কোথাও প্রার্থনা, কোথাও নীরব স্মরণ। ওয়েম্বলি থেকে আলিয়া়ঞ্জ এরিনা, আইফেল টাওয়ার থেকে ক্লাব স্টেডিয়াম, চাপেকোয়েনসেকে সবুজে শ্রদ্ধা বিশ্বের।-টুইটার
ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ৩৬ ঘণ্টা। কিন্তু শোকের আবহ কাটছে না বিশ্ব জুড়ে।
কলম্বিয়ার মেডেলিন পাহাড়ে ব্রাজিলের ফুটবল ক্লাব চাপেকোয়েনসের পুরো ফুটবল দল-সহ ৭৫ জনের মৃত্যুর পর গোটা দুনিয়াই আপাতত ব্যস্ত শোকের ধাক্কা সামলাতে। ফুটবল জগৎ তো বটেই এমনকি ফুটবলের সঙ্গে যাঁরা জড়িত নন তাঁরাও সামিল এই শোক মিছিলে। বুধবার সকালেই শোকার্ত জনতার ঢল নেমেছিল চাপেকোয়েনসে ক্লাবের সামনে। মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রয়াতদের জন্য শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন কয়েক হাজার ফুটবলপ্রেমী।
পেলে-মারাদোনা থেকে মেসি-নেইমার-রোনাল্ডোরা তো আছেনই। এমনকি গোটা বিশ্বে কখনও যাঁরা ফুটবলে পা ছুঁইয়ে দেখেননি তাঁরাও বিমান দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত চাপেকোয়েনসে ক্লাব এবং নিহত ফুটবলারদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগ নিয়েছেন। কোপা সুদেমেরিকানার ফাইনালে কলম্বিয়ার যে ক্লাবের বিরুদ্ধে চাপেকোয়েনসের মাঠে নামার কথা ছিল সেই আটলেটিকো নাসিওনাল ক্লাবের কর্তারা বোধহয় প্রয়াতদের শ্রদ্ধা জানানোর সবচেয়ে বড় উদ্যোগটা নিয়ে ফেলেছেন। কোপা সুদেমেরিকানার ট্রফি মরণোত্তর ভাবে চাপেকোয়েনসে ক্লাবকেই দেওয়ার জন্য তারা সওয়াল করেছেন টুর্নামেন্টের আয়োজকদের কাছে।
লাতিন আমেরিকার সর্বোচ্চ ফুটবল নিয়ামক সংস্থা কনমেবল কর্তাদের কাছে এক বিবৃতিতে তাঁদের আবেদন, ‘‘আমাদের ফুটবলার ভাইয়েরা যে ভাবে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তাঁর শোক সামলানো কঠিন। আমাদের মতোই গোটা ফুটবল বিশ্ব আজ কাঁদছে। এই অবস্থায় আমাদের ফুটবলার-ভাইদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বিজয়ী দলের ট্রফিটাই আমরা চাপেকোয়েনসে ক্লাবকে দিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করছি।’’
এমনকি গ্রেমিও, কোরিন্থিয়ান্সের মতো ব্রাজিলের প্রথম সারির বেশ কিছু ক্লাব এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার পর চাপেকোয়েনসে ক্লাবকে নিখরচায় খেলোয়াড় ধার দেওয়ার সিদ্ধান্ত যেমন নিয়েছে, তেমনই ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনসের কাছে তারা আগামী তিন বছর ঘরোয়া লিগে চাপেকোয়েনসের জন্য অবনমন তুলে দেওয়ার জন্য জোরালো সওয়াল করেছে ইতিমধ্যেই।
এরই মাঝে গোটা ঘটনার পূর্নাঙ্গ তদন্ত শুরু করে দিয়েছে ব্রাজিল ও কলম্বিয়ার প্রশাসন। বিমানের দু’টি ব্ল্যাক বক্সই হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। আর তা দিয়েই শুরু হয়েছে তদন্ত প্রক্রিয়ার কাজ। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনার আর কোনও সূত্র খুঁজে পেতে কলম্বিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীও কাজ করছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। অভিশপ্ত বিমানটি যে উড়ান সংস্থার ছিল বলিভিয়ার সেই সংস্থা এবং ব্রিটেনের বিমান-প্রযুক্তিবিদরাও হাত লাগিয়েছেন এই তদন্ত প্রক্রিয়ায়।
বিমানটি যেখানে ভেঙে পড়েছিল তাঁর আশপাশের মানুষের ঘোর এখনও কাটেনি। এখনও আতঙ্কের রেশ তাঁদের চোখেমুখে। এদেরই একজন ন্যান্সি মুনোজ ও তাঁর স্বামী ফাবিয়ান। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তাঁরা বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ির একটু উপর দিয়ে উড়ে গিয়েছিল বিমানটি। তার পরেই বিস্ফোরণের আওয়াজ প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর সেনাবাহিনীর উপর গ্রেনেড হামলা করেছে। কিন্তু তার পরেই একের পর এক রেসকিউ ভ্যান আসতে থাকায় বুঝতে পারি বড়সড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’
টিমের নয় ফুটবলার জায়গা পাননি ফাইনালের টিমে। তাই প্রথম দিকে তাঁদের মনোকষ্ট ছিল। এই ন’জন হলেন আলেজান্দ্রো মার্তিনুচ্চিও, নেনেম, ডেমার্সন, মার্সেলো বোয়েক, আন্দ্রেই হিয়োরান, নিভাল্ডো, মোজেস এবং রাফায়েল লিমা। কিন্তু দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই ক্লাবের ড্রেসিংরুমে সতীর্থদের শান্তির জন্য দিন রাত প্রার্থনা করছেন তাঁরা।
এদের মধ্যে বোয়েক তাঁর ৩২তম জন্মদিন পালনের জন্য দলের সঙ্গে যেতে পারেননি। মার্তিনুচ্চিও বাদ গিয়েছিলেন চোটের জন্য। আর্জেন্তিনীয় এই ফুটবলার তাঁর দেশের লা রেড রেডিওকে এক সাক্ষাৎকারে কাঁদতে কাঁদতে জানিয়েছেন, ‘‘চোটের জন্য প্রথম দল থেকে ছিটকে যাওয়ার পর খুবই খারাপ লেগেছিল। কিন্তু যা ঘটল তা আরও বেশি দুঃখের। সর্বশক্তিমানের কাছে প্রয়াত টিমমেটদের শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি।’’