ইউরো হারের সেই হতাশা মুছতে চান উমতিতিরা

কাকতালীয়ভাবে যে দিন ইউরো কাপের ফাইনালে পর্তুগালের কাছে হেরেছিল ফ্রান্স, মঙ্গলবার ছিল তাঁর দু’বছর পূর্তির দিন।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

মস্কো শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪৭
Share:

উৎসব: গোলের পরে নাচ উমতিতির। যা নিয়ে চলছে চর্চা। ছবি: গেটি ইমেজেস

এ রকম একটা ম্যাচে রক্ষণ থেকে উঠে এসে গোল করে দলকে জেতানোর পর আপনার অনুভূতিটা একটু জানাবেন?

Advertisement

গালে রং মেখে আসা ফ্রান্সের ওই মহিলা সাংবাদিকের প্রশ্নটা শুনে সামান্য হাসি খেলে গেল ম্যাচ-সেরা ফুটবলারের মুখে।

তার পরে খুব আস্তে স্যামুয়েল উমতিতি বললেন, ‘‘দু’বছর আগের ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে হারের দুঃখটা এখনও মনের ভিতর জ্বালা ধরায়। সেই শোধটা নিতে হবে এ বার।’’

Advertisement

কাকতালীয়ভাবে যে দিন ইউরো কাপের ফাইনালে পর্তুগালের কাছে হেরেছিল ফ্রান্স, মঙ্গলবার ছিল তাঁর দু’বছর পূর্তির দিন। উমতিতি সে জন্যই সম্ভবত টেনে আনলেন সেই দিনের কথা। তার পরে তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘স্বপ্ন ছুঁতে আর একটা ম্যাচ জিততে হবে আমাদের। তবেই শোধটা নেওয়া যাবে। অনুভূতিটা সে দিনই সব চেয়ে মধুর হবে।’’

প্রতিশোধ শব্দটা বেরলো না, শান্ত গলা থেকে। অদ্ভুত একটা শীতল চোখ নিয়ে এর পরে দিদিয়ে দেশঁর দলের জয়ের নায়কের মন্তব্যটা আরও ইঙ্গিতবাহী। ‘‘এ বার ট্রফি জেতার জন্য আমরা এসেছি। বেলজিয়াম খুব ভাল দল ছিল। ড্রেসিংরুমে ঠিক করেই এসেছিলাম, না জিতে ফিরব না। আমরা জেতার ব্যাপারে এককাট্টা ছিলাম’’, মিক্সড জোনে এবং পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এক দশকেরও বেশি সময়ের পরে দেশকে বিশ্বকাপ ফাইনালে তুলে কোথায় হুঙ্কার ছাড়বেন, তা নয় শশার মতো ঠান্ডা ফ্রান্সের স্টপার।

এত বড় চেহারা। মাঠে রোমেলু লুকাকুর মতো শক্তিধর স্ট্রাইকারকে নড়তে দেননি। নানা কৌশলে থামিয়ে দিয়েছেন বেলজিয়ামের ‘লাল দৈত্যদের’। বার্সেলোনার রক্ষণে তাঁর থাকা মানে পাহাড় দাঁড়িয়ে থাকা। মাঠের মধ্যে তাঁকে দেখে মনে হয় রাগী একজন আগুনে মনোভাবের ফুটবলার। কিন্তু ভুল ভেঙে যায় যখন মিডিয়ার সামনে এসে কথা বলেন।

অবিশ্বাস্য একটা হেডে দেশকে আপনি ফ্রান্সকে নিয়ে গিয়েছেন বিশ্বকাপ ফাইনালে। আপনি নিজের চেয়েও লম্বা মারুয়ান ফেলাইনির মাথার উপর দিয়ে কী ভাবে হেডটা করলেন? এক ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিক প্রশ্নটা করতেই হেসে ফেলেন উমতিতি। বলেন, ‘‘ওটা আমার অভ্যাস। কতটা লাফিয়েছিলাম জানি না। তবে হেড করে গোল করা আমার কাজ। ক্লাবেও ওটা করি।’’

