অবিশ্বাস্য গোলের পরে সুনীলকে নিয়ে উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই।
ওমান-২ (কাশিম, এমাদ-পেনাল্টি)
ভারত-১ (সুনীল)
ইন্সপায়ার্ড বাই ড্রিম!
খেলা শুরুর আগে পেল্লাই ফেস্টুনটা নিয়ে কান্তিরাভা স্টেডিয়াম দাপাচ্ছিলেন এক দঙ্গল ভারতীয় সমর্থক। স্বপ্নের জোরেই তো তেতে থাকতে হবে!
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে চল্লিশ ধাপ উপরে ওমান। ১০১ আর ১৪১।
কিন্তু স্বপ্ন সফল করে ২০১৮ বিশ্বকাপের সেই কোয়ালিফাইং ম্যাচটাতেই জিতে কিংবা অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়তে পারতেন ভারতের ব্রিটিশ কোচ আর তাঁর ছাত্ররা। কিন্তু বাস্তবে সুব্রত পালরা বেঙ্গালুরুর হোটেলে ফিরলেন ১-২ হেরে।
ম্যাচ শেষে মাঠেই টিভি সাক্ষাৎকার দিলেন সুনীল ছেত্রী। ০-১ পিছিয়ে থাকা অবস্থায় যাঁর বিশ্বমানের গোলে এ দিন ম্যাচের আধঘণ্টার মধ্যেই সমতা ফিরিয়েছিল ভারত। সেই সুনীল বলছিলেন, ‘‘এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না বিনীতের গোলটা বাতিল হল কী ভাবে! হোটেলে ফিরে ম্যাচের রিপ্লে দেখতে হবে। শেষের দিকে একটা পেনাল্টিও তো পেলাম না! এর পর আর ওমানের মতো শক্তিশালী টিমের বিরুদ্ধে জিতে ফেরা যায় না কি?’’ ভারতীয় কোচ স্টিভন কনস্ট্যানটাইনও সাংবাদিক সম্মেলনে এসে এ দিনের রেফারিকে দুষে বলেছেন, ‘‘রেফারিকে কিছু অবাক করা সিদ্ধান্ত নিতে দেখলাম। কিছুই বলার নেই।’’
প্রশ্ন উঠতেই পারে, ওমানের বিরুদ্ধে পেনাল্টিতে ১-২ পিছিয়ে যাওয়ার পরেও তো পঞ্চাশ মিনিট সময় পেয়েছিল ভারত। ওই সময় অর্ণব মণ্ডলের টিম কী করল?
উত্তর— ওই পঞ্চাশ মিনিটে অর্ণবদের ম্যাচটা ৩-২ জেতার কথা। নিদেনপক্ষে ২-২। তা-ও হয়নি। যার নেপথ্যে অনেকটাই ম্যাচের দক্ষিণ কোরিয়ান রেফারি হিউং জিন কো। ৬৮ মিনিটে তিনি বিনীতের গোল কেন অফসাইডের অজুহাতে বাতিল করলেন তা অনেকেরই বোধগম্য হচ্ছে না। ভারতীয় শিবিরের আরও দাবি, ম্যাচের শেষ লগ্নে বক্সে গোলমুখী সুনীলকে এক ওমান ডিফেন্ডার অবৈধ ভাবে বাধা দিলেও রেফারি পেনাল্টি দেননি।
অর্ণবদের কোচও বলছেন, ‘‘আমাদের দ্বিতীয় গোলটা কেন দেওয়া হল না বুঝলাম না। ওই মুভটা যখন হচ্ছে, তখন রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে ঘুরে বললাম, এ বার গোল। গোলটাও হল। কিন্তু দেখলাম লাইন্সম্যান পতাকা তুলে দাঁড়িয়ে আছেন।’’ তাৎপর্যের, বিনীত যখন রবিনকে পাস দিতে যাবেন তখনই লাইন্সম্যান অফসাইডের নির্দেশ দেন। টিভি রিপ্লেতে আরও দেখা গিয়েছে, বল রবিনের পায়ে না লেগে ওমানের আল মুখাইনির পায়ে লেগে গোলে ঢুকেছিল। তা হলে কী ভাবে অফসাইড, তা নিয়ে জল্পনা জোরদার।
এ দিনের ম্যাচে একসঙ্গে চার ভারতীয় ফুটবলারের আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটে। রক্ষণেই তিন জনের— রিনো, ধনচন্দ্র, লালচুনরা এ দিনই প্রথম গায়ে দিলেন ভারতের নীল জার্সি। ফলে রক্ষণ শুরু থেকেই একটু নড়বড় করছিল। ওমানের স্ট্রাইকাররা বক্সের আশেপাশে যে টাচ ফুটবলটা খেলছিলেন সেটাকে রুখতে গিয়ে বারবার বিপদ ডেকে আনছিলেন ধনচন্দ্ররা। আর সেই সুযোগে ম্যাচের প্রথম মিনিটেই কাশিমের গোল। ভারতের চতুর্থ নতুন মুখ শেহনাজ অবশ্য সাধ্য মতো লড়লেন মাঝমাঠে।
ম্যাচ থেকে ভারতের অবশ্য প্রাপ্তি সুনীলের বিশ্বমানের গোল। বক্সের ডান দিকের কোণ থেকে যে বাঁক খাওয়ানো শটে তিনি গোল করলেন তা পরবর্তী গুয়াম ম্যাচের আগে গোটা টিমেরই মনোবল বাড়াবে।
সদ্যসমাপ্ত আই লিগে মাত্র দু’টো গোল করলেও দিল্লির ফুটবলার ফের দেখিয়ে দিলেন— দেশের জার্সি গায়ে গোল করার অভ্যাসে এখনও কোনও মরচে পড়েনি ভারতের সর্বকালের হায়েস্ট স্কোরারের।
ভারত: সুব্রত, লালচুনমাওয়াইয়া, ধনচন্দ্র, অর্ণব, রিনো, জ্যাকিচন্দ (সত্যসেন), শেহনাজ (ধনপাল), লিংডো, বিনীত, রবিন (জেজে), সুনীল।