Wriddhiman Saha

লেগসাইডে ঝাঁপিয়ে দুরন্ত ক্যাচ, সুপার সাব হয়েও সুপারম্যান ঋদ্ধিমান

কিংবদন্তি উইকেটকিপার সৈয়দ কিরমানিও মুগ্ধ ঋদ্ধির ফুটওয়ার্কে।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৫৯
Share:

দুরন্ত: সাইনির বলে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওয়েডের ক্যাচ নিচ্ছেন ঋদ্ধি। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে পরিবর্ত হিসেবে নেমে তিনি নেন চারটি ক্যাচ। গেটি ইমেজেস।

ঋষভ পন্থ চোট পাওয়ার পর থেকে উইকেটের পিছনে দস্তানা হাতে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ঋদ্ধিমান সাহা। পরিবর্ত কিপার হিসেবে নেমে দুরন্ত ক্ষিপ্রতায় মার্নাস লাবুশেনের ক্যাচ ধরে আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে শিলিগুড়ির 'পাপালি'। লেগসাইডে ক্যাচ নিয়ে ফের প্রমাণ করে দিলেন, কেন তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা উইকেটকিপার।

Advertisement

সাধারণত কিপার হিসেবে লেগসাইডের ক্যাচ নেওয়া অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু ঋদ্ধিকে 'সুপারম্যান' তকমা দেওয়া হয় লেগসাইডে ঝাঁপিয়ে দুরন্ত সব ক্যাচ নেওয়ার জন্যেই। কারণ, যে কোনও কিপারের কাছেই লেগসাইড 'ব্লাইন্ড স্পট'। ব্যাটসম্যানের পায়ের আড়াল থেকে বল দেখা কঠিন। তাই এ ধরনের ক্যাচ নেওয়া মানেই শ্রেষ্ঠত্বের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া।

কী করে এ ধরনের ক্যাচ এত সহজে লুফে নেন ঋদ্ধি? ছোটবেলায় তাঁর বাবা প্রশান্ত সাহা গোলকিপিংয়ের তালিম দিতেন ঋদ্ধিকে। কখনও গোলরিপার হতে বাধ্য না করলেও প্রশান্তবাবু চাইতেন, ঋদ্ধি যেন সুস্থ ও স্বাভাবিক খেলোয়াড় হতে পারেন। ঋদ্ধির বাবা কখনওই জোর করতেন না ফুটবলার হওয়ার জন্য। বলেছিলেন, “যা-ই করিস, মন দিয়ে করবি।” ঋদ্ধি বেছে নেন ক্রিকেটকেই।

Advertisement

শিলিগুড়িতেই কোচ জয়ন্ত ভৌমিকের কাছে তালিম শুরু হয় ঋদ্ধির। অনূর্ধ্ব-১৩ বিভাগে খেলার আগেই জয়ন্তবাবুর কাছে উইকেটকিপিংয়ের হাতেখড়ি তাঁর। শুরু থেকেই জয়ন্তবাবু জোর দিয়েছেন ঋদ্ধির ফুটওয়ার্ক ও গ্রিপিংয়ে। জয়ন্তবাবু ফোনে বলছিলেন, “একাগ্রতা ও দৃঢ়তাই ছিল ঋদ্ধির মূল অস্ত্র। ময়দানে ওকে রোবট হিসেবে চিনত সবাই। কখনও চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকত না। ওর ফুটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ড্রিলের সাহায্যে।” যোগ করেন, “প্রত্যেক কিপারকেই আড়াআড়ি নড়াচড়া শিখতে হয়। মাঠে এসেই গ্লাভস হাতে নেমে পড়ত পাপালি। অফস্টাম্পের বাইরে থেকে লেগস্টাম্পের বাইরে আড়াআড়ি ধাপ ফেলে দ্রুত এগোনোর চেষ্টা করত। সেই প্রস্তুতি এখনও নেয় ও। তাই পেসারদের ক্ষেত্রে লেগসাইডের বলে পৌঁছতে সমস্যা হয় না ওর। অনায়াসেই পৌঁছে যায় বলের কাছে।”

সামনে ব্যাটসম্যান দাঁড় করিয়েও ঋদ্ধিকে অনুশীলন করাতেন ছোটবেলার কোচ। বলছিলেন, “ব্যাটসম্যান দাঁড় করিয়ে একাধিক বার লেগস্টাম্পে বল ছোড়া হত। যাতে ব্যাটসম্যানের পা কোথায় রয়েছে, তা আন্দাজ করতে পেরে লেগস্টাম্পে ঝাঁপিয়ে বল ধরা যায়।”

কিংবদন্তি উইকেটকিপার সৈয়দ কিরমানিও মুগ্ধ ঋদ্ধির ফুটওয়ার্কে। বলছিলেন, “বিশ্বের অন্যতম সেরা কিপার ঋদ্ধি। কারণ, বলের কাছে যাওয়ার সময় ওকে ঝাঁপাতে হয় না। ফুটওয়ার্কের সাহায্যে অনায়াসে চলে যায় বলের কাছে।” স্পিনারদের ক্ষেত্রে বল ধরার সময় আলাদা প্রস্তুতি নিতেন ঋদ্ধি। ময়দানে কাস্টমসে খেলার পরেই সই করেন শ্যামবাজারে। স্পিনারদের বিরুদ্ধে কী ভাবে কিপার হিসেবে সফল হওয়া যায়, তার টোটকা ময়দানেই পান ঋদ্ধি। শ্যামবাজারের তৎকালীন কোচ স্বপন সরকারের কথায়, “যে দড়ি দিয়ে নেট টাঙানো হত, সেই দড়িতে বল ছুড়তে বলত পাপালি। দড়িতে লেগে সামান্য দিক পরিবর্তন করত বল। স্পিনারদের বিরুদ্ধে কিপিং করার সময় এ ধরনের ক্যাচ আসবেই। তাই নেটের দড়িতে বল ছুড়ে তালিম নিত ঋদ্ধি।” অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্পিনারের বলে স্কোয়ার কাট অথবা ড্রাইভ করতে গিয়ে এ ধরনের আচমকা ক্যাচ আসে। তা সম্পূর্ণ করার জন্যেই এ ধরনের প্র্যাক্টিস করতেন তিনি।

মোহনবাগানে ঋদ্ধি যোগ দেওয়ার পরে আব্দুল মোনায়েম তাঁকে বহু অনুশীলন করিয়েছেন। মোনবাগানে খেলানোর জন্য শিলিগুড়ি থেকে ঋদ্ধিকে তুলে আনেন তিনি। বলছিলেন, “দু'দিকে দু'টো ছোট টুল রাখা হত। সেই টুলের উপর দিয়ে আড়াআড়ি ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেওয়ার অনুশীলন করানো হত ওকে। শ্যামবাজারের হয়ে খেলার সময়ই ঋদ্ধিকে পছন্দ হয়েছিল। মোহনবাগানে খেলানোর জন্য তাই ঝাঁপিয়ে পড়ি আমরা।” যোগ করেন, “ঋদ্ধি যতটাই শান্ত কিপার, ততটাই আগ্রাসী ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত ছিল। অনেক ধরনের অভিনব শট খেলতে দেখা যেত ওকে। বড় ক্লাবের হয়ে যা কেউ সাহসই পেত না।”

বাংলার রঞ্জি ট্রফিজয়ী অধিনায়ক ও প্রাক্তন নির্বাচক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ঋদ্ধিকে প্রথম খেলতে দেখি। ওর কোচ জয়ন্তকে বলেছিলাম, দু'বছরের মধ্যে বাংলার হয়ে খেলবে ও। আমিই বাংলার কিপার হিসেবে বেছে নিই ওকে। ওর গ্রিপিং, মনঃসংযোগ ও আত্মবিশ্বাস দেখেই বুঝেছিলাম, লম্বা রেসের ঘোড়া ও।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন