সান্তি কাজোরলা ও প্যাকো আলকাজারের জোড়া গোলে লুক্সেমবুর্গকে ৪-০ হারিয়ে আগামী বছরের ইউরাো কাপের মূলপর্বে জায়গা পাকা করে ফেলল স্পেন। তবে প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং গত দু’বারের ইউরো চ্যাম্পিয়নদের বিজয়োৎসব কিছুটা ফিকে হয়ে যায় দুই তারকা দাভিদ সিলভা এবং আলভারো মোরাতা ম্যাচে চোট পাওয়ায়।
একই সঙ্গে জাতীয় দলের সমর্থকদের মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা বিভেদ নতুন করে মাথা চাড়া দেওয়ায় ক্রমশ অস্বস্তি বাড়ছে ভিসেন্তে দেল বস্কির টিমের। লুক্সেমবুর্গ ম্যাচেও ঘরের মাঠে আরও এক বার সমর্থকদের কটুক্তি উড়ে এল বার্সেলোনার তারকা ডিফেন্ডার জেরার পিকের দিকে।
তবে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক থেকে ছয়ে নেমে যাওয়া টিম অবশেষে আগামী বছরের ইউরো কাপে জায়গা পাকা করে ফেলতে পারায় স্বস্তি ঝরছে দেল বস্কির গলায়। স্পেন কোচ বলেছেন, ‘‘ইউরোর মূলপর্বে উঠে গিয়ে এখন নিশ্চিন্ত লাগছে। আমরা জানতাম, প্রতিপক্ষ লুক্সেমবুর্গ হলেও আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা ছিল না। ম্যাচটা জেতাই ছিল লক্ষ্য।’’
স্পেনের শুরুটা অবশ্য মসৃণ হয়নি। খেলার দশ মিনিটের মধ্যেই ডান গোড়ালি মচকে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন দাভিদ সিলভা। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির তারকা মিডফিল্ডারের চোট কত গুরুতর সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে জুভেন্তাসের স্ট্রাইকার মোরাতার পায়ের হাড় ভেঙে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি আহত হন লুক্সেমবুর্গের এক ডিফেন্ডার আচমকা তাঁর পায়ের উপর দাঁড়িয়ে পড়ায়। মাঠ থেকে স্ট্রেচারে বের করে নিয়ে যেতে হয় মোরাতাকে। তিনি আপাতত হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এ দিকে, ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে মরসুমের শুরুটা তেমন ভাল করতে না পারলেও মোরাতার বদলি হিসাবে নেমে জোড়া গোল করলেন আলকাজার। প্রথম গোল অবশ্য আসে কাজোর্লার পা থেকে, বিরতির পাঁচ মিনিট আগে। রডরিগেজের শট লুক্সেমবুর্গ গোলকিপার ফিস্ট করলে ফিরতি বলে গোল করেন তিনি।
এটা আবার ছিল জাতীয় জার্সিতে সেস ফাব্রেগাসের নিরানব্বইতম ম্যাচ। দ্বিতীয়ার্ধে সাতষট্টি মিনিটে ফাব্রেগাসের থ্রু পাস থেকেই এল আলকাজারের প্রথম গোল। যাতে ‘লা রোখা’র হয়ে গোল অ্যাসিস্টের নতুন রেকর্ড গড়ে ফেললেন চেলসি মিডফিল্ডার। ২৮টি অ্যাসিস্ট করে ছাপিয়ে গেলেন জাভি হার্নানডেজকে। পরে টিম বাস থেকে নিজের ছবি টুইট করে ফাব্রেগাস লেখেন, ‘‘অসম্ভব গর্ব হচ্ছে। কিপ ইট আপ।’’
আলকাজারের দ্বিতীয় গোল একাশি মিনিটে। সেল্টা ভিগোর ফরোয়ার্ড নোলিতোর পাস বক্সে ধরে ইয়র্দি আলবা পিছনে পাঠালে, সেই বল ট্যাপ করে গোলে পাঠান আলকাজার। তবে এর চার মিনিটের মধ্যেই বক্সের প্রান্তে বল ধরে বিদ্যুৎগতির শটে ম্যাচের সবচেয়ে দর্শনীয় গোলটি করেন কাজোরলা।
সের্জিও র্যামোসের কাঁধে চোট থাকায় কোয়ালিফায়ারে এই প্রথম কোনও রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলার ছাড়াই টিম নামাতে হয়েছিল দেল বস্কিকে। সেটাই সম্ভবত দর্শক অসন্তোষে বাড়তি জ্বালানির কাজ করে। গত বছর বার্সেলোনা ত্রিমুকুট জেতার পর রিয়াল মাদ্রিদকে কটাক্ষ করেছিলেন পিকে। বার্সেলোনা ডিফেন্ডারের ক্ষমা করেননি রায়াল সমর্থকেরা। তাঁরা এতটাই রুষ্ট যে ক্লাব ফুটবলের রাগ উগরে দিচ্ছেন জাতীয় দলের ম্যাচেও। এর আগেও স্পেনের হয়ে নেমে পিকে স্বদেশি দর্শকদের টিটকিরি শুনেছেন। যার পর গোটা টিম এবং দেল বস্কি দর্শকদের কাছে পিকেকে সমর্থন করার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তাতে যে কোনও লাভ হয়নি, সেটা লুক্সেমবুর্গ ম্যাচে প্রমাণ হয়ে গেল। যা নিয়ে কার্জোলা ম্যাচের পর বলেই ফেললেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা অসম্ভব অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে দিয়ে গোটা টিমকে প্রভাবিত করছে। জেরার খুব শক্ত মনের ছেলে। তবু আমরা আশা করব, এমন ঘটনা ভবিষ্যতে আর ঘটবে না।’’
ইউরো কোয়ালিফায়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে এ বার ইউক্রেন যাচ্ছে স্পেন। কিয়েভে তাদের অ্যাওয়ে ম্যাচ সোমবার।