বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি কি আজই অস্ট্রেলিয়ার

একগুঁয়েমি ভাল, সঙ্গে স্মার্ট ক্রিকেটটাও দরকার

অস্ট্রেলিয়ার লিড সাড়ে তিনশোর মধ্যে আটকে রাখতে পারলে ভাল। না হলে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি আজই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যাবে। এই লেখাটা যখন আপনারা পড়ছেন, তখন হয়তো মেলবোর্ন টেস্টের শেষ দিনের প্রথম সেশনটা হয়ে গিয়েছে। তবু সোমবার রাতে ম্যাচ রিপোর্টটা লিখতে গিয়ে যা যা মনে হচ্ছে, একটু বলি। মঙ্গলবার ধোনির ভারতের প্রথম কাজই হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস শেষ করে দেওয়া।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৪:৩২
Share:

চ্যালেঞ্জের সামনে টিম ধোনি। ছবি: গেটি ইমেজেস

অস্ট্রেলিয়ার লিড সাড়ে তিনশোর মধ্যে আটকে রাখতে পারলে ভাল। না হলে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি আজই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যাবে।

Advertisement

এই লেখাটা যখন আপনারা পড়ছেন, তখন হয়তো মেলবোর্ন টেস্টের শেষ দিনের প্রথম সেশনটা হয়ে গিয়েছে। তবু সোমবার রাতে ম্যাচ রিপোর্টটা লিখতে গিয়ে যা যা মনে হচ্ছে, একটু বলি। মঙ্গলবার ধোনির ভারতের প্রথম কাজই হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস শেষ করে দেওয়া। বললামই তো, সাড়ে তিনশো বা তার কম রান তাড়া করতে নামলে ভারতের তবু একটা ক্ষীণ আশা আছে। কিন্তু রানটা যদি তার বেশি উঠে যায়, তা হলে আমি আর কোনও আশার আলো দেখছি না। তখন ম্যাচটা পুরোপুরি ভারতের হাত থেকে বেরিয়ে যাবে। ব্যাপারটা তখন কী রকম দাঁড়াবে জানেন? ভারতকে যেন তখন অস্ট্রেলিয়ার কাছে আকুল ভাবে আবেদন জানাতে হবে দয়া করে এ বার ইনিংসটা ডিক্লেয়ার করে দাও। না হলে তো সিরিজটা এখানেই মরে গেল।

অস্ট্রেলিয়া যদি ড্রয়ের জন্য খেলে, তা হলে ওদের দোষ দেওয়ার কিছুই নেই। আর সত্যি বলতে কী, ভারতের যা বোলিং দেখে যাচ্ছি, তাতে ওদের নিয়ে বেশি আশা করাটা বোধহয় ঠিক হবে না। সোমবারের একটা সেশনেই যা ভাল বল করল ইশান্ত শর্মারা। এই সিরিজে ভারতীয় বোলারদের সেরা পারফরম্যান্স। বিশেষ করে ইশান্তের। কিন্তু ওই একটা সেশনে যে সুযোগটা ভারতের হাতে এল, সেটাও তো কাজে লাগানো গেল না। ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথদের আউট করে দেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার উপর যে চাপটা তৈরি করা যেত, সেটাও মাঠেই ফেলে এল ভারত। উল্টে আবার সেই ওভারপিছু অন্তত একটা করে বাউন্ডারি দিয়ে গেল। এক ওভারে ড্রাইভ তো আর এক ওভারে ফ্লিক চার দিকে রান খেয়ে যেতে হল। বোলারদের এই পারফরম্যান্সকে জঘন্য বললেও কম বলা হয়। রায়ান হ্যারিসকে দেখে শিখতে পারে ওরা। এই টেস্টেই দেখলাম, পাঁচ ওভারের একটা স্পেলে তিরিশটা বলের তিরিশটাই একই জায়গায় রেখে গেল হ্যারিস। এই শৃঙ্খলাটা ভারতীয়দের প্রচণ্ড ভাবে দরকার।

Advertisement

এখানে মহম্মদ শামির কথা না বলে পারছি না। ইংল্যান্ড সিরিজে ওকে ঘিরে এত উত্তেজনা তৈরি হল, কিন্তু সেখান থেকে নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা না করে শামি নিজের জায়গাটা একটু একটু করে হারাচ্ছে। ছ’মাস আগেও দেশের এক নম্বর পেস অস্ত্র হওয়ার দিকে এগোচ্ছিল শামি। আর এখন যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখানে টিম থেকে বাদ গেলেও কিছু বলার থাকবে না। মনে হচ্ছে নিজের বোলিং অ্যাকশন কিছুটা পাল্টেছে ও। তাতে লাভ হচ্ছে বলে অবশ্য মনে হল না। আর বল করার সময় স্পষ্ট দেখলাম, হালকা ভুঁড়ি হয়ে গিয়েছে। পেসারের যেখানে টিমের সবচেয়ে ফিট সদস্য হওয়া দরকার, সেখানে শামির এই অবস্থার কোনও যুক্তি পাচ্ছি না। নিজেকে নিয়ে যথেষ্ট খাটছে না ও। বোলিংয়ে শৃঙ্খলা নেই।

