‘৫০ বছর পরেও রাফা যুগ মনে থাকবে’

রাফায়েল নাদালের সৌজন্যে গোটা বিশ্ব এখন এই শব্দটার সঙ্গে পরিচিত হল। অর্থাৎ একাদশ। নাদাল যে ১১ নম্বর ফরাসি ওপেন ট্রফি জিতছেন, তার পূর্বাভাস আগেই ছিল।

Advertisement

বরিস বেকার

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৮ ০৪:১২
Share:

উনদেসিমা।

Advertisement

রাফায়েল নাদালের সৌজন্যে গোটা বিশ্ব এখন এই শব্দটার সঙ্গে পরিচিত হল। অর্থাৎ একাদশ। নাদাল যে ১১ নম্বর ফরাসি ওপেন ট্রফি জিতছেন, তার পূর্বাভাস আগেই ছিল। গত বারের চ্যাম্পিয়ন কী সাবলীল গতিতে, কত সহজেই না ফরাসি ওপেনে এ বার শেষ করলেন। তবে ফাইনাল দেখে আমি কিছুটা হতাশ হয়েছি। নাদালের মতো বড় খেলোয়া়ড়কে আর একটু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে ভেবেছিলাম। কয়েক সপ্তাহ আগেই নাদালের ফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বী দোমিনিক থিম ওকে হারিয়েছিলেন, এটা মাথায় রেখে পাঁচ সেট না হোক অন্তত চার সেটের লড়াইয়ের আশা ছিল।

ফাইনালটা শুরুও হল দুরন্ত লড়াইয়ের আশা তৈরি করে। থিম পাল্লা দিয়ে যাচ্ছিলেন নাদালের। স্ট্রোকের পর স্ট্রোকে। এর পরই নাদাল কয়েকটা ব্রেকপয়েন্ট পেয়ে গেলেন। ব্যাস, তার পরে বোঝাই যাচ্ছিল, থিম স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নকে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। নাদাল তখন বাড়িয়েই যাচ্ছিলেন গতি। থিমকে যখনই নাদালের সার্ভিস ভাঙার কাছাকাছি মনে হচ্ছিল, রাফা ওর দক্ষতাটা এক পর্দা বাড়িয়ে বিপদ এড়াচ্ছিল। এ জন্যই নাদালের এই জয়টা এত দুরন্ত— নিখুঁত, অনায়াস। থিম প্রতিপক্ষের সেরাটা বের করে আনলেন। এ ছাড়া গোটা প্রতিযোগিতায় নাদালকে কখনই সে রকম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে দেখা যায়নি। তার মানে শেষ ছ’টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম নাদাল এবং রজার ফেডেরারের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হয়ে গেল। যাঁদের বয়স যথাক্রমে ৩২ এবং ৩৬ বছর। টেনিসের পরবর্তী প্রজন্ম কোথায়? কেন তাঁরা বড় মাপের প্রতিযোগিতা জিততে পারছেন না?

Advertisement

এর উত্তর দুটো অংশে বিভক্ত। প্রথমাংশটা হল, আমরা সর্বকালের সেরা দুই খেলোয়াড় না হলেও টেনিসের অন্যতম সেরা দুই খেলোয়াড়কে দেখছি এখন। যাঁরা দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন। পঞ্চাশ বছর পরেও আমরা এই যুগটার কথা বলব। বলব আমরা নাদালকে ১১টা ফরাসি ওপেন জিততে দেখেছি, ফেডেরারকেও একই সময়ে দেখেছি ২০টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম হাতে তুলতে। ব্যতিক্রমী, একেবারে আলাদা গোত্রের এই দুই খেলোয়াড় যে নজির তৈরি করেছেন, সেটা অদূর ভবিষ্যতে ভাঙার কোনও সম্ভাবনা দেখছি না। আমরা সবাই মানে, সমর্থক, টেনিস বিশেষজ্ঞ এবং তাঁদের সমসাময়িক খেলোয়াড়দের এই দাপট, এই যুগ এত কাছ থেকে দেখে আপ্লুত হওয়া উচিত। দু’জন খেলোয়াড় প্রায় ১৫ বছর ধরে রাজত্ব করছেন। এটা সত্যিই অসাধারণ একটা ব্যাপার।

দ্বিতীয় অংশটা হল, অনেকের মতো আমিও বর্তমান প্রজন্ম মানে থিম, আলেকজান্ডার স্ফেরেফ, নিক কিরিয়সরা সে ভাবে এই দু’জনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পেরেছেন বলে মনে করি না। থিমের বয়স ২৪ বছর। অন্যদের বয়সও প্রায় ওঁর কাছাকাছি। ওঁদের প্রমাণ করতে হবে এখন ওঁদেরই সময়। দেখাতে হবে, ওঁদের প্রজন্ম দুই গ্রেট খেলোয়াড়ের হাত থেকে সঙ্গে নোভাক জোকোভিচ এবং অ্যান্ডি মারের থেকেও ব্যাটন নিতে তৈরি। এতে কিন্তু নাদালের কৃতিত্ব কোনও অংশে কমছে না। ওঁর দক্ষতা এবং নম্রতা ব্যতিক্রমী। খেলাটার প্রতি কী দায়বদ্ধতা ওঁর। অবাক হচ্ছিলাম ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে নাদালের মুখে রলঁ গারোসের পরে ওর জীবনের কথা শুনে। বলছিলেন, এমন একটা সময়ের কথা ওঁ ভাবে, যখন রলঁ গারোসে আর চ্যাম্পিয়নের নাম নাদাল নয়। আমাদের পক্ষে এমন দৃশ্য কল্পনা করা কঠিন!

মেয়েদের সিঙ্গলসে ছবিটা আবার একেবারে আলাদা। সিমোনা হালেপ প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন যোগ্য খেলোয়াড় হিসেবেই। ওঁর ফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বী স্লোয়ান স্টিফেন্সও দারুণ খেলেছেন গোটা প্রতিযোগিতায়। স্লোয়ানের বয়স কম, ইতিমধ্যেই গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে ফেলেছেন। ভবিষ্যতে আরও গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারেন। একই কথা বলা যায় সিমোনার ক্ষেত্রেও। যাক অন্তত মেয়েদের টেনিসে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চলে এসেছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন