প্রত্যাশিত ভাবেই ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার ডেভিড মোয়েস ছাঁটাই হলেন। ক্লাবের সরকারি ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার লিখে জানানো হয়, ‘ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ঘোষণা করছে যে, ডেভিড মোয়েসকে দলের ম্যানেজার পদে আর রাখা হচ্ছে না।’। কিছুক্ষণের মধ্যেই টুইটে জানানো হয়, ‘চলতি মরসুমের শেষ অবধি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের অন্তর্বর্তীকালীন ম্যানেজার হিসাবে রায়ান গিগসকে নিয়োগ করা হল।’ এই প্রসঙ্গে সর্বশেষ টুইট, “ক্লাব লিখিত ভাবে নথিভুক্ত করছে যে, মোয়েস তাঁর ভূমিকায় যে কঠিন পরিশ্রম, সততা ও সংহতি দেখিয়েছে তাঁর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।’
যদিও ছ’বছরের চুক্তিতে ম্যান ইউ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র দশ মাস পরেই মোয়েসের ছাঁটাই হওয়ার ব্যাপারটা কেবল তিনটে টুইটেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে ম্যান ইউয়ের সর্বনিম্ন পয়েন্ট পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে দিয়ে বিদায় নেওয়া মোয়েসকে যিনি এভার্টনের ম্যানেজারের চাকরি ছাড়িয়ে ম্যান ইউয়ে পছন্দ করে নিয়ে এসেছিলেন, সেই স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসনের নাতিই বলছেন, “ম্যান ইউয়ের মতো হেভিওয়েট ক্লাবের ম্যানেজার হওয়ার যোগ্যতা মোয়েসের নেই।” ফুটবল-বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি ম্যান ইউ সমর্থকের কাছে মোয়েস হয়েছেন ‘দ্য রং ওয়ান’। চেলসি কোচ হোসে মোরিনহোর ‘দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান’ নামের ‘প্যারডি’! সোশ্যাল নেটওয়াকির্ং সাইটে ক্রুদ্ধ পোস্টিং, ‘কী চমৎকার উলটপুরাণ! ২২ এপ্রিল, ২০১৩ ম্যান ইউয়ের ২০তম প্রিমিয়ার লিগ জেতার দিন। আর ২২ এপ্রিল, ২০১৪ ম্যান ইউকে ইপিএলে সাত নম্বরে রেখে মোয়েসের বিদায়-দিন!’
ইংলিশ ফুটবল বিশেষজ্ঞদের কলামে কলামে উঠে আসছে, ম্যান ইউয়ে ফার্গুসনের ২৬ বছরের বহু স্মরণীয় জমানার পরপরই মাত্র দশ মাসের কুখ্যাত মোয়েস জমানার দিনলিপি। কিন্তু একইসঙ্গে তার জন্য ফার্গুসনকেও দায়ী করা হচ্ছে। কী ভাবে তিনি নিজের উত্তরসূরি চিনতে এত বড় ভুল করলেন, ফুটবল-পণ্ডিতরাও যেন বুঝে উঠতে পারছেন না! স্বয়ং ফার্গুসন এ দিনই বলে দিয়েছেন, এর পর ম্যান ইউয়ের পূর্ণ সময়ের নতুন ম্যানেজার ক্লাব ম্যানেজমেন্ট তাঁকে বাছতে বললে, তাঁর উত্তর হবে একটা বড় ‘না’।
তবে ম্যান ইউ মালিক গ্লেজার পরিবার এবং ক্লাবের চিফ এক্সিকিউটিভ এড উডওয়ার্ড আকারে ইঙ্গিতে ইতিমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, পরের মরসুমে নতুন ম্যানেজার হতে চলেছেন নেদারল্যান্ডসের জাতীয় কোচ লুই ফান গাল। যিনি নিজেও এ দিন ব্রিটিশ মিডিয়াকে বলেছেন, “ম্যান ইউ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে আমি দায়িত্ব নিলে বিশ্বকাপের পরে নেব।” আবার শোনা যাচ্ছে, পেপ গুয়ার্দিওলার সঙ্গেও কথা চলছে ম্যান ইউ কর্তাদের। তবে য়ুর্গেন ক্লপ যে ম্যান ইউ কোচ হওয়ার দৌড়ে নেই, তা তিনি নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন। আপাতত গিগস চারটে ম্যাচের জন্য দলের কোচ। প্রিমিয়ার লিগে ওয়েন রুনিদের ২৬ এপ্রিল থেকে ১১ মে-র মধ্যে খেলা বাকি নরউইচ সিটি, সান্ডারল্যান্ড, হাল সিটি (তিনটিই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে) এবং সাউদাম্পটনের (অ্যাওয়ে) সঙ্গে।
মোয়েস ছাঁটাই হওয়া নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া না দিলেও ম্যান ইউয়ের এক সূত্র জানাচ্ছেন, রবিবার গুডিসন পার্কে তাঁর পুরোনো ক্লাব এভার্টনের কাছে ০-২ হারের পরই নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন মোয়েস। স্কাই টিভিতে ওই ম্যাচের ধারাভাষ্যকার, প্রাক্তন লিভারপুল কিংবদন্তি ফুটবলার জেমি কারাঘার মন্তব্য করেন, “ম্যান ইউকে নব্বই মিনিট এত জঘন্য খেলতে জীবনে দেখিনি।” মঙ্গলবার খুব সকালে ক্যারিংটনে গ্লেজার পরিবার এবং সিইও উডওয়ার্ডের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তা সত্ত্বেও সোমবার ক্লাবের অনুশীলনের ছুটির দিন মিডিয়ায় তাঁর ছাঁটাইয়ের জল্পনা তুঙ্গে দেখে মোয়েস না কি ক্ষুব্ধ-হতাশ ছিলেন। স্কটিশ কোচের এখন সান্ত্বনা হতে পারে দু’টো জিনিস।
ম্যান ইউয়েরই প্রাক্তনী গ্যারি নেভিলের মন্তব্য “মোয়েসকে ছাঁটাই করার পদ্ধতিটা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবের ঐতিহ্যের সঙ্গে আদৌ খাপ খাচ্ছে না! ম্যান ইউ দলে এখন বড় অস্ত্রোপচারের দরকার। কেবল ব্যান্ডএইড-এ কাজ হবে না।”
এবং চুক্তির মেয়াদ ফুরানোর অনেক আগেই ক্লাব ছাঁটাই করায় ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১ কোটি পাউন্ডের মোটা চেকের সম্ভাব্য প্রাপ্তি!
ব্যর্থতার পাঁচ কাহন
• মোয়েস স্বয়ং ম্যান ইউয়ের মতো হেভিওয়েট ক্লাবের ম্যানেজার হওয়ার মতো যোগ্যতা মরসুমের কোনও টুর্নামেন্টে দেখাতে পারেননি।
• রিও ফার্দিনান্দ-সহ টিমের পুরোনো ঘোড়ারা চেলসির দায়িত্ব মোরিনহো নেওয়ার পর যখন বর্ষীয়ান জন টেরির ফর্ম সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সেরা, তখন মোয়েসের ম্যান ইউতে ফার্দিনান্দ, ভিদিচরা নিজেদের ফর্মের তলানিতে।
• ক্লাবের সিইও এড উডওয়ার্ড একটা বড় ঝড় একটা ক্লাবে কাঁপুনি ধরায়, দু’টো ঝড় গোটা ক্লাবকে ধসিয়ে দেয়। ক্লাবের সিইও হিসাবে প্রথম মরসুমেই মাঠের বাইরে উডওয়ার্ডের ব্যর্থতা ততটাই, যতটা মাঠের মধ্যে মোয়েসের।
• দলের নতুন মুখ মারুয়ান ফেলাইনি ফিফার ‘সামার উইন্ডো’-এ মোয়েসের পছন্দে কেনা একমাত্র ফুটবলার, বেলজিয়ান মিডফিল্ডার ফেলাইনি সুপার ফ্লপ।
• স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন ইংলিশ ফুটবল ইতিহাসের সবসেরা ম্যানেজার ম্যান ইউয়ে ২৬ বছরের জমানা শেষে নিজের উত্তরসূরি হিসাবে মোয়েসের উপর ভুল আস্থা রেখেছিলেন। ফার্গির নির্বাচন সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত।