কাটা হয়েছে প্রচুর গাছ

বিশ্বকাপের ফাইনাল হবে ধরে নিয়েই প্রস্তুত হচ্ছে যুবভারতী

যুব বিশ্বকাপ শুরু হতে বাকি আট মাস। কলকাতা-সহ দেশে ছ’টি স্টেডিয়ামে আধুনিকীকরণের কাজ চলছে যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে। তবে সবার নজর যুবভারতীর দিকে। কারণ এখানেই টুনার্মেন্টের ফাইনাল করতে চাইছে ফিফা। সেটা হলে কলকাতার মুকুটে উঠবে আরও একটা নতুন পালক। ৬ অক্টোবর শুরু অনূর্ধ্ব ১৭ এই টুনার্মেন্ট। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মাঠ তুলে দিতে হবে ফিফার হাতে। কিন্তু এত কাজ বাকি এবং তা সঠিক সময়ে শেষ হবে কি না, তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে সর্বত্র। আর সেটাই খতিয়ে দেখতে গিয়ে যা নজরে পড়ল আনন্দবাজারের। যুব বিশ্বকাপ শুরু হতে বাকি আট মাস। কলকাতা-সহ দেশে ছ’টি স্টেডিয়ামে আধুনিকীকরণের কাজ চলছে যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে। তবে সবার নজর যুবভারতীর দিকে।

Advertisement

তানিয়া রায়

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৩
Share:

যুববিশ্বকাপের কর্মযজ্ঞ যুবভারতীতে। -শঙ্কর নাগ দাস

প্র্যাকটিসের মাঠ

Advertisement

প্র্যাকটিসের জন্য মাঠ তৈরি। তবে এখনও সেই মাঠের ঘাস বল গড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। চলছে নিয়মিত ঘাসে জল দেওয়ার পালা। সঙ্গে বিশেষ ভাবে তার রক্ষণাবেক্ষণও করা হচ্ছে। যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঠিক মতো ঘাস তৈরি হয়ে যায়। ফ্লাড লাইটের কাজ অবশ্য হয়ে গিয়েছে।

স্টেডিয়ামে সবুজ কার্পেট ঘাস

Advertisement

কৃত্রিম ঘাসের বদলে বহু দিন আগেই বারমুডা ঘাস লাগানো হয়েছিল। এরপর যুবভারতীতে আই লিগ এবং আইএসএলের ম্যাচ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সে সময় ঘাস ঠিক মতো তৈরি হয়নি বলে খেলার পর দেখা যেত চাপ চাপ ঘাস ফুটবলারদের বুটের স্পাইকের ঘর্ষণে উঠে আসছে। হলুদও হয়ে গিয়েছিল কিছু জায়গা। তবে বহু দিন এখানে ম্যাচ হয়নি। স্বভাবতই মার্কিন মুলুক থেকে আনা সেই বারমুডা ঘাস ঠিক মতো বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে। বিশ্বকাপ সংগঠনে স্টেডিয়ামের বহিরঙ্গের সজ্জার চেয়েও ফিফার কাছে গুরুত্ব পায় মাঠের টার্ফ।

গ্যালারি হবে আকাশি

পুরো গ্যালারি জুড়ে আকাশি রংয়ের বাকেট চেয়ার বসানো হচ্ছে। নতুন চেয়ার বসানোর পর আসন সংখ্যা দাঁড়াবে আশি হাজার বা তার কিছু বেশি। বিভিন্ন দেশের রাজা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা বিশ্ব সেরা ফুটবলারদের জন্য আলাদা করে তৈরি হচ্ছে প্রেসিডেন্সিয়াল বক্স। যেখানে পাঁচ তারা হোটেলের মতো সুযোগসুবিধে থাকবে, থাকবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। তবে গ্যালারির অর্ধেকের বেশি কাজ বাকি রয়েছে।

কাজ চলছে জোরকদমে।

চোখ ধাঁধাঁনো ড্রেসিংরুম

আইএসএলের সময়ই বিশ্বমানের ড্রেসিংরুম তৈরি হয়েছিল যুবভারতীতে। যা দেখে নাকি সন্তুষ্ট হয়েছিলেন ফিফার প্রতিনিধিরা। কিন্তু সেই ড্রেসিংরুমকে আরও আধুনিক করে তোলা হচ্ছে। সংগঠন কর্তাদের দাবি, নতুন তৈরি হওয়া ড্রেসিংরুম নাকি বিশ্বের বড় বড় স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তুলনায় চলে আসবে। তবে ড্রেসিংরুমের কাজ এখন মাঝপর্বে। তেমনই ড্রেসিংরুম সংলগ্ন এলাকারও অনেক কাজ বাকি। কিছু জায়গা ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। মেঝের কাজ পুরোটাই প্রায় বাকি। টানেলের ভিতর যাওয়ার উপায় নেই। কারণ সেখানে ইট, কাঠ, পাথরে ভর্তি। ভাঙাচোরা।

বাড়ছে গেট সংখ্যা

আগে যুবভারতীর গেট সংখ্যা ছিল সাত। সেটা বেড়ে অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের জন্য হচ্ছে ন’টি। শুধু গেটের সংখ্যাই বাড়ছে না। ঢোকার গেটগুলো সাজানো হবে। কোনও গেটে অ্যাথলিট, কোনও গেটে আবার ফুটবল সংক্রান্ত মূর্তি বা বিভিন্ন খেলার মোটিভের কোলাজ থাকবে। এত দিন যেমন প্রধান গেটের সামনে বড় ফুটবল রাখা ছিল, ঠিক সে রকমই সব গেটেই এ বার কিছু না কিছু নিদর্শন থাকছে। স্টেডিয়ামের ভিতরে থাকা বিবেকানন্দের মূর্তিটিও স্টেডিয়ামের বাইরে প্রধান গেটের সামনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সে সব কাজ এখনও শুরুই হয়নি। তা হলে শেষ কবে হবে?

শুধু সাংবাদিকদের জন্য

পুরানো যুবভারতীতে যেখানে কাচের ভিভিআইপি বক্স ছিল, ঠিক তার উপরে তৈরি করা হচ্ছে পেল্লাই সাইজের প্রেসবক্স। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা ম্যাচ কভার করতে আসছেন। ফিফার নির্দেশ মতো অন্তত ২০০জন বসার আসন থাকছে সেখানে। সঙ্গে শৌচালয় থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক সমস্ত সুবিধেই থাকার কথা সেই প্রেসবক্সে। তবে নতুন প্রেসবক্সের কাজ এখনও সে অর্থে শুরু হয়নি।

নীল নয়, লাল ট্র্যাক

অ্যাথলেটিক্সের জন্য লাল ট্র্যাক তুলে ফেলা হয়েছে। শোনা যাচ্ছিল নীল রংয়ের ট্র্যাক বসানো হবে। কিন্তু তার বদল ঘটছে। কারণ নীল ট্র্যাক নাকি বেশি দিন টিঁকবে না। খুঁড়ে ফেলা হয়েছে গোলাকার ট্র্যাকের অংশটা। সেখানে কালো সুড়কি ফেলা হয়ে গিয়েছে। সেখানে দুরমুশ করার কাজ চলছে। লাগবে আরও কিছু সময়। এর উপরই বসবে নতুন ট্র্যাক।

কাজ শেষ হবে তো?

ফিফার নির্দেশে স্টেডিয়ামে প্রচুর পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন অনেক ঘর তৈরি হয়েছে। চলছে রাস্তা চওড়া করার কাজ। স্টেডিয়ামের প্রধান গেট দিয়ে ঢোকার সময় দেখা যাবে, বড় বড় গাছগুলো আর নেই। যুবভারতীর আধুনিকীকরণের জন্য বহু গাছই কেটে ফেলতে হয়েছে। যে কারণে স্টেডিয়াম চত্ত্বর এখন আর সবুজ নয়। কংক্রিটের। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার ডেটলাইন দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। প্রশ্ন হল, ফিফার ডেডলাইন মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে তো? সংগঠকরা জানাচ্ছেন নির্দিষ্ট সময়েই কাজ শেষ হবেই। দেখার, তারা সফল হন কি না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন