সেরা: কোহালিকে আইসিসি-স্মারক তুলে দিচ্ছেন গাওস্কর ও পোলক। ছবি: টুইটার।
সরকারি ভাবে আবার টেস্ট ক্রিকেটের এক নম্বরের সিংহাসনে ভারত। শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের শেষ ম্যাচের পরে আইসিসি-র তরফে টানা দ্বিতীয় বার এক নম্বরের স্মারক তুলে দেওয়া হল ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালির হাতে। কিন্তু এতেও ভারত অধিনায়ক সন্তুষ্ট নন। তিনি নিজের সামনে আরও উঁচু লক্ষ্য স্থির করছেন।
সুনীল গাওস্কর এবং গ্রেম পোলকের হাত থেকে আইসিসি স্মারক নিয়ে কোহালি বলেছেন, ‘‘আমি এখনও বলব, আমরা আমাদের ক্ষমতার আশি শতাংশ কাজে লাগাতে পারছি।’’ কোহালি মেনে নিচ্ছেন, সামনে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া সফর কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। কিন্তু পাশাপাশি তিনি এও বলছেন, ‘‘আমরা যেটা চাইছি, সেটা যখন ওই দু’টো সফরে করে দেখাতে পারব, তখনই তৃপ্তির ভাবনাটা আসবে। পাশাপাশি এটাও বলব, আমাদের আশি শতাংশ খেলাটাও কিন্তু কম উত্তেজক কিছু নয়। এটাও বলব, বিশ্বসেরা দল হতে গেলে আমাদের দক্ষতার একশো শতাংশ মাঠে দেখাতে হবে।’’
এমনিতে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের বদল হওয়ার সময়সীমা এপ্রিল মাস হলেও এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে ভারতকে টপকে যাওয়ার মতো কোনও দল নেই। এক নম্বর দল হওয়ার জন্য ভারত পাচ্ছে এক মিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ছ’কোটি ৪৭ লক্ষ ১০ হাজার পাঁচশো)। পুরস্কার নেওয়ার পরে আইসিসি ওয়েবসাইটকে কোহালি বলেছেন, ‘‘আরও একবার আইসিসি-র শ্রেষ্ঠ শিরোপা হাতে পেয়ে দারুণ লাগছে। ক্রিকেটের সেরা ফর্ম্যাটে আমাদের পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি এই পুরস্কার।’’
একই সঙ্গে ভারতীয় সমর্থকদেরও আলাদা করে ধন্যবাদ দিয়েছেন কোহালি। এক ভিডিও বার্তায় কোহালি বলেছেন, ‘‘এই নিয়ে পর পর দু’বার আমরা আইসিসি-র এক নম্বর টেস্ট দল হলাম। এক নম্বর দল হওয়াটা আমাদের কাছে ভীষণ গর্বের একটা ব্যাপার। এটা দলের ক্রিকেটার এবং সাপোর্ট স্টাফ— সবার কাছে একটা দারুণ অনুভূতি। এ ছাড়া আমি বিশ্ব জুড়ে যত ভারতীয় সমর্থক আছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই। ওদের জন্যই এটা সম্ভব হল। যেখানেই আমরা খেলি না কেন, ক্রিকেট ভক্তরা বিশাল সংখ্যায় মাঠে হাজির হয়ে আমাদের প্রেরণা জোগায়। কঠিন সময়ও ওরা আমাদের পাশে থাকে।’’ এর পরে সমর্থকদের একটা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন বিরাট। বলছেন, ‘‘আমরা যেখানেই খেলি না কেন, চেষ্টা করব আপনাদের সবাইকে একই ভাবে আনন্দ দিয়ে যেতে। আর যত বেশি দিন সম্ভব ভারতীয় ক্রিকেটের মানকে উঁচুতে তুলে ধরতে। এর পরে ১২ থেকে ১৮ মাস আমাদের খুব কঠিন সব সফর আছে। আমরা আশা করছি, সেখানেও আমাদের পাশে থাকবেন সবাই। আপনাদের সবাইকে মাঠে দেখতে চাই।’’
দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শুরু হওয়ার আগে ভারতকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। প্রথম দু’টো টেস্টে কোহালিদের হারের পরে যে প্রশ্নের মাত্রা বাড়তে থাকে। কিন্তু জোহানেসবার্গের তৃতীয় টেস্টের পর থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা শুরু। তৃতীয় টেস্টের পরে ওয়ান ডে সিরিজ। তার পরে টি-টোয়েন্টি। ভারতকে যেখানে অপ্রতিরোধ্য দেখিয়েছে। এই অবস্থায় ভারতীয় টিম নিয়ে মত বদলেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটারেরাও। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন অধিনায়ক গ্রেম স্মিথ টুইট করেছেন, ‘এই সফরে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে ভারত। ওদের ওই খেলা অনেক দক্ষিণ আফ্রিকানেরই মন জয় করে নিয়েছে। অভিনন্দন ভারতীয় ক্রিকেট দল এবং বিরাট কোহালিকে।’
রবিবারই সফর শেষে ভারতীয় দল কেপ টাউন ছেড়ে ভারত পাড়ি দিল। বিমানে নিজের ছবি দিয়ে যশপ্রীত বুমরা-র টুইট, ‘একটা দীর্ঘ, দারুণ সফর শেষ করে অবশেষে বাড়ি ফিরছি। আমার পরিবারকে ধন্যবাদ, যারা সব সময় আমার পাশে ছিল।’
শনিবার ম্যাচ শেষে ট্রফির সঙ্গে টিমের ছবি দিয়ে ভারতের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী টুইট করেন, ‘ইস্পাত কঠিন মানসিকতা দেখিয়েছ তোমরা। তোমাদের জন্য গর্ব হচ্ছে। যে কোনও দেশের হয়ে সেরা দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। এ বার উপভোগ করো।’
এর আগে কোনও দিন দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে কোনও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জিতে ফিরতে পারেনি ভারত। এ বারই প্রথম সিরিজ জিতে ফিরছে। তাও আবার জোড়া সিরিজ। ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি। শনিবার শেষ টি-টোয়েন্টি হারার সঙ্গে সঙ্গে সিরিজটাও হেরে বসে দক্ষিণ আফ্রিকা। যার পরে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক জে পি ডুমিনি বলেছেন, ‘‘পাওয়ার প্লে-তে ভারতীয় বোলাররা খুব ভাল বল করল। আমরা প্রথম ছ’ওভারে রানই তুলতে পারিনি সে ভাবে। বাউন্ডারি পাচ্ছিলাম না আর ওটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল। না হলে ১৭০-১৭৫ রান তাড়া করাটা কঠিন ছিল না।’’