মহমেডান-১ (ইমরান) : ইস্টবেঙ্গল-০

অর্ণবের দস্তানায় আটক সাহসী কোলাসো

এত দিন মুখে বলতেন। রবিবার করেও দেখালেন! কলকাতা লিগ যে তাঁর কাছে নিছক একটা প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট, সেটা বঙ্গ-ফুটবলকে বুঝিয়েই ছাড়লেন আর্মান্দো কোলাসো। কিন্তু লাল-হলুদের গোয়ান কোচ কি আদৌ জানেন, তাঁর এই ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাব ইস্টবেঙ্গলের মানসিকতার কতটা ক্ষতি করতে পারে? মহমেডান ম্যাচ কোলাসোর কাছে ‘ডার্বি’ নয়। কিন্তু সেই ডার্বিই এ দিন সাদা-কালো ব্রিগেড জিতল পাক্কা ছ’বছর পরে!

Advertisement

প্রীতম সাহা

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৪৮
Share:

অর্ণবের অনেক সেভের একটা। রবিবার যুবভারতীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

এত দিন মুখে বলতেন। রবিবার করেও দেখালেন! কলকাতা লিগ যে তাঁর কাছে নিছক একটা প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট, সেটা বঙ্গ-ফুটবলকে বুঝিয়েই ছাড়লেন আর্মান্দো কোলাসো।

Advertisement

কিন্তু লাল-হলুদের গোয়ান কোচ কি আদৌ জানেন, তাঁর এই ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাব ইস্টবেঙ্গলের মানসিকতার কতটা ক্ষতি করতে পারে?

মহমেডান ম্যাচ কোলাসোর কাছে ‘ডার্বি’ নয়। কিন্তু সেই ডার্বিই এ দিন সাদা-কালো ব্রিগেড জিতল পাক্কা ছ’বছর পরে! সত্তরের দশকে টানা ছ’বার লিগ জিতে যে ইতিহাস গড়েছিল ইস্টবেঙ্গল, সেই রেকর্ডকে ছোঁয়ার স্বপ্ন প্রথম ম্যাচেই হেরে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে গত চার বারের কলকাতা লিগজয়ীর। তবু কোলাসো অনড়। ম্যাচের পরে ফের বলে গেলেন, “এই টুর্নামেন্টে হার-জিত আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি এ রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরের ম্যাচগুলোতেও চালিয়ে যাব। কলকাতা লিগ নিয়ে আমি ভাবছি না। ট্রফিটা পেলে বোনাস। না পেলেও দুঃখ নেই।”

Advertisement

কোলাসোর মতো লাল-হলুদ কর্তাদের কাছেও কি গুরুত্বহীন কলকাতা লিগের ট্রফি? তা হলে ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার এ দিন ম্যাচের পর কী বললেন শুনুন। “ইউথ ডেভলপমেন্টকে আমরা বেশি জোর দিচ্ছি। সে কারণেই এ বার টিএফএ আর আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে প্রচুর ফুটবলার দলে নিয়েছি। তবে কলকাতা লিগের গুরুত্ব আমাদের কাছে মোটেও কম নয়। কোচকে সেটা বলেও দিয়েছি। ট্রফির বিনিময়ে কোনও কিছু নয়।”

একটা জায়গায় অবশ্য কোলাসোর প্রশংসা করতেই হবে। বিশ্ব জুড়ে যখন ইউথ ডেভলপমেন্ট নিয়ে তোড়জোড়, তখন ইস্টবেঙ্গল কোচই সমর্থক আর ট্রফি ভিত্তিক একটা বড় ক্লাবে সাহস দেখাতে পারলেন প্রথম দলে আনকোরা পাঁচ-ছ’জন তরুণ ফুটবলার রাখার। তাও কিনা মরসুমের প্রথম বড় ম্যাচেই। যদিও এর পিছনে হরমনজ্যোৎ, বলজিৎদের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলারদের সঠিক সময়ে রেজিষ্ট্রেশন না করাতে পারাও অন্যতম ফ্যাক্টর। তবে ‘দাদা’দের অনুপস্থিতিতে দীপক তিরকে, জিতেন মুর্মু, মানস সরকাররা যে খুব খারাপ খেলেছেন সেটা বলা যাবে না। ম্যাচের শুরুতেই র‌্যান্টির জন্য দু’টো থ্রু পাস যে দক্ষতায় বাড়ালেন জিতেন, তা দেখে আইএম বিজয়নের কথা মনে পড়ে গেল। ইস্টবেঙ্গলের নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার পুরো ফিট থাকলে, পনেরো মিনিটের মধ্যেই দু’গোল খেয়ে যায় মহমেডান।

ঘরোয়া ফুটবলে ‘ভ্যানিশিং স্প্রে’ প্রথম পা রাখল রবিবার। কলকাতা লিগে। ইংরেজ ফুটবলেও। কমিউনিটি শিল্ডে

যে ম্যাচে আর্সেনাল ৩-০ ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস ও রয়টার্স

রবিবার যুবভারতীতে মূলত লড়াইটা ছিল দু’দলের তরুণ-ব্রিগেডের মধ্যে। যেখানে সাদা-কালো জার্সিধারীরা উনিশ-বিশের পার্থক্যে টেক্কা দিয়ে গেল আর্মান্দোর দলকে। ইস্টবেঙ্গল ব্যাকফুটে চলে যায় ২৪ মিনিটে হুগলির জাঙ্গিপাড়ার ছেলে ইমরান খানের দুরন্ত গোলের পরে। অর্ণব-সফর-সৌমিকদের শক্ত গাঁট ছিঁড়ে ইমরানের জোরাল শট মেহতাবের গায়ে লেগে গোলে ঢোকে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, তার পরে পঁয়ষট্টি মিনিট সময় পেয়েও গোলের দরজা খুলতে পারল না কেন ইস্টবেঙ্গল? চারটে কারণে। এক) জিতেন-দীপকদের অনভিজ্ঞতা। দুই) র‌্যান্টির চোট। তিন) মহমেডান কোচ ফুজাতোপের ডিফেন্সিভ স্ট্র্যাটেজি। চার) সাদা-কালো গোলকিপার অর্ণব দাসশর্মা। নব্বই মিনিটে অন্তত সাতটা অব্যর্থ সেভ করলেন। ম্যাচের সেরা অর্ণবের প্রশংসায় খোদ র‌্যান্টিকেও বলতে শোনা গেল, “মহমেডান গোলকিপারের কাছেই হেরে গেলাম। ও যে সব বল সেভ করল, অসাধারণ!” মহমেডান গোলকিপারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ খেলা দেখতে আসা ব্যারেটোও। আর হবেন না-ই বা কেন? অর্ণবকে দেখলে ব্রাজিল বিশ্বকাপে মেক্সিকো গোলকিপার ওচোয়া-র কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল! টিমের মধ্যে গোলা-বারুদ না থাকুক, গোলপোস্টের নীচে যিনি একাই একশো। ছ’বছর আগে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বিতে গোল খাওয়ার পরে লাল-হলুদ সমর্থকদের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছিল অর্ণবকে। মহমেডান জার্সি গায়ে লাল-হলুদকে যেন তার জবাব দিলেন অর্ণব।

গোটা ম্যাচে একটা গোল ছাড়া মহমেডানের আর তেমন আক্রমণ ছিল না। এমনকী লাল-হলুদ গোলকিপার অভ্র মণ্ডলকে দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় নড়াচড়াই করতে দেখা যায়নি। সেখানে ইস্টবেঙ্গলের কিষাণ বাগের ‘গোল’ বাতিল হয় অফসাইডের জন্য। র‌্যান্টির হেড পোস্টে লাগে। তবে মহমেডানের নতুন বিদেশি স্টপার ওগোচুকুর প্রশংসা করতে হবে। যে ভাবে ইস্টবেঙ্গলের একের পর এক আক্রমণ ঠান্ডা মাথায় সামলালেন, আর র‌্যান্টির একটা শট গোললাইন সেভ করলেন!

টানা বারো ম্যাচ পরে ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর আনন্দে মাঠে ভিকট্রি ল্যাপ দিতে দেখা গেল মহমেডানকে। ক্যাপ্টেন হিসেবে নিজের প্রথম ম্যাচ হেরে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়লেন লাল-হলুদ অধিনায়ক অর্ণব। ম্যাচ শেষের টুকরো টুকরো ছবিগুলো দেখলে গুলিয়ে যেতে পারে, লিগের উদ্বোধনী ম্যাচ হল, না লিগের সমাপ্তি অনুষ্ঠান! ৯০ লক্ষ টাকার টিম নিয়ে ১৪ কোটির টিমকে হারানো অবশ্যই কৃতিত্বের। তবে মিনি ডার্বি-র আগে প্র্যাকটিসে কোলাসোর আত্মতুষ্টির ফল কী হল, সেটা আর অজানা নয়। ফুজাতোপে দেখবেন, আপনার দলও যেন সেই ভুল না করে বসে!

মহমেডান: অর্ণব,ডানেইলা, সুনীল, ওগোচুকু, মালসাম (গৌর), সন্তোষ (স্যামুয়েল), ইরফান, ফুলচাঁদ, রাজীব (সুখদেব), বসন্ত, ইমরান।

ইস্টবেঙ্গল: অভ্র, অভিষেক, সৌমিক, অর্ণব, সফর, মেহতাব, সুখবিন্দর (মানস), দীপক (কিষাণ), রফিক, র‌্যান্টি, জিতেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন