স্পনসরের অভাবে অন্ধকারে আই লিগ ক্লাব

আইএসএলে টাকার থলি নিয়ে হাজির কর্পোরেট জগৎ

দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার অর্থের টুর্নামেন্ট আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েও পরে দল তুলে দিয়েছে মুম্বইয়ের মহীন্দ্রা ইউনাইটেড, পঞ্জাবের জেসিটি-র মতো বড় কোম্পানি। কোটি কোটি টাকা ঢেলেও লাভের মুখ না দেখাই এর অন্যতম কারণ। স্পনসর এবং বিপণনের অভাবে দক্ষিণের এক সময়ের সাড়া ফেলে দেওয়া ক্লাব টাইটেনিয়াম, আইটিআই এসবিটি বা কোচিএফসি উঠে গিয়েছে বা টিমটিম করে জ্বলছে। সারা দেশের কোটি কোটি সমর্থকের ক্লাব কলকাতার মহমেডানের কোনও স্পনসর নেই।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৩৫
Share:

কলকাতার আইএসএল দলের চার মালিক। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সঞ্জীব গোয়েন্কা, হর্ষ নেওটিয়া ও উৎসব পারেখ। সোমবার প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে। ছবি: উৎপল সরকার

দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার অর্থের টুর্নামেন্ট আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েও পরে দল তুলে দিয়েছে মুম্বইয়ের মহীন্দ্রা ইউনাইটেড, পঞ্জাবের জেসিটি-র মতো বড় কোম্পানি। কোটি কোটি টাকা ঢেলেও লাভের মুখ না দেখাই এর অন্যতম কারণ।

Advertisement

স্পনসর এবং বিপণনের অভাবে দক্ষিণের এক সময়ের সাড়া ফেলে দেওয়া ক্লাব টাইটেনিয়াম, আইটিআই এসবিটি বা কোচিএফসি উঠে গিয়েছে বা টিমটিম করে জ্বলছে। সারা দেশের কোটি কোটি সমর্থকের ক্লাব কলকাতার মহমেডানের কোনও স্পনসর নেই। আই লিগের গত বারের চার নম্বর ক্লাব ইউনাইটেড স্পোর্টসের কর্তারা কর্পোরেট কোম্পানির দোরে দোরে ঘুরেও সাহায্য পাননি।

দেশের অনেক ফুটবল ক্লাবের যখন এই দশা, তখন ফুটবল-আইপি এলের দল কিনতে কার্যত টাকার থলি নিয়ে হাজির কর্পোরেট জগত, লগ্নি বিশেষজ্ঞ, নামী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সবাই। তিনটি টিম কিনতে টাকা ঢেলেছে টিভি নেটওয়ার্ক বা মিডিয়া। আইকন ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা বলিউড তারকা রণবীর কপূর, সলমন খান, জন আব্রাহামরা টিমের সঙ্গে থাকলেও তাঁরা আসলে লিগ পার্টনারদের মুখ। বিপণনের ব্র্যান্ড। এদের পিছনের আসল চাবিকাঠি কর্পোরেট জগতের হাতেই।

Advertisement

আইএমজি-আর আগামী সেপ্টেম্বরে আট দলের যে ইন্ডিয়ান সুুপার লিগ করতে চলেছে তার পরিকাঠামো নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা আছে। সেপ্টেম্বরে ফিফার ‘উইন্ডো’ খোলা থাকে না। ফলে বর্তমান তারকা বিদেশি ফুটবলার পাওয়া যাবে না। সদ্য প্রাক্তন বা বুড়ো বিশ্বকাপার ধরে আনতে হবে। প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার তুলে আনার পরিকাঠামো নেই কয়েকটা লিগ পার্টনারের। সে সব নিয়ে আলোচনা চলছে ফুটবলমহলে।

তা সত্ত্বেও আইএসএল দু’-তিন বছরের মধ্যে লাভজনক হবে ধরে নিয়ে টাকা বিনিয়োগ করেছেন বেণুগোপাল ধুত, হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জীব গোয়েন্কা, শ্রীনিবাস ডেম্পো, দত্তরাজ সালগাওকরের মতো শিল্পপতি বা সান গ্রুপ, ডেন গ্রুপের মতো কোম্পানি।

মুম্বইতে ফোন করে জানা গেল আইএসএলের টিম কিনতে আগ্রহী ক্রেতার সংখ্যা ছিল আইপিএলের তুলনায় বেশি। আইপিএলের প্রথম বছর আট দলের জন্য দরপত্র জমা পড়েছিল ১১টি। সেখানে আইএসএলের প্রথম বছরে আট দলের জন্য দরপত্র জমা পড়েছে ১৬। লগ্নির ক্ষেত্রে অবশ্য ক্রিকেট অনেক এগিয়ে। আইপিএলে টিমগুলোর গড় বিনিয়োগ ছিল ৩৬.১৮ কোটি। বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫৮.১৭ কোটি। সেখানে ফুটবলের ক্ষেত্রে গড় বিনিয়োগ হয়েছে ১৫ কোটি। তবে ক্রিকেটের দেশ জুড়ে যা জনপ্রিয়তা তাতে ফুটবলের এই বিনিয়োগ চমকপ্রদ। ব্যাডমিন্টন বা হকি লিগের ক্লাব কিনতে মালিকদের প্রতি বছর ব্যয় হচ্ছে দুই থেকে চার কোটি টাকা।

আইএসএলে টিম কেনা হয়ে গেলেও দল গড়তে শেষ পর্যন্ত কত টাকা ব্যয় করতে হবে সে সম্পর্কে এখনও ধারণা নেই লিগ পার্টনারদের। সোমবার দক্ষিণ কলকাতার এক হোটেলে সরকারি ভাবে আত্মপ্রকাশ করেন কলকাতা দলের পাঁচ মালিকের চার জন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জীব গোয়েন্কা এবং উৎসব পারেখ। স্পেনের ক্লাব আটলেটিকো মাদ্রিদের প্রতিনিধি ছিলেন না। দু’-তিন সপ্তাহের মধ্যেই তাঁদের শহরে আসার কথা। সাংবাদিক সম্মেলনে কলকাতা টিমের নাম জানানো হয়নি। বলা হয় সপ্তাহখানেক পরে ঘোষণা করা হবে। তবে দল গড়তে কত টাকা বিনিয়োগ হবে তা গোপন রাখতে চেয়েছেন তাঁরা। হর্ষ এবং সঞ্জীব দু’জনেই বলে দেন, এটা একেবারেই নিজস্ব ব্যাপার। তবে নানা সাহায্য চেয়ে রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা। শিল্পপতি সঞ্জীব বলেন, “কলকাতার প্রতি ভালবাসা থেকেই আইএসএলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। আমার সব কিছুই তো কলকাতা কেন্দ্রিক।” আর এক শিল্পপতি হর্ষ বলে দেন, “প্রথম এক-দু’বছর হয়তো লাভ হবে না। তবে আমরা আশাবাদী, বিনিয়োগ করা টাকা উঠে আসবে।” সৌরভ বলেন, “আটলেটিকো মাদ্রিদের মতো বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবের পরিকাঠামোর সাহায্য নিয়ে আমরা ব্যালান্সড টিম গড়ব।”

আইএমজি-আর সূত্রের খবর, এক-একটা টিমকে সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। ফুটবলার কেনা থেকে বিপণন, পরিকাঠামো তৈরিতে। মুকেশ অম্বানীর কোম্পানির লোকজনের ধারণা, ঠিক মতো বিক্রি করতে পারলে তৃতীয় বছর থেকেই লিগ পার্টনাররা লাভের মুখ দেখবেন। পুরো টুর্নামেন্টের জন্য সাতশো কোটি টাকা ঢালছে আইএমজি-আর। সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে আড়াই ম্যাসের টুর্নামেন্টের জন্য। আইএমজি-আরের এক মুখপাত্র বললেন, “ক্রিকেটের মতো আইএসএলের টিমগুলোকে আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজি বলছি না। ওরা আমাদের লিগ পার্টনার। টুর্নামেন্টের সব সিদ্ধান্ত হবে কর্পোরেট পার্টনারদের সঙ্গে কথা বলে।”

প্রথমে জোট গড়ে বিরোধিতা করলেও এখন আইএসএল থেকে তাদেরও লাভ হবে মনে করছে আই লিগের বেশির ভাগ ক্লাব। ডেম্পো, সালগাওকর, লাজং তো যুক্তই হয়ে গিয়েছে টুর্নামেন্টে। অন্য টিমগুলোও ঠিক করেছে সুপার লিগের কোনও ক্লাব চাইলে নিজেদের চুক্তিবদ্ধ ফুটবলার লিয়েনে বিক্রি করবে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন