লিয়েন্ডারের সেই র্যাকেট কিনলেন মনোজ। তুলে দিচ্ছেন সঞ্জয় সেন। মাঝে বাগান সমর্থক বাপি মাঝি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
সাধারণত দেখা যায় সমর্থকরা এগিয়ে আসছেন তারকাদের জন্য। মর্মস্পর্শী শনি-সন্ধেয় দেখা গেল উল্টোটা-ই!
১৯৮০-র ১৬ অগস্ট, তারও আগে ১৯৬৯-এ ইডেনে বিল লরির অস্ট্রেলিয়া সিরিজে গণ্ডগোলে মারা যাওয়া ফুটবল কিংবা ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের কেউ মনে রাখেনি। ১৯৭৫ শিল্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের কাছে পাঁচ গোল খাওয়ার দুঃখে আত্মহত্যা করা মোহনবাগান সমর্থককেও তো কেউ মনে রাখেনি এত দিন।
সেই সব দুঃখের স্মৃতির পাশে উঠে এল মর্মস্পর্শী শনি-সন্ধে। যখন দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মোহনবাগান সমর্থক বাপি মাঝি আর মারণ রোগে প্রয়াত ইস্টবেঙ্গল সমর্থক অলিপ চক্রবর্তীর পরিবারের জন্য হাজির গোটা ময়দান। মধ্য কলকাতার এক হোটেলে। প্রাক্তন ও বর্তমান খেলোয়াড়, কর্তাদের, যাঁদের অনেকেই আবার স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কিংবদন্তি, তাঁদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম নিলামে তুলে ইস্ট-মোহনের দুই সমর্থককে সাহায্য করার মহৎ উদ্যোগে।
নিলামে যেমন ছিলেন ক্রিকেট, ফুটবলের প্রাক্তন, বর্তমান খেলোয়াড়, কোচ ও কর্তারা, তেমনই আবার সশরীরে না থেকেও ছিলেন পেলে থেকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, লিয়েন্ডার পেজ-ও। ধোনি এই উদ্যোগের কথা শুনেই তাঁর উইকেট কিপিং গ্লাভস, কিপিং প্যাড নিলামের জন্য পাঠিয়ে দেন কুরিয়ার করে। লিয়েন্ডার দিয়ে দেন তাঁর ২০১৫ উইম্বলডন মিক্সড ডাবলস জেতা র্যাকেট।
গৌতম ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় নিলামেও কত মনে রাখার মতো ফ্রেমই না তৈরি হল! লিয়েন্ডারের র্যাকেট দেড় লাখ টাকায় কিনে বাংলার ক্যাপ্টেন মনোজ তিওয়ারি যখন বললেন, ‘‘লিয়েন্ডার বরাবর আমায় অনুপ্রেরণা দেন।’’ বা আইসিসির প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ব্যবহার করা প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়ার টাই আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় কিনে বললেন, ‘‘উনি ক্রিকেটের জন্য যা করেছেন সেটা ভুলব কী করে।’’ বিজয় হাজারে জাতীয় ওয়ান ডে টুর্নামেন্ট জেতা বাংলার লক্ষ্মীরতন শুক্লর জার্সি ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়ার সময় মনোজ তিওয়ারির তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘লক্ষ্মীকে আমরা মিস করব। ও বাংলা দলের খুব উল্লেখযোগ্য মেম্বার ছিল।’’ আবার গড়পড়তা সমর্থকের আর্তিও ছিল। বাগান কোচ সঞ্জয় সেনের জার্সি কেনা সবুজ-মেরুন সমর্থক যেমন বলে গেলেন, ‘‘সনি নর্ডি না থাকলেও চলবে, কিন্তু সঞ্জয় সেন ছাড়া চলবে না আমাদের মোহনবাগানের।’’
বাংলার ক্যাপ্টেন, বাগান কোচ ছাড়াও সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরাশিস লাহিড়ীদের উপস্থিতিতে নিলাম হল ফুটবলসম্রাটের সই করা ব্রাজিল জার্সি, ফুটবল-ও। এক লাখে পেলের জার্সি কিনলেন মোহনবাগান সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু। উদ্যোক্তারা আশা করেছিলেন পাঁচ লক্ষ টাকা উঠবে নিলাম থেকে। উঠল প্রত্যাশার চেয়ে ঢের বেশি ১৩ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা। দুই সমর্থকের পরিবার পাবেন সাত লাখ টাকা করে। যে অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা এক্সট্রা টাইম।