বিশ্বকাপে গোপন অস্ত্র দেখবেন, হুঙ্কার কোচের

হোলকার স্টেডিয়ামের লাগোয়া রেসকোর্স রোডের ফুটপাতে কুলদীপের বিশাল পোস্টারও বিক্রি হতে দেখা গেল শুক্রবার। চলতি ওয়ান ডে সিরিজে অস্ট্রেলিয়া-বধের ব্রহ্মাস্ত্র যে এখন ২২ বছরের এই নতুন তারকা।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

ইনদওর শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৫০
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

চেন্নাই, কলকাতা মাতিয়ে এ বার তিনি সি কে নায়ডু, মুস্তাক আলির শহরে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহালিকে নিয়ে যত উৎসাহ এই শহরের, কুলদীপ যাদবকে ঘিরে তার চেয়ে কম কৌতূহল নয় এখানে।

Advertisement

হোলকার স্টেডিয়ামের লাগোয়া রেসকোর্স রোডের ফুটপাতে কুলদীপের বিশাল পোস্টারও বিক্রি হতে দেখা গেল শুক্রবার। চলতি ওয়ান ডে সিরিজে অস্ট্রেলিয়া-বধের ব্রহ্মাস্ত্র যে এখন ২২ বছরের এই নতুন তারকা। রবিবার তাঁর দুরন্ত ঘূর্ণিতেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ জয় চায় মধ্য প্রদেশের এই ক্রিকেটপাগল শহর। সারা দেশও।

কিন্তু ভারত যখন মাতোয়ারা ভারতীয় দলের এই চায়নাম্যান বোলারকে নিয়ে, তখন তাঁর নিজের শহরেরই একজন তাঁর বোলিং নিয়ে দুশ্চিন্তায়! ‘‘২০১৯ বিশ্বকাপের আগে নিজের লুকনো অস্ত্রটা প্রকাশ করে না দেয় গুড্ডু,’’ কানপুর থেকে উদ্বেগ জড়ানো গলায় শুক্রবার সন্ধ্যায় ফোনে বললেন কুলদীপের ছোটবেলার কোচ কপিল দেব পাণ্ডে। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানরা এমনিতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে কুলদীপের চায়নাম্যান সামলাতে। তার উপর আবার লুকনো অস্ত্রও রয়েছে কুলদীপের আস্তিনে!

Advertisement

কিন্তু কী সেই লুকনো অস্ত্র?

এ বার বেশ সাবধান কুলদীপ যাদবের আবিষ্কর্তা। বললেন, ‘‘এখনই বলব না। দেখতে পাবেন। কখনও ও রাউন্ড দ্য উইকেট বল করলে দেখবেন। তখনই বুঝবেন ওর অস্ত্রটা কী মারাত্মক! তবে বিশ্বকাপের আগে ওকে এই বলটা বেশি করতে বারণ করেছি। না হলে সবাই বুঝে যেতে পারে।’’ বাঁ হাতির লেগব্রেক— একেই তো চায়নাম্যান বলে জানে ক্রিকেটবিশ্ব। এর চেয়েও ধারালো কিছু আছে তার মানে কুলদীপের অস্ত্রাগারে? কপিল বললেন, ‘‘কুলদীপের ৬০ শতাংশ এখন দেখেছে ক্রিকেট দুনিয়া। পিকচার অভি বাকি হ্যায়। দেখতে থাকুন না কী হয়। প্র্যাকটিসে ওর ভয়ঙ্কর বোলিং আমি নিজের চোখে দেখেছি বলেই বলছি। ও যেদিন নিজের একশো শতাংশ দেখাবে, সে দিন ও-ই বিশ্বের সেরা স্পিনার হবে। দেখে নেবেন।’’

শুরুতে পেসার হতে চেয়েছিলেন কুলদীপ। ভাগ্যিস কুলদীপকে স্পিন করানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁর কোচ। না হলে তো চায়নাম্যান কুলদীপ যাদবকেই পেত না ভারতীয় ক্রিকেট। কথায় বলে, ঘরের গর্ব মানে প্রতিবেশির হিংসা। ‘‘কুলদীপের রহস্য সমাধান করতে না পেরে স্টিভ স্মিথরা হয়তো আমাকেই দুষছে’’, শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজেরই বলা এই কথাগুলোয় হো হো করে হেসে ওঠেন কুলদীপের গুরু। বলেন, ‘‘ও আমার কাছে যখন প্রথম আসে, তখন ১৩-১৪ বছর বয়স। ওয়াসিম আক্রমের ভক্ত। আক্রমের মতোই বাঁহাতি পেসার হতে চেয়েছিল। আমি স্পিন করতে বলায় মুষড়ে পড়েছিল। বুঝিয়ে রাজি করাই। এ বার শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরার পর দেখা হতেই বলল, স্যার, ভাগ্যিস সে দিন পেস ছেড়ে স্পিন করাতে বলেছিলেন।’’ গুরু কপিল এর পর যোগ করছেন, ‘‘তবে ওকে তুলে আনার ব্যাপারে আপনাদের কলকাতার অনেক অবদান রয়েছে। কেকেআর আর গৌতম গম্ভীর ওকে অনেক সমর্থন করেছে।’’

চেন্নাইয়ে শুরুর দিকে কুলদীপের বোলিংয়ে প্রচণ্ড মার খেতে দেখে যে বেশ রাগ হয়েছিল তাঁর, তা স্বীকার করেই নিলেন কপিল। বলেন, ‘‘চেন্নাইয়ের ম্যাচের পরের দিনই ওকে ফোন করে বলি লাইন আর লেংথে মন দে আর ব্যাটসম্যানদের অফ স্টাম্পের বাইরে খেলানোর চেষ্টা কর। ইডেনে এটাই কাজে লেগে যায়। শুরুর দিকে ওর হাত থেকে বল ফস্কে যাচ্ছিল বোধহয়। প্রান্ত বদল করার পরে সমস্যা দূর হয়।’’ ছাত্রের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তিনি আরও বললেন, ‘‘ওকে যা বলি, বাধ্য ছাত্রের মতো সব শোনে আর অক্ষরে অক্ষরে তা পালনও করে। যতক্ষণ না লক্ষ্যপূরণ করতে পারছে, অক্লান্ত পরিশ্রম করে যায়।’’

২০১৪-তে দুবাইয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের পরে এ বার ভারতের সিনিয়র দলের হয়ে একদিনের ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক। কোচ কপিল দেব কিন্তু বলে দিচ্ছেন, ‘‘এটাই প্রত্যাশা করেছিলাম। এ রকম হ্যাটট্রিক আবার করবে ও। আমি পরেরটার অপেক্ষায় আছি। আপনারাও থাকুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন