ঠত্বের দৌড়ে বাকিদের থেকে ও অনেকটাই এগিয়ে থাকবে।
আমি জানি, এই বক্তব্য নিয়ে হয়তো কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে সচিন তেন্ডুলকর, ভিভিয়ান রিচার্ডসের নাম উঠে আসতে পারে। উঠতে পারে রিকি পন্টিং, ব্রায়ান লারার নামও। কিন্তু ক্রিকেটের এ সব কিংবদন্তিদের কথা মাথায় রেখেও সর্বকালের মাপকাঠিতে আমি বিরাটকে এক নম্বরেই রাখব।
কেন বলছি এ কথা? দু’টো কারণে। এক, ধারাবাহিকতা। দুই, ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা। সচিন বা ভিভ— কারও মধ্যেই এ রকম ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা ছিল না। ধারাবাহিকতাও নয়। ভিভ যখন আমাদের সময় খেলত, তখন ওকে মাঠে নামতে দেখে ভয় লাগত ঠিকই, কিন্তু বিরাটের মতো এ রকম ভয়ঙ্কর আধিপত্য আমি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তিকে দেখাতে দেখিনি। ভিভকে আউট করার সুযোগ তাও পাওয়া যেত। এখনকার বিরাটকে দেখে মনে হয়, ও আউটই হবে না। সেঞ্চুরি করে তবে মাঠ ছাড়বে। এতটাই আত্মবিশ্বাস ওর হাঁটা-চলার মধ্যে ঠিকরে বেরোয়।
সচিনের পরিসংখ্যানে ওর নামের পাশে ৪৯টা সেঞ্চুরি আছে ঠিকই, কিন্তু সেটা ৪৬৩টা ম্যাচ খেলে। বিরাটের ইতিমধ্যেই ৩৪টা সেঞ্চুরি হয়ে গেল। খেলেছে মাত্র ২০৫ ম্যাচ। সচিনের ওয়ান ডে সেঞ্চুরির সংখ্যা আর কয়েক বছরের মধ্যেই টপকে যাবে বিরাট। কিন্তু নিছক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে আমি সচিনের থেকে বিরাটকে এগিয়ে রাখছি না। ভারতকে বিরাট যত ম্যাচ জিতিয়েছে, সচিন তত জেতায়নি। বিশেষ করে রান তাড়া করতে নেমে বিরাটের ব্যাটিং তো প্রায় রূপকথার পর্যায়ে চলে গিয়েছে। কত কঠিন পরিস্থিতি থেকে ও ভারতকে জিতিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। যতই কঠিন পরিস্থিতি হোক না কেন, বিরাট উইকেটে থাকা মানে জেতার স্বপ্ন বেঁচে থাকা। সাময়িক কালের ভারতীয় ক্রিকেটের এটাই তো থিম সং। এ জন্যই ও সবার থেকে এগিয়ে।
টেকনিক্যাল দক্ষতা, মানসিক কাঠিন্য, অবিশ্বাস্য ফিটনেস— এ সবের মিশেলই বিরাট কোহালি। কেপ টাউনে খরা চলছে, এখানে ৫০ ওভার ব্যাট করা (বিরাট নামল দ্বিতীয় ওভারে) রীতিমতো কঠিন কাজ। কোহালি শুধু ১৫৯ বল আর ২২০ মিনিট মাঠেই থাকল না, অবিশ্বাস্য দক্ষতায় খুচরো রান নিল। ওর ১৬০ রানের ইনিংসে ১২টা বাউন্ডারি এবং দু’টো ওভার বাউন্ডারি রয়েছে। মানে ৬০ রান এসেছে বড় স্ট্রোকে, বাকি একশো রান দৌড়ে নিয়েছে ও। অসাধারণ ফিটনেস না থাকলে দিনের পর দিন এ রকম ইনিংস খেলে যাওয়া সম্ভব নয়।
টেকনিক্যাল দক্ষতায় ও বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এ দিন ৫০তম ওভারের পাঁচ এবং ছয় নম্বর বলে রাবাডাকে একটা ছয় আর একটা চার মারল বিরাট। ওই দু’টো শটেই ওর প্রতিভা বোঝা যায়। একটা অফস্টাম্পের ওপর ব্যাক অব লেংথ বল ছিল। বিরাট শরীরটা স্প্রিংয়ের মতো ঘুরিয়ে বটম হ্যান্ডের সাহায্যে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছয়টা মারল। বিরাট অন সাইডে এতটাই শক্তিশালী, যে যত জন ফিল্ডারই থাকুক না কেন, ও ঠিক গ্যাপ খুঁজে নেবে। শেষ বলটা প্রায় ইয়র্কার লেংথের হলেও মিডঅফ দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠাতে সমস্যা হয়নি।
অনেক ব্যাটসম্যান খেলে হ্যান্ড-আই কোঅর্ডিনেশনের ওপর নির্ভর করে। বিরাটের হ্যান্ড-আই স্পিড যতটা ভাল, ততটাই ওর টেকনিক্যাল দক্ষতা। তাই ধারাবাহিক ভাবে রান করতে সমস্যা হয় না।
এর পরেও বিরাট কোহালিকে সর্বকালের সেরা ওয়ান ডে ব্যাটসম্যান বলব না তো কাকে বলব?