মঙ্গলবারের কথায় আসি। ধরা যাক সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি টার্গেট নিয়ে নামল ভারত। ওদের কী ভাবে ব্যাট করা উচিত? অ্যাডিলেডের প্রথম টেস্টে বিরাট কোহলির ভারতের মতো আক্রমণাত্মক? না কি ডিফেন্সিভ? দেখুন, আমার মনে হয় সিরিজ বাঁচিয়ে রাখতে মঙ্গলবার জেতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তেই হবে। আর কোনও বিকল্প নেই। হারানোরও বিশেষ কিছু নেই যখন, তখন মনে হয় কয়েকটা পরীক্ষানিরীক্ষাও করা যায়। যেমন শিখর ধবনকে বলা, যাও আজ তুমি তোমার স্বাভাবিক ক্রিকেটটা খেলো। যেমন লোকেশ রাহুলকে তিন নম্বরে নামানো। বা মুরলী বিজয়ের সঙ্গে ওকে ওপেন করতে পাঠানো। উপরের দিকে ব্যাট করতেই মনে হয় রাহুল বেশি স্বচ্ছন্দ। আমি তো বুঝতে পারছিলাম না ওকে ছ’নম্বরে কেন নামানো হল? ওই জায়গাটার জন্য তো সুরেশ রায়না বসেই আছে।

একটা কথা বারবার মনে হচ্ছে। সাধারণ এই অস্ট্রেলীয় দলটাকে মাথায় চড়তে দিয়ে ভারতই আজ নিজেদের এই কোণায় ঠেলে নিয়ে গিয়েছে। আজ একটা সেশনই তো দেখিয়ে দিল যে, এই অস্ট্রেলিয়া যথেষ্ট ভঙ্গুর। অথচ এরাই এখন সিরিজে ২-০ এগিয়ে। হয়তো আজই সিরিজ পকেটে পুরে নেবে। একটা আফসোসও হচ্ছে। অ্যাডিলেড টেস্টে যদি কোহলি আউট হয়ে যাওয়ার পর ড্রয়ের জন্য খেলত ভারত, তা হলে আজ এই পরিস্থিতিটা থাকত না। তা হলে হয়তো সিরিজের ফয়সালা হত সিডনির স্পিন-সহায়ক, ব্যাটিং-বন্ধু উইকেটে।

ক্রিকেট মাঠে একগুঁয়ে হওয়া ভাল। কিন্তু মাঝে মাঝে স্মার্ট ক্রিকেটটাও খুব দরকার হয়ে পড়ে!

অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ৫৩০

ভারত প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৪৬২-৮)

শামি ক স্মিথ বো জনসন ১২
উমেশ ক হাডিন বো জনসন ০
ইশান্ত নঃআঃ ০
অতিরিক্ত
মোট ৪৬৫
পতন: ৫৫, ১০৮, ১৪৭, ৪০৯, ৪১৫, ৪৩০, ৪৩৪, ৪৬২, ৪৬২।
বোলিং: জনসন ৩০.৫-৬-১৩৫-৩, হ্যারিস ২৬-৭-৭০-৪, হ্যাজলউড ২৫-৬-৭৫-০, ওয়াটসন ১৬-৩-৬৫-১, লিয়ঁ ২৯-৩-১০৮-২, স্মিথ ২-০-১১-০।

অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস

ওয়ার্নার এলবিডব্লিউ অশ্বিন ৪০
রজার্স বো অশ্বিন ৬৯
ওয়াটসন ক ধোনি বো ইশান্ত ১৭
স্মিথ ক রাহানে বো উমেশ ১৪
মার্শ নঃআঃ ৬২
বার্নস ক ধোনি বো ইশান্ত ৯
হাডিন ক ধোনি বো উমেশ ১৩
জনসন ক রাহানে বো শামি ১৫
হ্যারিস নঃআঃ ৮
অতিরিক্ত ১৪
মোট ২৬১-৭
পতন: ৫৭, ৯৮, ১৩১, ১৬৪, ১৭৬, ২০২, ২৩৪।
বোলিং: উমেশ ১৪-১-৭৩-২, শামি ২০-২-৭৫-১, ইশান্ত ১৯-৪-৪৯-২, অশ্বিন ২২-২-৫৬-২।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন