সোনাজয়ী সূর্যকে অভিনব অভিনন্দন আনন্দের

শেষ বার ২০১০ সালে এই একই প্রতিযোগিতা থেকে সোনা জিতেছিলেন বাংলার দাবাড়ু। ভারত জিতেছিল ব্রোঞ্জ। তিনি আবার একই কৃতিত্ব দেখালেও একটুর জন্য দলগত পদক ফস্কে যাওয়ার আফসোস যাচ্ছে না সূর্যর। 

Advertisement

শমীক সরকার

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০৪:৫৪
Share:

সফল: কাজাখস্তানে সোনার পদক নিয়ে উচ্ছ্বসিত সূর্য। টুইটার

প্রায় দশ বছর পরে বিশ্ব দলগত দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ফের সোনা জিতে ফিরলেন সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়। কাজাখস্তানে হওয়া এই প্রতিযোগিতায় একটুর জন্য ভারত দলগত ভাবে পদক জিততে পারেনি। কিন্তু সূর্য এবং আধিবান ভাস্করন দুটি বোর্ডে সেরা দাবাড়ুর পুরস্কার জিতে নেন। শেষ বার ২০১০ সালে এই একই প্রতিযোগিতা থেকে সোনা জিতেছিলেন বাংলার দাবাড়ু। ভারত জিতেছিল ব্রোঞ্জ। তিনি আবার একই কৃতিত্ব দেখালেও একটুর জন্য দলগত পদক ফস্কে যাওয়ার আফসোস যাচ্ছে না সূর্যর।

Advertisement

‘‘আমরা গোটা প্রতিযোগিতাতেই অপরাজিত ছিলাম। শেষ রাউন্ডে আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল রাশিয়া (প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন দল)। পদক জিততে গেলে আমাদের রাশিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত ড্র করতেই হত। ১, ২ ও ৪ নম্বর বোর্ডে ড্র হওয়ার পরে ৩ নম্বর বোর্ডে শুধু এস পি সেতুরামনকে আটকে দিতে হত আলেকজান্ডার গ্রিসচুককে। কিন্তু সেতু হারে। রাশিয়াও আমাদের হারিয়ে দেয় ২.৫-১.৫ পয়েন্টে।’’ মস্কো থেকে কলকাতায় ফিরেই আনন্দবাজারকে বলছিলেন সূর্য। তবে, দলগত পদক না পেলেও যে ভাবে তাঁরা লড়াই করেছেন, তাতে খুব খুশি ছত্রিশের দাবাড়ু।

‘‘দাবা অলিম্পিয়াড থেকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় ওয়ার্ল্ড টিম চ্যাম্পিয়নশিপে। বলা যায় দাবা অলিম্পিয়াডের পরের ধাপ এই প্রতিযোগিতা। আমরা ওয়াইল্ড কার্ড পেয়ে নেমেছিলাম। তাই এত দ্রুত সব কিছু ঠিক হয়েছে যে দেশের সেরা তিন দাবাড়ু বিশ্বনাথন আনন্দ (বিশ্বের ৭ নম্বর), পেন্টালা হরিকৃষ্ণ (২৬) এবং বিদিত গুজরাতিকে (৩৪) ছাড়াই খেলতে হয়েছে আমাদের। তার পরেও আমরা যে ভাবে চতুর্থ স্থানে শেষ করেছি সেটা কম কৃতিত্বের নয়,’’ বলেন সূর্য। ভারতীয় দলে ছিলেন বিশ্বের ৫২ নম্বর বি আধিবান, কৃষ্ণন শশীকিরণ (৬৭), এস পি সেতুরামন (১০২), সূর্য (১৩০) ও অরবিন্দ চিদাম্বরম (২৪০)।

Advertisement

আনন্দের দীর্ঘ দিনের সহকারী সূর্যকে (এলো রেটিং ২৬৩৩) তাঁর চেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে এই প্রতিযোগিতায়। তার পরেও অপরাজিত ভাবে শেষ করেন তিনি। মোট ৯টি রাউন্ডের মধ্যে পাঁচটি জয় এবং চারটি ড্র করার পথে সূর্য হারান চিনের গ্র্যান্ডমাস্টার ইউ ইয়ানগেইকেও (২,৭৬১)। এ ছাড়া ড্র করেন ইংল্যান্ডের ডেভিড হাওয়েল (২,৬৯৩) ও রাশিয়ার ইয়ান নেপোমেনিয়াচির (২,৭৭১) বিরুদ্ধে। সূর্য বলছিলেন, ‘‘শেষ রাউন্ডে খেলতে গিয়ে যদি আমি হেরে যেতাম তা হলে ব্যক্তিগত সোনা হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি ছিল। কিন্তু আমি ঠিক করে নেমেছিলাম, সোনা যায় যাক, দলকে জেতাতেই হবে। তার জন্য অলআউট খেলেছি আমার চেয়ে এলো রেটিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা নেপোমেনিয়াচির বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত সেই ম্যাচ ড্র হয়।’’

সূর্যর দুরন্ত পারফরম্যান্স দেখে বিশ্বনাথন আনন্দও মুগ্ধ। টিম চ্যাম্পিয়নশিপের আগে ফিলিপিন্সে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে চিনের অন্যতম সেরা দাবাড়ু ওয়াং হাওকে হারিয়েছিলেন সূর্য। আস্তানায় ফের চিনের আর এক সেরা দাবাড়ুকে হারানোর পরে আনন্দ অভিনন্দন জানিয়ে সূর্যকে বলেন, ‘‘তুমি তো দেখছি ‘চাইনিজ কিলার’ হয়ে উঠেছ।’’

সূর্যর সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে আধিবান, সেতু, অরবিন্দের মতো তরুণ দাবাড়ুদের নিয়ে গড়া দল নিয়েও যে ভাবে পাল্লা দিয়ে লড়েছেন তাঁরা,। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ‘টিম স্পিরিট’ দুর্দান্ত ছিল। জাতীয় ফেডারেশনকেও ধন্যবাদ মস্কো থেকে আমাদের আর দেশে ফিরতে হয়নি। সরাসরি কাজাখস্তান পৌঁছে গিয়েছিলাম। ওখানেই একটা ছোট প্রস্ততি শিবির হয়েছিল। এতটাই ভাল ছিল আমাদের টিম স্পিরিট যে কেউ যে কোনও বোর্ডে খেলতে রাজি ছিল। ক্রিকেটের ভাষায়, যে কোনও খেলোয়াড় যে কোনও ব্যাটিং পজিশনে নামতে রাজি থাকার মতো।’’

ভারতীয় দাবা মহলের আশা এই ছন্দ ২৭০০ এলো রেটিংয়ের দিকে নিয়ে যাবে তাঁকে। তার চেয়েও বড় কথা, সামনেই কঠিন আরও একটি প্রতিযোগিতা রয়েছে সূর্যর। বুন্দেশলিগা দাবায়। যেখানে বিশ্বনাথন আনন্দের দলের সঙ্গে টক্কর সূর্যর দলের। তবে যতই ‘গুরু’র দলের সঙ্গে লড়াই হোক। সূর্য এখন আর চাপ অনুভব করেন না। ‘‘কয়েক মাস হল চেন্নাইয়ের গ্র্যান্ডমাস্টার বিষ্ণু প্রসন্ন কোচিং করাচ্ছেন আমাকে। ভয়ডরহীন ভাবে খেলাটা ওঁর কাছ থেকেই শিখেছি। এটাই আমার মন্ত্র এখন,’’ বলে দেন কাজাখস্তান থেকে ফেরা সদ্য সোনাজয়ী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন