মদ্রিচের দেশ থেকে

আমরা হারলাম কোথায়! পেরিসিচদের জন্য গর্বিত

আসলে বিশ্বকাপ জিতেছে ফ্রান্স, কিন্তু গোটা দুনিয়ার মন জিতে নিয়েছে ক্রোয়েশিয়াই।

Advertisement

আনি বাকোভিচ

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ০৪:৩২
Share:

অভিনন্দন: ম্যাচের পরে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া প্রেসিডেন্ট। এএফপি

দিনভর উৎসবের মেজাজ। গোটা দেশটা যেন আনন্দে পাগল হয়ে গিয়েছিল। সকলের গায়ে ক্রোয়েশিয়ার জার্সি। এমনকি, পর্যটকরাও আমাদের দেশের জার্সি পরে ঘুরছেন! সবার দৃঢ়বিশ্বাস ছিল— কাপ ঘরে আসছেই!

Advertisement

পূর্ব ইউরোপের একটা ছোট্ট দেশ ক্রোয়েশিয়া। ফুটবল-পাগল দেশটায় এমন ছবির দেখা মেলেনি কোনও দিন। পড়াশোনার জন্য আমি সুইৎজারল্যান্ডে থাকি। বিশ্বকাপের আঁচ পেতে এই সময়টা দেশে চলে এসেছিলাম। দেশ ফাইনালে ওঠার পরে সুইৎজারল্যান্ড থেকে পাঠানো বন্ধুদের শুভেচ্ছাবার্তায় ভরে গিয়েছিল ইনবক্স। আসলে বিশ্বকাপ জিতেছে ফ্রান্স, কিন্তু গোটা দুনিয়ার মন জিতে নিয়েছে ক্রোয়েশিয়াই।

গ্রুপ পর্বের শুরু থেকেই দারুণ খেলেছে মদ্রিচরা। তার পরে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ৩-০ জয়। রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে জয়ের পর থেকেই আমাদের দেশের প্রতি মানুষের উৎসাহ ব্যাপক ভাবে বেড়ে যায়। ‘ইন্টারনেট সার্চিং’-ই বলে দেয় সেই কথা। সম্প্রতি সমস্ত তথ্য দিয়ে বিষয়টি সামনে এনেছিল আমাদের দেশের একটি সংস্থা। তার পরে সেমিফাইনালে সামনে পড়ল ইংল্যান্ড। খেলা শুরুর পাঁচ মিনিটের মাথায় গোল দিয়েছিলেন ওঁরা। সেই চাপ কাটিয়ে উঠে ২-১এ জয়।

Advertisement

যদিও রূপকথার জয় এল না। স্বপ্ন সত্যি হল না। ফাইনালে ৪-২-এ ফ্রান্সের কাছে হেরে গেলাম আমরা।

কিন্তু না-ই বা হল এ বার। না হয় ঘরে এল না কাপ। তাতেই বা কী! খেলোয়াড়দের জন্য গর্বিত আমরা। ওঁরা ইতিহাস গড়েছেন। এমন একটা দিনের সাক্ষী হতে পারলাম, সত্যি খুব লাকি। খেলা শেষের বাঁশি বাজতে না বাজতেই তাই রাজধানী জাগ্রেবের রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন সবাই। আতসবাজি ফাটান। আলোয় আলোয় ভরে যায় পথঘাট। জেলাসিচ স্কোয়্যারে মানুষের উচ্ছ্বাসই বলে দেয়, আমরা হারিনি। হয়তো ওঁরা ফাইনালের চাপ নিতে পারেনি। বিশেষ করে ফ্রান্সের তৃতীয় গোল হওয়ার পরে বেশ ভেঙে পড়েছিল পেরিসিচরা। কিন্তু শেষ অবধি লড়ে গিয়েছেন সবাই। জেতার সুযোগ সত্যিই আর ছিল না। ফ্রান্সের প্রথম দু’টো গোল, একেবারেই ওঁদের উপহার দিয়ে দেওয়া। নজর কেড়ে নিয়েছেন আমাদের প্রেসিডেন্ট কোলিন্ডা গ্রাবার কিটারোভিচও। হবে না-ই বা কেন, খেলা শেষে যে ভাবে দুই দলের খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি, প্রশংসনীয়। বিশ্বকাপে দেশের একটা খেলাও মিস করেননি। এমনকী বিনা-বেতনে ছুটি নিয়ে ফাইনাল দেখতে রাশিয়া চলে গিয়েছিলেন। নিজের অর্থেই ইকোনমি ক্লাসের টিকিট কাটেন। খেলার শেষে ওঁর ‘স্পোর্টসম্যান স্পিরিট’-এর জবাব নেই। আমরা তো ওঁরই দেশের মানুষ। মন ভেঙেছে ঠিকই, কিন্তু সারা রাত উৎসব করেছে জাগ্রেব। দ্বিতীয় স্থান! বিশ্বকাপে সেটাই কি কম বড় নজির! দেশ এখন অধীর অপেক্ষায়। কখন ফিরবে আমাদের ফুটবল দল, কখন তাঁদের সম্বর্ধনায় ভরিয়ে দেবে ভক্তরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন