৬ ফুট ৮ ইঞ্চি। ছবি উত্পল সরকার
গোল পোস্টের নীচে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি যে, মনে হচ্ছিল ওঁকে টপকে কি গোল করা সম্ভব!
মাথা প্রায় ক্রস বার ছুঁই ছুঁই। গোল লাইনে দাঁড়িয়ে দু’দিকে হাত বাড়িয়ে একটু ঝুঁকলেই পোস্ট ধরে ফেলছেন। আর তাঁর বল গ্রিপ করা দেখে মনে হচ্ছিল যেন ক্রিকেট বল ধরছেন। চেটোটা এতটাই বড়।
বিশ্বের সবথেকে লম্বা গোলকিপার ক্রিস্তভ ফান হাউত এখন কলকাতায়। আজ রবিবার আটলেটিকো দে কলকাতার বিরুদ্ধে তিনি দাঁড়াবেন মূর্তিমান বিভীষিকা হয়ে! এতটাই যে, দু’ম্যাচে দু’গোল করা কলকাতা টিমের ‘নায়ক’ ফিকরু তেফেরাও শুক্রবার রাতে টিম হোটেলের লবিতে দিল্লি ডায়নামোসের কিপারকে দেখে চমকে উঠেছিলেন। মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল, ‘ওহ্।’
ছ’ফুট দশ ইঞ্চির বেলজিয়ান কিপারের পাশে সব কিছুই যেন লিলিপুট। আর তিনি যেন গালিভার। দেল পিয়েরোর টিমের কিপার যখন যুবভারতীতে অনুশীলন করছিলেন তখন দেখা গেল, সব ক্যামেরা ইতালিয়ান বিশ্বকাপারের পাশাপাশি ফান হাউতের দিকেও তাক করে আছে।
দিল্লির কিপারের এই অবাক উচ্চতা তাঁর কাছে সমস্যার, না কি প্লাস পয়েন্ট? স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়ার সময় হাউত বললেন, “আমার উচ্চতা প্লাস পয়েন্ট বলেই মনে করি। নিচু হয়ে বল ধরার জন্য ফিটনেস ভাল থাকতে হয়। যেটা আমার আছে। তাই কোনও সমস্যা নেই। উপরের বল যে ভাবে বাঁচাব, নীচের বলও একই ভাবে সেভ করব।”
কলকাতার কিপার শুভাশিস রায়চৌধুরিও প্রায় ছ’ফুট লম্বা। আইএসএলে পরপর দু’ম্যাচে দারুণ খেলছেন। সেই শুভাশিস কি হাউতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে চলেছেন? আত্মবিশ্বাসী বাংলার কিপার অবশ্য বললেন, “বেশি লম্বা হওয়াটা অনেক সময় কিপারদের ফিটনেসে সমস্যা তৈরি করে। তবে হাউতের সম্পর্কে যা খবর পেয়েছি, ওর সে রকম কোনও সমস্যা নেই। তবে মনে করি না, ওর সঙ্গে আমার কোনও লড়াই হবে। ওকে ফিকরুদের সামলাতে হবে। আমাকে দেল পিয়েরোকে।”
গার্সিয়া আর ফিকরু জুটি এখন বিপক্ষ দলের ত্রাস। তাঁদের আটকাতে নানা অঙ্ক কষতে হচ্ছে বিপক্ষের কোচকে। কিন্তু শনিবার দিল্লির প্র্যাকটিসের পর হাউত কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন আটলেটিকোর স্প্যানিশ-ইথিওপীয় জুটিকে। বাসে ওঠার আগে বলেন, “ফিকরু, গাসির্য়ার খেলা দেখেছি। আমাকে টপকে গোল করাটা সহজ হবে না। ওদের আটকানোর জন্য তৈরি।”
দিল্লির চতুর কোচ হার্ম ফান ভেল্ডহোভেন এ দিন নিজের স্ট্র্যাটেজির তাস দেখাননি। স্টেডিয়ামে আটলেটিকোর স্ট্রাইকার ফিকরু এবং সহকারী কোচ ব্যারেটোর উপস্থিতির কথা কানে যেতেই বেলজিয়ান কোচ শুধুমাত্র স্ট্রেচিং, ফিটনেস ট্রেনিং এবং শু্যটিং প্র্যাকটিস করালেন। ভেল্ডহোভেন অবশ্য আটলেটিকোর দু’টি ম্যাচেই দেখেছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে বলছিলেন, “কলকাতা দারুণ খেলছে। তবে আমাদের দলও জেতার জন্য তৈরি। আমরা তিন পয়েন্ট নিয়েই ফিরতে চাই।”
দিল্লির প্রথম ম্যাচে বিরতির সাত মিনিট আগে দেল পিয়েরোকে নামিয়েছিলেন ভেল্ডহোভেন। কলকাতার বিরুদ্ধে কি শুরু থেকে খেলতে দেখা যাবে তাঁকে? দেল পিয়েরো নিজেকে ফিট বললেও বেলজিয়ান কোচ অবশ্য দলের মার্কি ফুটবলারকে নিয়ে রহস্যই রেখে দিলেন। হয়তো বিপক্ষদের ধন্ধে রাখতেই।
কিপিং-এ উচ্চতা একটা বড় ফ্যাক্টর। তবে খুব ভাল ফিটনেস লেভেলও দরকার। নীচের বলগুলো ধরার সময় নয়তো সমস্যা হতে পারে। একজন লম্বা কিপার উপরের বল যত ভাল বাঁচাবে, নীচের বল ধরার সময় ততটাই সমস্যায় পড়বে যদি ফিট না থাকে।
ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়
খুব বেশি লম্বা হলে রিফ্লেক্স কম হয়। শরীরের কাছাকাছি গ্রাউন্ড শট অথবা হাঁটুর নীচে বল ধরতে সমস্যা হয়। খুব সামনে থেকে যদি কোনও শট নেওয়া হয়, সেটা বাঁচানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে লম্বা হলেও সেই কিপার যদি একশো শতাংশ ফিট থাকে, তা হলে সমস্যা এড়ানো যায়।
অতনু ভট্টাচার্য