তাতাল কুম্বলের ফোন আর দুর্ভেদ্য পূজারা

পার্থিবকে ছাপিয়ে ঋদ্ধির সিদ্ধি

সোমবার সেঞ্চুরির পরে প্রথম যে ফোনটা পেয়েছিলেন, সেটা ভারতীয় দলের কোচ অনিল কুম্বলের। অল্প কথার লোকটি যা বোঝান, তাতে এটাই স্পষ্ট যে কোনও পটেল, ওঝা বা পন্থ নন, তিনিই ভারতীয় দলের ‘দ্য কিপার’। এই এক ফোনেই কি ডাবল সেঞ্চুরির রসদটা পেয়ে গেলেন ঋদ্ধিমান সাহা?

Advertisement

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৪:১৯
Share:

সোমবার সেঞ্চুরির পরে প্রথম যে ফোনটা পেয়েছিলেন, সেটা ভারতীয় দলের কোচ অনিল কুম্বলের। অল্প কথার লোকটি যা বোঝান, তাতে এটাই স্পষ্ট যে কোনও পটেল, ওঝা বা পন্থ নন, তিনিই ভারতীয় দলের ‘দ্য কিপার’। এই এক ফোনেই কি ডাবল সেঞ্চুরির রসদটা পেয়ে গেলেন ঋদ্ধিমান সাহা?

Advertisement

অন্য কেউ হলে হয়তো উত্তরটা ‘হ্যাঁ’ হতো। জাতীয় দলের বস যখন বলছেন, তুমিই সেরা, তখন সেটাই সবচেয়ে বড় মোটিভেশন হওয়া উচিত। কিন্তু ঋদ্ধিমান সাহা যে অন্য ধাতুতে গড়া। তিনি কৃতিত্ব দিচ্ছেন তাঁর উল্টোদিকে কঠোর বাস্তবের রক্তমাংসের মানুষটাকেও। তিনি চেতেশ্বর পূজারা। এমনই ভাবলেশহীন, যে ভারতীয় কোচ অভিনন্দন জানালে তিনি ‘থ্যাঙ্ক ইউ স্যর’-এর বেশি কিছু বলতে পারেননি।

মঙ্গলবার তাঁর প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি (২০৩ ন.আ.) করে ইরানি কাপে অবশিষ্ট ভারতকে জেতানোর পর অনেক বড় বড় নামের কাছ থেকে আসা টেক্সট বা হোয়াটস্যাপ মেসেজ তাঁর মোবাইলে ঢুকে বসে থাকলেও ঋদ্ধির সে সবে মন নেই। পার্থিবকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়ে যে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে গ্লাভসটাও তাঁর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিলেন, তাতেও না। বরং পরের অ্যাসাইনমেন্ট মুস্তাক আলি ট্রফি নিয়ে বেশি চিন্তা।

Advertisement

ক্রিজেও এমনই বরফশীতল তিনি। ১১৬ নট আউট থেকে ঋদ্ধির সঙ্গে ৩১৬ রানের পার্টনারশিপ গ়ড়া পূজারাই ম্যাচের পর বলেন সে কথা। ‘‘আমি তো এক দিকটা ধরে খেলব বলেই ঠিক করে রেখেছিলাম। যখন বুঝলাম, আমার পার্টনারও আমার মতোই জেতার মানসিকতা নিয়ে নেমেছে, তখন আর কোনও চিন্তা ছিল না।’’

এ দিকে ঋদ্ধি? তিনি বলছেন, ‘‘আমিও নিশ্চিত ছিলাম যে, পূজারাকে ওরা আউট করতে পারবে না। আমি তাই অনেকটা চাপমুক্ত হয়েই ব্যাট করছিলাম। কাল যখন দুশোর পার্টনারশিপ পেরিয়ে যায় আমাদের, তখনই বুঝি জয় আসছে। শুধু শেষ সকালটা দেখে খেলতে হবে আমাদের।’’

কিন্তু কোথায় ঠান্ডা তিনি? এ তো রীতিমতো শীতল আগ্রাসন। আগের ইনিংসে কোনও রান না পাওয়া ঋদ্ধি এই ইনিংসে ঠিক করেই নেমেছিলেন, বোলারদের বেশি মাথায় চড়তে দেবেন না। সেই মতোই একটু এগিয়ে এসে স্টান্স নিয়ে ব্যাট করতে শুরু করেন। বলেন, ‘‘প্রথম ইনিংসে সমানে আমাদের পায়ের সামনে বল করে করে উইকেট পেয়েছিল ওরা। সেকেন্ড ইনিংসে ঠিক করেছিলাম আর সামনে বল ফেলতে দেব না। একটু এগিয়ে গিয়ে ব্যাট করছিলাম। সামনে যে বলগুলো পাচ্ছিলাম সেগুলো মারছিলাম। যার ফলে ওদের লাইন-লেংথ নড়বড়ে হয়ে যায়। তাতে আমাদেরই সুবিধা হয়।’’

এটা সেই ২০১২-র ফেব্রুয়ারিতে দলীপ ট্রফির ফাইনালে পূর্বাঞ্চলকে জেতানো ঋদ্ধির ১৭০-এর ইনিংসের রিপ্লে যেন। এ বারের মতো সে বারও ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন তিনি। নিজেই বললেন, ‘‘চার-পাঁচ বছর আগে দলীপ ফাইনালে ১৭০ করেছিলাম। সে বারও এই স্টাইলেই একই স্ট্র্যাটেজিতেই ব্যাট করেছিলাম। সেটা মনে করেই এই ইনিংসটা খেললাম।’’

পূজারা যখন কোনও বল নিশ্চিত না হয়ে ব্যাটে ঠেকাচ্ছিলেন না, তখন কিন্তু ঋদ্ধি সেই পথে পা বাড়াননি। এটাই ছিল স্ট্র্যাটেজি। বললেন, ‘‘পূজারা রিস্ক নেবে না বলেই ঠিক করেছিল। আমি কিন্তু অনেকগুলো শট ঝুঁকি নিয়েই মেরেছি। সে রকমই ঠিক করেছিলাম আমরা। আসলে আমি প্রতিটা বলে আলাদা করে ফোকাস করি। ফোকাসটা ঠিক থাকলে যে ব্যাটিংটা ঠিকঠাক করা যায়, এটাই মানি আমি। এটা ভেবেই আমি ওকে বলি, আমি চালাচ্ছি। তুই ধরে খেল।’’ মোট ২৬টা চার ও ছ’টা ছয় হাঁকান ঋদ্ধিমান। ২০৩ করেন ২৭২ বলে। এখানেই তো তাঁর শীতল আগ্রাসনের প্রমাণ লুকিয়ে রয়েছে।

এত দিন ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিকে নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। তাঁর ব্যাটিংই তাঁকে পার্থিব পটেল, ঋষভ পন্থদের প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে, বলছিলেন অনেকে। এ বার সবাইকে জবাব দিয়ে ঋদ্ধি বললেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, নিজের ব্যাটিং টেকনিকে আলাদা কোনও পরিবর্তন আনিনি আমি। অ্যাপ্রোচটা শুধু চেঞ্জ করেছি। ওই যে বললাম একটু এগিয়ে স্টান্স নিয়ে ব্যাট করলাম দ্বিতীয় ইনিংসে। চেঞ্জ বলতে এটাই। তা ছাড়া একবার ভাল ব্যাটিং করতে শুরু করলে মানসিকতাটা এমনিতেই কঠিন হয়ে যায়। ছন্দ চলে আসে।’’

উঠতি ব্যাটসম্যানদের তাঁর পরামর্শ, ‘‘মাথায় বেশি চিন্তাভাবনা না রেখে বল বাই বল খেলাই ভাল।’’ বীরেন্দ্র সহবাগ যেমন বলতেন, ২৪-এ দাঁড়িয়ে যে বলটাতে ছয় মারবেন, তিনশোর মুখে দাঁড়িয়েও সেটাতে ছয়ই মারবেন। ঋদ্ধিও কি সেই পথেই এগোচ্ছেন? ভারতীয় টেস্ট উইকেটকিপার বলছেন, ‘‘কথাগুলো বীরু পাজির মতো শুনতে লাগতে পারে। কিন্তু আমার স্টাইলটা অন্য রকম। প্রতিটা বলে ফোকাস করে খেলো।’’

এটাই ঋদ্ধিমান সাহার ব্যাটিং-দর্শন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন