‘ফাইনালে নিজেদের সেরাটাই দেখাল ফ্রান্স’

আমি জানতাম, ফাইনালের আগে ফ্রান্স ওদের পুরো ক্ষমতা দেখায়নি। সেটা বুঝেছিলাম বলেই ফ্রান্স আমার ফেভারিট ছিল। ফাইনালে নিজেদের আসল খেলাটা খেলে বিশ্বকাপ জিতে নিয়ে চলে গেল দিদিয়ে দেশঁর দল।

Advertisement

মারিয়ো কেম্পেস

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ০৫:১৬
Share:

উল্লাস: প্রথম গোলের পরে ফ্রান্সের উৎসব। রবিবার। ছবি: গেটি ইমেজেস

আবার স্বপ্নপূরণ হতে লেগে গেল কুড়ি বছর। ফ্রান্সের একটা তরুণ দল নতুন করে নিজেদের কাহিনি লিখল মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। ১৯৯৮ সালের পরে ফ্রান্সের ঘরে আবার বিশ্বকাপ।

Advertisement

আমি জানতাম, ফাইনালের আগে ফ্রান্স ওদের পুরো ক্ষমতা দেখায়নি। সেটা বুঝেছিলাম বলেই ফ্রান্স আমার ফেভারিট ছিল। ফাইনালে নিজেদের আসল খেলাটা খেলে বিশ্বকাপ জিতে নিয়ে চলে গেল দিদিয়ে দেশঁর দল। উল্টো দিকে ছিল এমন একটা দল, প্রতিযোগিতা শুরুর আগে যাদের কেউ ফেভারিট হিসেবে দেখেনি। কিন্তু বিশ্বকাপ যত গড়িয়েছে, তত সম্মান আদায় করে নিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। ফাইনালে ওরাই ছিল ডার্ক হর্স। ক্রোয়েশিয়া শেষ পর্যন্ত পারল না ঠিকই, কিন্তু ওরা নিজেদের সেরাটা দিয়েছে ফাইনালে। আমার কাছে ক্রোয়েশিয়ার এই দলটা ভবিষ্যতের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ওদের যেমন ব্যক্তিগত প্রতিভা আছে, তেমন দল হিসেবেও খুব ভাল খেলে।

ফ্রান্স বনাম ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের শুরুর দিকে অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা ঘটে গেল। ১৯ মিনিটের মাথায় মারিয়ো মাঞ্জুকিচ যে একটা আত্মঘাতী গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেবে, এটা কি কেউ ভাবতে পেরেছিলেন? নিশ্চয়ই নয়। আত্মঘাতী ওই গোলটা হওয়ার আগে পর্যন্ত ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ারই রাজত্ব ছিল। ওরা ফ্রান্সের ওপর চাপ সৃষ্টি করছিল। ক্রোয়েশিয়ার নিখুঁত রক্ষণের সামনে আটকে যাচ্ছিল ফরাসি আক্রমণ। একটা গোলই খেলাটা ঘুরিয়ে দিল। একটা সুযোগ এবং তার থেকেই প্রথম গোল।

Advertisement

আরও পড়ুন: ৬৬-র পর আবার ফাইনালে হাফ-ডজন গোল

আঁতোয়া গ্রিজ়ম্যানের ফ্রি-কিকে মাথা ছোঁয়ানোর জন্য লাফ দিয়েছিল বেশ কয়েকটি শরীর। কিন্তু ফ্রান্সের জার্সি পরা কেউ নয়, মাঞ্জুকিচের মাথায় লেগে বলটা গোলে ঢুকে গেল। ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার সুবাসিচের কিছুই করার ছিল না। ওই রকম একটা গোল খেলে যা হওয়ার তাই হল। ক্রোয়েশিয়ার উৎসাহে কেউ যেন এক বালতি ঠান্ডা জল ঢেলে দিল। তবে ক্রোয়েশিয়ার ভাগ্য ভাল, ইভান পেরিসিচ তার কিছু পরেই গোল করে সমতায় ফেরায় দলকে।

স্কোর ১-১ থাকা অবস্থায় বির্তকের ছাপ পড়ল ফাইনালে। যখন বক্সে পেরিসিচের হাতে বল লাগে। রেফারি ভিডিয়ো প্রযুক্তির (ভার) সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি দেন। গ্রিজ়ম্যানের মারা নিখুঁত কিকটা জালে জড়িয়ে যেতেই ফ্রান্স ২-১ এগিয়ে যায়। প্রথমার্ধের শেষে ওটাই স্কোরলাইন থেকে গেল। কিন্তু আমার মনে হয়, ক্রোয়েশিয়ার আরও কিছু প্রাপ্য ছিল প্রথম ৪৫ মিনিটে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটাও প্রথমার্ধের মতোই ছিল। ফ্রান্সের গোল লক্ষ্য করে একের পর এক ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণ। ওই সময় লুকা মদ্রিচদের দেখে মনে হচ্ছিল, গোলটা শোধ হয়ে যেতে পারে। ফ্রান্স নির্ভর করেছিল প্রতি-আক্রমণের ওপর। সে রকমই একটা মুভ থেকে আসে পোগবার গোলটা। এর পরে ধীরে ধীরে ক্রোয়েশিয়ার ক্নান্তিটা ধরা পড়তে লাগল। ফ্রান্সের আক্রমণের ঝাঁঝও বাড়তে থাকে। ওই অবস্থাতেও ক্রোয়েশিয়া একটা সময় গোল শোধ করার মতো জায়গায় চলে এসেছিল। কিন্তু মদ্রিচ-রাকিতিচদের আক্রমণ দানা বাঁধতে না বাঁধতেই স্কোর ফ্রান্সের পক্ষে ৪-১ হয়ে গেল। এর ব্যাখ্যা একটাই। কিলিয়ান এমবাপে।

খেলা প্রায় তখনই শেষ হয়ে গিয়েছিল। ক্রোয়েশিয়া সামান্য আশার আলো দেখতে পায় ফ্রান্সের গোলকিপার উগো লরিসের বদান্যতায়। পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ড্রিবল করতে গিয়ে গোল খেয়ে বসে লরিস। গোলের অত কাছে কোনও গোলকিপার ড্রিবল করছে, ভাবা যায় না। এখানে গোলকিপারদের একটা পরামর্শই মেনে চলতে হবে। বল পাও আর ক্লিয়ার করে দাও।

দেশঁ এর পর তোলিসো-কে নামান, ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণ সামলানোর জন্য। বল নিজেদের দখলে বেশি না থাকলেও ফ্রান্সের রক্ষণ ঠিক সামলে দেয় ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণ। মাঞ্জুকিচরা শেষ পর্যন্ত মরিয়া চেষ্টা করে গেলেও লাভ হয়নি।

একটা দারুণ বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখলাম আমরা। ভাল গোল হল, ভাল ফুটবল হল। ভাল ট্যাকটিক্যাল ফুটবলও দেখলাম। যেখানে দুই কোচের রণনীতিই নজর কাড়ল। তবে সব চেয়ে দাগ কেটে গেল বেশ কয়েক জন প্রতিভাবান ফুটবলারের লড়াই।

দু’দলের মধ্যে কারা সেরা, সেই তুলনায় যাচ্ছি না। গোটা বিশ্বকাপেই নজর কাড়া ফুটবল খেলে গেল ক্রোয়েশিয়া। তবে ফ্রান্স যোগ্য দল হিসেবেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হল। প্রতিযোগিতার দু’টো সেরা দলই ফাইনাল খেলল। ফরাসিরা জেতায় কোনও অভিযোগ নেই। আগেই বলেছি, ওরা যোগ্য দল হিসেবেই ট্রফি নিয়ে যাচ্ছে।

এই বিশ্বকাপে শুধু ফ্রান্সই রাজত্ব করল না, ইউরোপও শাসন করে গেল দক্ষিণ আমেরিকার ওপর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন