তিতের কোচিংয়েই আবার ঘুরে দাঁড়াবেন কুটিনহোরা

বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে এ বার ব্রাজিলের অধিকাংশ মানুষেরই কোনও আগ্রহ ছিল না শুরুর দিকে। নিশ্চয়ই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? এই ব্যতিক্রমী ঘটনাই এ বার ঘটেছে।

Advertisement

ডগলাস দা সিলভা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০৪:৫৭
Share:

ফেরা: রাশিয়ায় ব্যর্থ ব্রাজিলের বিশ্বকাপ অভিযান। হতাশাকে সঙ্গী করেই ফিরল ব্রাজিল দল। রিয়ো বিমানবন্দরে ফিলিপে কুটিনহো এবং ব্রাজিল কোচ তিতে। রবিবার। ছবি: এএফপি

ব্রাজিলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ। অসংখ্য মানুষ কর্মহীন। বিশ্বকাপে ব্রাজিলের দুরন্ত ফুটবল কয়েকটা সপ্তাহ আমাদের সেই যন্ত্রণা ভুলতে সাহায্য করেছিল।

Advertisement

বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে এ বার ব্রাজিলের অধিকাংশ মানুষেরই কোনও আগ্রহ ছিল না শুরুর দিকে। নিশ্চয়ই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? এই ব্যতিক্রমী ঘটনাই এ বার ঘটেছে। ফুটবল আমাদের কাছে ধর্ম। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই ব্রাজিল জুড়ে উৎসব শুরু হয়ে যায়। আমি থাকি সাও পাওলোয়। দেখতাম বিশ্বকাপের মাসখানেক আগে থেকেই রূপ বদলে যেত শহরের। রাস্তা, বাড়ির ছাদে হলুদ-সবুজ পতাকা। দেওয়ালে প্রিয় ফুটবলারদের মুখের ছবি। আট থেকে আশি জাতীয় দলের জার্সি পরে ঘুরেছেন। এ বারই দেখলাম, ব্রাজিল শেষ ষোলোয় ওঠার পরেই সাজতে শুরু করে সাও পাওলো। আশা করেছিলাম, রাশিয়ায় ষষ্ঠ বার বিশ্বকাপ জিতবে আমার দেশ। ভাবিনি, এত দ্রুত স্বপ্নভঙ্গ হবে।

বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে হারের পরেই ব্রাজিলের রণনীতি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। কেউ মনে করছেন, ফিলিপে লুইসকে বসিয়ে মার্সেলো ভিয়েরাকে খেলানোর সিদ্ধান্তই ব্যুমেরাং হয়ে গিয়েছে। হারের পরে অনেকেই এই ধরনের মন্তব্য করবেন। যদি ফিলিপে লুইস খেলা সত্ত্বেও বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে ব্রাজিল হারত, তখন কী হত?

Advertisement

এক জন প্রাক্তন ফুটবলার হিসেবে আমি মনে করি, ব্রাজিলের রণনীতি পরিবর্তন করার কোনও প্রয়োজন নেই। আক্রমণাত্মক ফুটবলই আমাদের অস্ত্র। পাঁচটা বিশ্বকাপ জিতেছি আক্রমণাত্মক খেলেই। বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে হারলেও ব্রাজিলের খেলায় মুগ্ধ অধিকাংশ ফুটবলপ্রেমী। এই কারণেই ফুটবলারেরা দেশে ফেরার পরে বিমানবন্দরে কেউ বিক্ষোভ দেখাননি। টেলিভিশনে খবরের চ্যানেলগুলো দেখাচ্ছিল, ফুটবলারদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে ভিড় করেছেন সমর্থকেরা। ব্রাজিল কোচের সঙ্গে নিজস্বীও তুলেছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: অবিশ্বাস্য ফিটনেসেই তফাত গড়ে দিচ্ছেন সুবাসিচরা

ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারাও কোচের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট। জাতীয় দলে তিতের সহকারী সিলভিনহো ক্যাম্পোস (জুনিয়র) আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু। বিশ্বকাপ চলাকালীন ওর সঙ্গে একাধিক বার কথা হয়েছে। সিলভিনহোও আমার সঙ্গে একমত। বার বারই বলেছে, ‘‘ব্রাজিলীয় ঘরানাই হচ্ছে আক্রমণাত্মক ফুটবল। সেটা বদলানোর চেষ্টা করলে ছন্দ নষ্ট হয়ে যাবে।’’ দুঙ্গার কোচিংয়ে ব্রাজিলের খেলার ধরনটাই বদলে গিয়েছিল। ওঁর রণনীতি ছিল রক্ষণাত্মক ফুটবল। তার ফল কী মারাত্মক হয়েছিল, তা কারও অজানা নয়। চার বছর আগে লুইস ফিলিপ স্কোলারিও চেষ্টা করেছিলেন ইউরোপীয় ঘরানায় নেমারদের খেলাতে। কিন্তু সেই পরিকল্পনাও চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছিল।

তিতের কোচিংয়ে বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও নজর কেড়েছে ব্রাজিলের খেলা। তাই তাঁকেই কোচ হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা। তিতে অবশ্য এখনও তাঁর সিদ্ধান্ত জানাননি। আগামী সপ্তাহে ফুটবল ফেডারেশনের কর্তাদের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় বসার কথা। তার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

আমার মতে তিতের হাতেই জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, এক বছর পরে কোপা আমেরিকা। নতুন কাউকে দায়িত্ব দিলে তাঁর পক্ষে মানিয়ে নেওয়া কঠিন। তিতের সঙ্গে ফুটবলারদের দারুণ সম্পর্ক। এই দলের ষাট শতাংশ ফুটবলারই ২০২২ বিশ্বকাপে খেলবে বলে আমার ধারণা। তবে কয়েকটা পরিবর্তন দরকার। দুই ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা ও মিরান্দা ফিলহোর বয়স এখন ৩৩। চার বছর পরে ওঁদের পক্ষে বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই তিতে কোচ থাকলেই ঘুরে দাঁড়াবে ব্রাজিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন