জাহিরের মস্তিষ্ক ভারতীয় ক্রিকেটের কাজে লাগাক বোর্ড

মাস দুয়েক আগে জাহির খানের সঙ্গে মুম্বইয়ে দেখা হয়েছিল। তখন বলেছিল, এ বার রঞ্জি ট্রফিতে খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার জাহিরের অবসরের খবরটা পেয়ে বুঝলাম, ওর শরীর আর রঞ্জির ধকলটাও নিতে পারছে না।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪৬
Share:

মাস দুয়েক আগে জাহির খানের সঙ্গে মুম্বইয়ে দেখা হয়েছিল। তখন বলেছিল, এ বার রঞ্জি ট্রফিতে খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার জাহিরের অবসরের খবরটা পেয়ে বুঝলাম, ওর শরীর আর রঞ্জির ধকলটাও নিতে পারছে না।

Advertisement

আসলে বয়সের সঙ্গে আমাদের চোট-আঘাত থেকে সেরে ওঠার প্রক্রিয়ার মেয়াদও বাড়তে থাকে। ২২-২৩ বছরের একটা ছেলে যত সহজে সেরে উঠতে পারে, ৩৪-৩৫ বয়সে সেই একই চোট কাটিয়ে উঠতে তার চেয়ে বেশি সময় লাগে। এবং পুরো পদ্ধতিটা অনেক বেশি বেদনাদায়কও হয়। ৩৭ বছরের জাহিরের ক্ষেত্রে সম্ভবত সেটাই হচ্ছিল।

মনে পড়ছে বারো বছর আগের কথা। ২০০৩-এর অস্ট্রেলিয়া সফরে যে বার আমি ভারতীয় দলে ছিলাম, সে বারই ওর প্রথম হ্যামস্ট্রিং চোট লাগে। আমার যতদূর মনে পড়ে, সেই শুরু। তার পর থেকে এতবার ওর শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে যে ওর মতো কঠিন মনের ছেলেও এই চোটের কাছে হার মানতে বাধ্য হল।

Advertisement

এত চোট-আঘাত সামলেও কিন্তু আমাদের প্রজন্মের সেরা ফাস্ট বোলার হয়ে উঠেছিল জাহির। ভারতের সেরা একাদশেও ও জায়গা পেয়ে যাবে। সেটা শুধু বোলিং দক্ষতার জন্যই নয়, ক্রিকেট মস্তিষ্কটা ওর অসাধারণ। ছোট থেকে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলে যে ও উঠে এসেছে, তা কিন্তু নয়। মুম্বইয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসে খেলতে খেলতে জহুরির নজরে পড়ে যায়। সেখান থেকেই ওর ভারতীয় দলের যাত্রা শুরু। ও কার্যত ‘সেলফ মেড প্রোডাক্ট’। ছোট থেকে কোনও কোচের হাতে তৈরি নয়। নিজেই নিজেকে তৈরি করেছে। নিজেই নিজেকে আরও উন্নত করে করেছে। যেটা করতে করতে নিজের বোলিং নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছে জাক। একটার পর একটা পরীক্ষা চালিয়েছে। নিজেকে আরও কার্যকর তোলার চ্যালেঞ্জটা ও বরাবর নিজেই নিয়েছে। সে ভাবে কারও উপর নির্ভর করেনি। খুব ধারালো বুদ্ধি ছিল বলে নিজের ভুল ধরা, ব্যাটসম্যানের শক্তি-দুর্বলতা বোঝা, ম্যাচের পরিস্থিতি বোঝার কাজগুলো দ্রুত করতে পারত।

ভারতীয় পেস বোলিংয়ের নতুন একটা দিক খুলে দিয়েছিল জাহির। নাকল স্লোয়ারের কনসেপ্ট তৈরি, রিভার্স সুইং-কে নতুন ভাবে ব্যবহার— এ সবই শুরু করেছিল। এই যে এফর্ট বল নিয়ে আলোচনা করি আমরা, এটাও ওরই ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসেছিল যে, ব্যাটসম্যানকে সেট আপ বলগুলো ১৩০-১৩৫-এর গতিতে দিতে দিতে হঠাৎ করে একটা বল ১৪০-১৪৫ গতিতে স্টাম্পের ভিতর ঢুকিয়ে দাও। ব্যাটসম্যান হতচকিত হয়ে তাতে আউট হয়ে যেতে পারে। রাউন্ড দ্য উইকেট বল করতে জাহিরের আগে ক’জন বাঁ হাতি পেসারকে আমরা দেখেছি? এ সবই জাহিরের ভাবনার ফসল।

জাহিরের শরীরটা ভারতীয় ক্রিকেটকে হয়তো আর কিছু দিতে পারবে না। কিন্তু ওর এই ধারালো ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কটা আমাদের দেশের ক্রিকেটে কাজে লাগতেই পারে। কোনও দ্বিধা না করে এখনই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড জাহিরকে ভারতীয় দলের বোলিং কোচ হওয়ার প্রস্তাব দিক না। যে ভাবে রাহুল দ্রাবিড়, রবি শাস্ত্রীদের কাজে লাগানো হচ্ছে, সে ভাবেই জাহিরকেও কাজে লাগানো হোক। এতে ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতি ছাড়া কিছু হবে বলে মনে হয় না। এমন উর্বর যার ক্রিকেট মস্তিষ্ক, সে ভাল বোলিং কোচ হতে পারবে না, এটা আমি বিশ্বাস করি না।

যখন ও ভারতীয় দলে নিয়মিত ছিল, তখনই দলের জুনিয়ররা জাহিরের কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছে। এ বার সময় এসেছে নতুন প্রজন্মের বোলারদের ওর কাছ থেকে অনেক কিছু পাওয়ার। বিসিসিআই সেই ব্যবস্থাটা করে দিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন