বড়জোর ঘণ্টায় ১২৫ থেকে ১৩০ কিলোমিটার এই গতির মিডিয়াম পেস দেখে দেখে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম, তখন মিচেল জনসনের বোলিং যেন মরুভূমিতে জলের সন্ধান দেওয়ার মতো। জনসনের বলের গতির এই দুনিয়া জোড়া খ্যাতিটা কিন্তু আদতে ক্রিকেটেরই উপকার করছে। বাচ্চারা এখন ওর মতো ফাস্ট বোলার হতে চাইছে। এর চেয়ে ভাল খবর আর কী হতে পারে?
আগামী বিশ্বকাপে এই পেস বোলিং কিন্তু বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে। যেমন হয়েছিল ১৯৯২-এ। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ১৫-২০ ওভারের পর আর সুইং করানো যায় না। তখন যার বলে অতিরিক্ত গতি থাকে, সে-ই লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারে। ওখানকার পিচে এতটাই সমান বাউন্স, যাতে ব্যাটসম্যানরাও ভরসা করতে পারে। তাই বোলিংয়ে বৈচিত্র আনতে গেলে বলের অতিরিক্ত গতির প্রয়োজন হবে বইকী।
সে দিক থেকে দেখতে গেলে, ভারতে কিন্তু পর্যাপ্ত উপাদান রয়েছে। ১৪০-এর বেশি গতির বল করার মতো এক ঝাঁক বোলার রয়েছে এ দেশে। যেমন উমেশ যাদব। তাই চলতি সিরিজে উমেশের দিকে নজর রাখা দরকার। এ বার আইপিএলে ওর সঙ্গে কাজ করেছি। যেখানে ইয়র্কারের গুরুত্ব বুঝিয়েছি ওকে। ছেলেটা ফিট। বলে গতিও আছে। সবচেয়ে বড় কথা ও প্রচুর খাটতে চায়। টানা অনেক ক্ষণ বল করার ক্ষমতা রাখে। পেস বোলারের সব গুণই ওর মধ্যে আছে।
তা ছাড়া এটাই তো ওর শেখার বয়স। তাই উমেশকে ইয়র্কারের পাঠটা ভাল করে দিয়েছি। এই ধরণের বোলিংয়ে ওকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলাটাই ছিল আমার আসল কাজ। এক জন জোরে বোলারের পক্ষে বাউন্সার দেওয়াটা তেমন কঠিন নয়। কিন্তু ইয়র্কার দিতে গেলে যথেষ্ট গতির প্রয়োজন। যা উমেশের আছে। ভাল আউটসুইঙ্গারও দিতে পারে ছেলেটা। যার ফলে ও ভারতীয় দলের এক জন কার্যকর বোলার হয়ে উঠতে পারে। আইপিএলে ধারাবাহিকভাবে উইকেট পেয়েছে ও। অস্ট্রেলিয়ায় ‘এ’ দলের সফরেও প্রচুর উইকেট নিয়েছে। তা সত্ত্বেও ওকে কেন টেস্ট দলে নেওয়া হল না, তার ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি।
শুধু উমেশ কেন, বরুণ, শামিরাও ১৪০-এর উপর গতিতে বল করতে পারে। কিন্তু ওদের মেন্টরদের নিয়েই আমি চিন্তিত। দক্ষিণ এশিয়ার ছেলেদের মূল সমস্যাটা হল, আমরা এত ঘরোয়া পরিবেশ থেকে উঠে আসি যে, বড় জায়গায় সাফল্য, ব্যর্থতা সামলানোর মানসিকতা থাকে না। এ জন্যই একজন কার্যকর মেন্টর নিয়োগ করা উচিত বিসিসিআই-এর। যে অন্তত ওদের শিখিয়ে দিতে পারবে, কোন পরিস্থিতিতে কী ভাবে বল করতে হয়।
মহম্মদ শামিকেই দেখুন। কোথায় ইংল্যান্ডের এই পরিবেশ উপভোগ করবে ও, তা নয়, ওকে রীতিমতো লড়তে হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় ওর বলের গতি এখন অনেক কমে গিয়েছে। বরুণের বলের ধার আছে। কিন্তু বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানদের ওভার দ্য উইকেট বল করা শিখতে হবে ওকে। রাউন্ড দ্য উইকেট বল করে ও মইনকে আউট করেছে বটে, কিন্তু পাটা উইকেটে তা সব সময় সম্ভব না। বরুণকে আরও ভাল আউটসুইঙ্গার দিতে শেখানো উচিত ভারতীয় দলের বোলিং কোচের। কাজটা খুব একটা কঠিন হবে না বোধহয়। এদের সবারই গতি ও সম্ভাবনা আছে। কিন্তু কত দিন ওরা টিকে থাকতে পারবে, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। তাই বিশ্বকাপের আগে পেসারদের জন্য একজন ভাল মেন্টর আনা উচিত বোর্ডের।