জ়িনেদিন জ়িদানদের ২০০৬-এর পর ফ্রান্স আবার ফাইনালে। দেশঁ ঘোষণা করে দিয়েছেন, ‘‘ফুটবলারদের পরিবার এখানে আছে। এটা আমাদের কাছে একটা স্মরণীয় দিন। আট চল্লিশ ঘন্টা সবাই আনন্দ করুক। তার পরে ফাইনাল নিয়ে ভাবতে শুরু করব।’’

উমতিতি তো বটেই, অনন্য রেকর্ড ছোঁয়ার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও যতটা শান্ত ছিলেন দেশঁ, মঙ্গলবার মধ্যরাতে বেলজিয়াম শিবির ততটাই উত্তপ্ত ছিল। বিশেষ করে এডেন অ্যাজার আর থিবো কুর্তোয়া। হেরে গিয়েও বেলজিয়ামের দুই তারকা তীব্র আক্রমণ ও কটাক্ষ করেছেন ফ্রান্সের জয়কে। এতটাই যে, জনৈক বেলজিয়ান সাংবাদিক যখন তাঁকে প্রশ্ন করলেন, এত ভাল খেলে হেরে যাওয়ার পর আপনি কি হতাশ? তখন শান্ত চেহারার অ্যাজার ক্ষেপে গেলেন। বলেন, ‘‘আমি হতাশ তো নয়ই, বরং গর্বিত। গোল ছাড়া আমরা সব কাজ করেছি। আমি ফ্রান্স দলে থাকলে লজ্জা পেতাম। এ রকম নেতিবাচক ফুটবল খেলে জেতার কোনও মানে হয় না।’’ মুখটা ক্রোধে লাল বেলজিয়ামের অধিনায়কের। ‘‘এটা তো ফুটবলের সৌন্দর্য্যকে নষ্ট করে দেওয়া। সারাক্ষণ রক্ষণ সামলে এমবাপেকে সামনে রেখে কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল। এ রকম কেউ খেলে? এটা ফুটবল! ব্রাজিল আমাদের কাছে হারলেও তাদের ফুটবলটা খেলেছিল। ফ্রান্স সেটা করেনি।’’ বেলজিয়াম যে কতটা তেতে ছিল এবং সেই হতাশা যে কতটা প্রকট ছিল, ড্রেসিংরুমে সেটা দলের ‘নায়ক’ গোলকিপার কুর্তোয়ার কথাতে আরও স্পষ্ট। ‘‘সেট পিস থেকে ফ্রান্সের গোলটাকে আমি ম্যাজিক বলব। এক মুহূর্তের জন্য ব্যাপারটা ঘটেছে। কিন্তু ফ্রান্স আর পুরো ম্যাচে করেছেটা কী? বল দখলে আমরা এগিয়ে ছিলাম। গোলে শট নেওয়াতেও আমরা এগিয়ে। পাসিংয়েও আমরা এগিয়ে। দেখে নিন পরিসংখ্যান।’’

মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে যখন ফুটবলাররা কথা বলছিলেন তখন দিদিয়ে দেশঁর সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হয়ে গিয়েছে। তাঁর নেতিবাচক রণনীতি নিয়ে এ রকম তোপ দেগেছেন বেলজিয়ামের দুই ফুটবলার, ফ্রান্স কোচের মত কী? সেটা শোনার সুযোগ হয়নি।

সামনে কিলিয়ান এমবাপেকে পেয়ে তাঁকে ধরলেন সবাই। ফরাসি এক সংবাদিকের কাছ থেকে শুনলাম এ বারের টুর্নামেন্টের গোল্ডেন বুটের দাবিদার শুধু বলেছেন, ‘‘ওদের কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। আমরা আমাদের মতো খেলেছি, জিতেছি এবং ফাইনালে গিয়েছি। এর বাইরে তো আর কিছু ঘটেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন