শিক্ষানবীশের মতো ভুলই ছিটকে দিল দু’বারের বিশ্বজয়ীদের

উরুগুয়ের গোলকিপারের দারুণ ‘রিফ্লেক্স’ (প্রতিবর্তক্রিয়া) দুর্দান্ত। ফিটনেসও দারুণ। আট বছর আগে ঘানার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের নক-আউট ম্যাচে টাইব্রেকারে দু’টো পেনাল্টি বাঁচিয়ে দলকে সেমিফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন।

Advertisement

তরুণ বসু

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০৫:৩৯
Share:

ভিন্ন: লরিসের দুরন্ত সেভ। ছবি: এএফপি

এক দিকে উরুগুয়ের ফের্নান্দো মুসলেরা। অন্য দিকে ফ্রান্সের হুগো লরিস। এই দুই বিশ্বখ্যাত গোলকিপারের খেলা দেখব বলেই শুক্রবার রাতে বিশ্বকাপের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটা দেখতে বসেছিলাম।

Advertisement

উরুগুয়ের গোলকিপারের দারুণ ‘রিফ্লেক্স’ (প্রতিবর্তক্রিয়া) দুর্দান্ত। ফিটনেসও দারুণ। আট বছর আগে ঘানার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের নক-আউট ম্যাচে টাইব্রেকারে দু’টো পেনাল্টি বাঁচিয়ে দলকে সেমিফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন। ফরাসি গোলরক্ষক আবার অনুমানক্ষমতায় অনেক কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে দক্ষ। সাহসী। মাথাটাও ঠাণ্ডা।

শেষ পর্যন্ত মুসলেরার দুই অর্ধে দু’টো শিক্ষানবীশের মতো ভুলই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দিল দু’বারের বিশ্বজয়ীদের। আর মুসলেরার ব্যর্থ হওয়ার মঞ্চে দুরন্ত খেললেন লরিস। আটকে দিলেন উরুগুয়ের গোল করার রাস্তা। ম্যাচের শেষ দিকে, ডান দিকে ঝাঁপিয়ে যে ভাবে তৎপরতার সঙ্গে উরুগুয়ের মার্টিন ক্যাসারেসের শট গোলে ঢুকতে দিলেন তা প্রশংসার। যা বলে দেয়, ফরাসি গোলকিপার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলে চোখ রাখেন। আর মনোসংযোগে কোনও খামতি নেই তাঁর। ম্যাচে ঠিক এই জায়গাতেই ধাক্কা খেলেন মুসলেরা।

Advertisement

এটাই ফুটবলের মজা। এখানে কেউ একদিন নায়ক। তো কেউ একদিন চরম ব্যর্থ। আর গোলকিপাররা ব্যর্থ হওয়া মানেই তো দলের বিপদ দরজায় কড়া নাড়ে। অস্কার তাবারেসের দলের কাছেও ঠিক তাই হয়েছে। মুসলেরা এই বিশ্বকাপেই শুক্রবারের ম্যাচের আগে খেয়েছিলেন মাত্র একটি গোল। কিন্তু এ দিন তাঁর ভুলটাই বিশ্বকাপ থেকে ছুটি করে দিল উরুগুয়ের। আট বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপে মুসলেরার অভিষেক হয়েছিল এই ফ্রান্সের বিরুদ্ধে গোল না খেয়ে। আর শুক্রবার সেই ফরাসিদের হাতেই ভুলুন্ঠিত হল এই বিশ্বখ্যাত গোলকিপারের সম্মান।

মুসলেরার গোল খাওয়া। ছবি: এএফপি

কে এই ব্যর্থতা? মনে রাখবেন, আট বছরে একজন গোলকিপার কিন্তু তাঁর ফিটনেস অনেকটা হারায়। যে গোলদু’টো এ দিন মুসলেরা খেয়েছে, সেখানে ফিটনেস এবং মনোসংযোগের অভাব স্পষ্ট। প্রথম গোলের সময় রাফায়েল ভারান যখন হেড করতে উঠছেন, তখন মুসলেরা বলের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়েছিলেন। গোলটার রিপ্লে দেখলেই তা বোঝা যাবে। আর বলের থেকে চোখ সরে গিয়েছিল বলেই ঝাঁপাতে দেরি হয়েছিল ওঁর। বল বেরিয়ে যাওয়ার পরে ঝাঁপ দিয়েছিলেন তিনি।

দ্বিতীয় গোলটার সময় আরও বড় ভুল করেন লুইস সুয়ারেসের দেশের এই গোলকিপার। আঁতোয়া গ্রিজম্যান যে দূরপাল্লার শটটা নিয়েছিলেন, তা থামাতে গিয়ে দ্বিধায় পড়েছিলেন মুসলেরা। বলটা ধরবেন, না চাপড় মেরে বার করবেন। গোলকিপারদের এই সিদ্ধান্তটা দ্রুত সেকেন্ডের ভগ্নাংশে নিতে হয়। মুসলেরার সেখানেই দেরি হয়ে গিয়েছিল। তার পরেও বলটা তিনি আটকাতে পারতেন। উচিত ছিল বলটাকে সামনে চাপড় মেরে ফেলা। তার পরে ধরা। কারণ, সামনেই ছিল দিয়েগো গোদিনদের রক্ষণ। ‘সেকেন্ড বল’ (যে বল গোলকিপার ধরতে না পারলে বেরিয়ে আসে)-টা ধরতে পারত না ফরাসি ফুটবলাররা। একে দ্বিধা কাজ করেছে।

তার উপর শরীরটাকেও বলের পিছনে নিয়ে যাননি। যদি বলের পিছনে শরীর থাকত, তা হলে এই সোজা বলটা মুসলেরার হাতে না লাগলেও গায়ে লাগতে পারত। তৃতীয়তঃ, মুসলেরার হাতও ঠিক জায়গায় ছিল না। একটা হাত সামনে এবং একটা হাত কিছুটা পিছনে ছিল। তাই চাপড় মেরে বল বিপন্মুক্ত করতে গিয়ে গোলে ঢুকিয়ে দিলেন। আমার মতে, কাভানি না খেলার প্রভাব পড়ে থাকতে পারে দলে। এই বিশ্বকাপে কাভানি উরুগুয়ের এক নম্বর স্ট্রাইকার। একে সে নেই। তার উপর প্রথমার্ধে নিজে ভুল করায় দল পিছিয়ে গিয়েছে। তাই দ্বিতীয় গোলটা খাওয়ার সময়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল হয়তো। সেখান থেকেই বিপত্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন