ছবি: রয়টার্স।
ইরানের সঙ্গে মরক্কোর খেলা দেখছিলাম। দুর্দান্ত খেলে জিতল ইরান। জাপানের জয়ও দেখলাম কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে। সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়ার লড়াই চোখ টানল। জাপান রবিবার সেনেগালের সঙ্গে ড্র করল।
ইরান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি, অস্ট্রেলিয়া—আমরা যখন খেলতাম তখন এই সব দেশকে কত ম্যাচে যে হারিয়েছি! সিডনিতে গিয়ে প্রদর্শনী ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে সাত গোল দিয়েছিলাম। তার আগে ১৯৫৬-র অলিম্পিক্সে ওদের হারিয়েছিলাম ৪-২ গোলে। ১৯৬২-র এশিয়াডে জাপানকে ২-০ হারিয়েছিলাম। ইরান, দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়েছি। সেই দলগুলো এখন বিশ্বকাপ খেলছে। জিতছে। সারা বিশ্ব দেখছে। আর আমরা মেসি, নেমার, রোনাল্ডোর ছবি লাগিয়ে, রাত জেগে খেলা দেখছি। এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে?
গত ষাট-সত্তর বছরে ওরা উন্নতির শিখরে পৌঁছে গেল। আর আমরা ওদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোতেই পারলাম না। বিশ্বকাপে আজ পর্যন্ত খেলতে পারেনি ভারত। এটা যে কতটা দুঃখের বোঝাতে পারব না। এক জন ফুটবলারের কাছে এর চেয়ে যন্ত্রণার আর কিছু হয় না। সাড়ে তিন লাখের দেশ আইসল্যান্ড বিশ্বকাপ খেলছে, একশো কুড়ি কোটির দেশ ভারত ১৮ জন বিশ্বকাপার তৈরি করতে পারে না! একটা পরিসংখ্যান দেখলাম, দেশের জার্সিতে লিয়োনেল মেসির সঙ্গে গোল করায় পাল্লা দিচ্ছেন আমাদের সুনীল ছেত্রী। কিন্তু সুনীল কেন এ জীবনে মেসির মুখোমুখি হতে পারল না বিশ্বকাপে? কাদের জন্য?
ইদানীং অবশ্য সুনীল ছেত্রীরা খুব ভাল খেলছে। আন্তঃমহাদেশীয় কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত, কয়েকটা ভাল দলকে হারিয়ে। এ এফ সি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে উঠেছে ওরা। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে একশোর মধ্যে ঢুকে পড়েছে ভারত। সবই ঠিক। কিন্তু তাতে আমার মন ভরছে না। ঘরের মাঠে কোনও টুর্নামেন্ট জেতা বা এশীয় স্তরে সাফল্য কিন্তু অলিম্পিক্স বা বিশ্বকাপের খেলার পরিপূরক নয়। এশিয়ার অন্য দেশগুলো যে ভাবে পরিকাঠামোসহ আধুনিকতা নিয়ে এগিয়েছে সেটা আমরা করতে পারিনি আজও। বার বার আমার মনে প্রশ্ন জাগে, ওরা এগোয় আমরা পারি না কেন? কত দিন আর বিশ্বকাপে অন্য দলের পতাকা রাস্তায় লাগিয়ে আনন্দে মাতব, অন্য দেশের তারকাদের ছবি নিয়ে নাচানাচি করব।
আমি দু’বার সরকার ও ফেডারেশনের পর্যবেক্ষক হয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি এই জলের সদস্যরা চূড়ান্ত অপেশাদার। বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করে ছেড়ে দিয়ে এসেছি পদ। আজ পর্যন্ত ফেডারেশন এমন কোনও রূপরেখা তৈরি করতে পারেনি যা থেকে মনে হতে পারে ভারত বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখছে। বলুন তো সুনীল ছেত্রী, গুরপ্রীত সিংহ সাঁধুর মতো দু’একজনকে বাদ দিলে দেশে ভাল ফুটবলার কোথায়। জে লিগ চালু করে জাপান বিশ্বকাপ খেলে ফেলল। আমরা আই লিগ বা আই এস এল করে সেটা পারছি কোথায়? গলদটা ঠিক কোথায়? এটা কি কখনও ভেবে দেখেছেন ফেডারেশন কর্তারা? তাঁদের তো নিচু স্তর থেকে ফুটবলার তুলে আনার সঠিক পরিকল্পনাই নেই। নর্টন দ্য মাতোসের মতো বিদেশি কোচ এনে তাঁর হাতে যুব দলের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে দায় সারেন কর্তারা। এতে কোনও লাভ নেই। এখনও সময় আছে। সুনীলদের সাফল্যের পরম্পরা ধরে রেখে আগামী বিশ্বকাপগুলো খেলার জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা করুক ফেডারেশন। না হলে সারা জীবন অন্যদের পতাকা নিয়েই আমাদের আনন্দ করে যেতে হবে।