নতুন দায়িত্ব। নতুন চ্যালেঞ্জ। মঙ্গলবার নিজের বাড়িতে পরের মরসুমের বাগান-টিডি। ছবি: উৎপল সরকার
টেবিলের উপর সযত্ন সাজানো লাল-হলুদ উত্তরীয়। মশালের লোগো দেওয়া বক্সে সোনার রঙের বুট আর বল। ইস্টবেঙ্গল থেকে দেওয়া স্মারক। ছড়ানো-ছিটানো আরও স্মারক, ট্রফি। রাজ্যের প্রাক্তন ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি। কিন্তু নিউ আলিপুরের বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী বসার ঘরটার কোথাও সবুজ-মেরুনের ছিটেফোঁটা নেই। যারা কিনা মঙ্গলবারই টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ঘোষণা করল সুভাষ ভৌমিক-কে। মোহনবাগান টেকনিক্যাল কমিটির সিদ্ধান্ত ঘোষণার দশ মিনিটের মধ্যে আনন্দবাজারের মুখোমুখি সবুজ-মেরুনের নতুন টিডি।
প্রশ্ন: মোহনবাগানে চার বছর ট্রফি নেই। বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফেললেন কি?
সুভাষ: চ্যালেঞ্জিং চ্যালেঞ্জ নিলাম বলতে পারেন। আমি কোনও দিনই পিছিয়ে যাওয়ার বান্দা নই। যেখানে কোচিং করেছি সৎ ভাবে চেষ্টা করেছি। মোহনবাগানেও করব। কোচিং আমার পেশা, প্যাশনও। (হেসে) তবে একটু নার্ভাস লাগছে, সেটা অস্বীকার করব না।
প্র: যে ক্লাবকে দু’বার জাতীয় লিগ দিয়েছিলেন, আসিয়ান জিতিয়েছেন, সেই ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাব ফেরালেন কেন?
সুভাষ: ইস্টবেঙ্গল তো প্রস্তাব দেয়নি। ফলে ওদের কোচিং করার সম্ভাবনাও তৈরি হয়নি। তবে এটা বলছি, ইস্টবেঙ্গল সম্পর্কে রাগে-অভিমানে যে সব খারাপ কথা বলেছি সেটা বলা অবিবেচকের মতো কাজ হয়েছিল।
প্র: বলেছিলেন ‘‘আমার মৃত্যুর পর মরদেহ ইস্টবেঙ্গল মাঠে যাবে না।” এই মন্তব্য প্রত্যাহার করছেন?
সুভাষ: (একেবারে স্বাভাবিক গলায়) ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক স্বাভাবিক হয়েছে। আর কোনও বিতর্কে জড়াতে চাই না। কে কী বলল তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমি এখন নিজেকে বদলে ফেলেছি।
প্র: বাগান কর্তা, সদস্য-সমর্থকরা ট্রফি না পেতে-পেতে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। ট্রফি জয়ের ভয়ঙ্কর প্রত্যাশার চাপ নিয়ে তাই কাজ করতে হবে আপনাকে। মানছেন?
সুভাষ: ১৯৭০-৭৫ এই সময়েও তো মোহনবাগানের খুব খারাপ সময় গিয়েছিল। তার পর কোচ হয়ে এসে প্রদীপদা কিন্তু আমাদের নিয়ে ছিয়াত্তরে সফল হয়েছিলেন। পরের চার বছর অনেক ট্রফি জিতিয়েছিলেন মোহনবাগানকে। তাই ঠিক করেছি যাঁর কাছে আমার কোচিং লাইসেন্স রাখা আছে, সেই গুরুর কাছে টিপস নিতে যাব। প্রদীপদার কাছে জানতে চাইব আপনি সেই সময় কী ভাবে প্রস্তুত হয়েছিলেন।
প্র: বাগানে এ বার নির্বাচনের বছর। নানা ঘটনা ঘটতে পারে। আরও নানা সমস্যা রয়েছে। এই অবস্থায় ট্রফি-খরা কাটাতে পারবেন?
সুভাষ: ট্রফি না পেলে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটে না। সেটা তাই করতেই হবে। কলকাতা লিগ থেকে আই লিগ সব আমার টার্গেট। দরকারে দু’টো দল রাখব। আজ থেকে মোহনবাগান আমার ধ্যান-জ্ঞান সব। জীবনে প্রচুর ট্রফি জিতেছি। তাও বলব--- কোচ নয়, ট্রফি দেয় ফুটবলাররা। ট্রফি পাওয়ার জন্য বড় পাথর, ছোট নুড়ি সব সরাব। ট্রফির জন্য চেষ্টার ত্রুটি করব না।
প্র: বর্তমান মোহনবাগান টিমের ক’জনকে রাখবেন?
সুভাষ: হোমওয়ার্ক হয়ে গিয়েছে। মাথার কম্পিউটরে সব আছে। দু’-এক দিনের মধ্যে টেকনিক্যাল কমিটি এবং কর্তাদের সঙ্গে বসব। সব ঠিক হবে আলোচনা করে। যেমন প্রদীপদা করতেন ছিয়াত্তরে। মান্নাদাদের সঙ্গে কথা বলতেন। মোহনবাগানে এটাই কালচার। তবে এখনই বলছি বর্তমান মোহনবাগান টিমের ষাট শতাংশ ফুটবলার এ বারও থাকবে।
প্র: পুরোনো ক্লাব চার্চিল থেকে ক’জনকে আনছেন?
সুভাষ: আমার ঝুলিতে প্রচুর নাম আছে। শুধু চার্চিল কেন, অন্য ক্লাবের ফুটবলারদেরও আমার দেখা। ওদের সঙ্গে কথা বলে রেখেছি। ১ মে শিলচরে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে মোহনবাগান। সন্দীপ-ডেনসনদেরও দেখব। তার পরে সিদ্ধান্ত।
প্র: নতুন বিদেশিও বাছতে হবে। এ দেশে খেলা বিদেশিই নিতে চান, না বাইরে থেকে নতুন কেউ?
সুভাষ: চার্চিলে আমি বিলাল আর আক্রমকে এনেছিলাম। ওরা সফল হয়েছিল। এ বারও সেই পথে যাব। পয়লা জুন থেকে অনুশীলন শুরু করব। ক্লাবকে বলেছি। হাতে অনেক সময় আছে। প্রি-কন্ট্রাক্ট করে ট্রায়ালে ডাকব বিদেশিদের। শুধু সিডি দেখে বাছব না কাউকে। যেটা করেছে বেঙ্গালুরু। তিরিশ জনের ট্রায়াল থেকে তিন জনকে নিয়েছে। সারা বিশ্বে এখন সেটাই হয়।
প্র: তা হলে কি আক্রম আসছেন?
সুভাষ: আক্রম কুয়েতে খুব ভাল খেলছে। তবে আক্রমের থেকেও ভাল ফুটবলার আছে আমার হাতে।
প্র: ২০০৯এ ইস্টবেঙ্গলে সেবাস্তিয়ান, বার্গার, দায়ুবকে এনেও ডুবেছিলেন! এ বার যে সফল হবেন গ্যারান্টি কোথায়?
সুভাষ: তখন প্রি-কন্ট্রাক্ট ব্যাপারটা ছিল না। দেখার সুযোগ ছিল না। সরাসরি চুক্তি করে এনে ভুল করেছিলাম। তা ছাড়া তখন ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের সবার সাহায্য পাইনি। যেটা মোহনবাগানে এ বার পাব। সবাই মিলে কাজ করতে হবে। তবেই সাফল্য আসবে।
প্র: বিদায়ী কোচ করিম বেঞ্চারিফা দাবি করেছেন, তিনি ভাল একঝাঁক তরুণ ফুটবলার তুলে দিয়ে যাচ্ছেন আপনার হাতে!
সুভাষ: কাগজে পড়েছি। আমি মনে করি ট্রেভর মর্গ্যানের চেয়ে করিম ভাল কোচ। তবে এটাও বলছি, কাতসুমি বা পঙ্কজ মৌলাকে কিন্তু করিম ঠিক পজিশনে খেলায়নি।
প্র: আপনি টিডি। সাপোর্টিং স্টাফ নিয়ে কর্তাদের সঙ্গে কথা হল?
সুভাষ: এখনও কথা হয়নি। দু’জন কোচ হলে ভাল হয়। সঙ্গে এক জন কিপার কোচ। এক জন স্ট্রেংথ ট্রেনার মাস্ট। দেখি ক্লাব কী বলে? তবে আপাতত আমার মাথায় শুধুই টিমটা তৈরি করা।
প্র: অনেকের মতে কোচ হিসাবে আপনার যাবতীয় সাফল্য ইস্টবেঙ্গল আর চার্চিলে। বাগানে সাফল্য নেই।
সুভাষ: প্রশ্ন তোলার অধিকার সবার আছে। আবার আমারও উত্তর না দেওয়ার অধিকার আছে। তবু বলছি, মোহনবাগানে কোচিং করলাম কোথায়? একানব্বইয়ে যখন দায়িত্ব পেয়েছিলাম তখন কিছুই জানতাম না। তার দশ বছর পর সাড়ে তিন মাস কোচিং করিয়ে আই লিগে অবনমন বাঁচিয়েছিলাম। বারো থেকে মনে হয় ছয় না পাঁচে তুলেছিলাম। এ বার চেষ্টা করব মোহনবাগানের ট্রফি ক্যাবিনেটে কিছু ট্রফি রাখতে।