এখন থেকে আমার ব্যাটিং আরও ভাল হবে

এ যেন ফকির থেকে আচমকা রাজা হয়ে ওঠা! সমুদ্রের অতল থেকে এভারেস্টের চুড়োয় উঠে পড়া। আর সেটাও কিনা নিজের পেশার সর্বোচ্চ পরীক্ষা-মঞ্চে! এবং সেই কঠিন পরীক্ষায় শুধু সসম্মানে উত্তীর্ণই নন শিখর ধবন, রীতিমতো স্টার নম্বর তাঁর নামের পাশে। আর নিজের ব্যাটিং ভাবমূর্তির এই ‘ছিল বেড়াল, হয়ে গেল রুমাল’ পরিবর্তনের কারণ স্বয়ং ধবনের মতে, তাঁর খারাপ অধ্যায় যাওয়ার সময় শান্ত থাকতে পারাটা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪০
Share:

পরিবারের জন্য। সোমবার সন্ধ্যায় নিজের অফিসিয়াল ফেসবুকে এই ছবি পোস্ট করে ধবন লিখেছেন, ‘ফ্যামিলি টাইম ইন মেলবোর্ন।’

এ যেন ফকির থেকে আচমকা রাজা হয়ে ওঠা! সমুদ্রের অতল থেকে এভারেস্টের চুড়োয় উঠে পড়া। আর সেটাও কিনা নিজের পেশার সর্বোচ্চ পরীক্ষা-মঞ্চে!

Advertisement

এবং সেই কঠিন পরীক্ষায় শুধু সসম্মানে উত্তীর্ণই নন শিখর ধবন, রীতিমতো স্টার নম্বর তাঁর নামের পাশে। আর নিজের ব্যাটিং ভাবমূর্তির এই ‘ছিল বেড়াল, হয়ে গেল রুমাল’ পরিবর্তনের কারণ স্বয়ং ধবনের মতে, তাঁর খারাপ অধ্যায় যাওয়ার সময় শান্ত থাকতে পারাটা।

অনেক প্রাক্তন বিখ্যাতই অনেক কারণ দেখাচ্ছেন ভারতীয় ব্যাটিংয়ের গব্বর সিংহের ক্রিজে ফের ‘গুণ্ডা’ হয়ে ওঠার পিছনে। সেটা তাঁর বাঁ-হাতি ব্যাটিংয়ের টেকনিক্যাল পরিমার্জন ঘটা থেকে মানসিক পরিবর্তন— সব। কিন্তু পাকানো গোঁফের মালিক স্বয়ং ধবন বলছেন, “আমি মনে করি, আমার ভিতরে যে একটা শান্ত, ধীর, ঠান্ডা মন আছে সেটাকে নিজের পেশার খারাপ অধ্যায় যাওয়ার সময়েও ঠিকঠাক রাখতে পারার রেজাল্ট এখন পাচ্ছি।”

Advertisement

ওপেনিংয়ে এতটাই খারাপ করছিলেন যে, অস্ট্রেলিয়া সিরিজে শেষ টেস্টে বাদই পড়েছিলেন। তার পরে ত্রিদেশীয় ওয়ান ডে সিরিজেও তথৈবচ। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু হতেই ধবনের অন্য মূর্তি। প্রথম দু’টো ম্যাচের একটায় পাকিস্তানের বিশ্বকাপে ভারত-জুজু যেমন অব্যাহত রাখার পিছনে ধবনের লড়াকু ৭৩, তেমনই আবার পরের ম্যাচে ভারতের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা-জুজু কাটিয়ে ওঠার পিছনে ধবনের ১৩৭। “জীবনের প্রথম বিশ্বকাপেই সেঞ্চুরি পাওয়াটা অসাধারণ অনুভূতি। কিন্তু নিজের সেঞ্চুরি থেকেও আমাকে বেশি আনন্দ দিয়েছে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আমাদের প্রথম হারাতে পারাটা,” অনেক বড় ক্রীড়াবিদের মতোই ধবনের মুখেও ব্যক্তিগত সাফল্যের আগে টিমের সাফল্য। নিজের আগে দল।

সে জন্যই হয়তো ধবন দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচোত্তর বিসিসিআই টিভিতে সাক্ষাৎকারে আরও বলে দিয়েছেন, “বড় টিমের বিরুদ্ধে বড় রান করতে পারার আনন্দ আরও বেশি। কিন্তু দিনের শেষে ভারত যদি না জিতত, তা হলে আমার সেঞ্চুরির কোনও দাম থাকত না। সেঞ্চুরিটা আমাকে আরও বেশি স্বস্তি দিচ্ছে কারণ, টিমের জয়ে আমার রানটার ভূমিকা থাকল। এটা এক জন প্লেয়ারের কাছে ভীষণ তৃপ্তির।”

শ্বশুরবাড়ির দেশে টেস্ট এবং ওয়ান ডে সিরিজেও ব্যাটে রান-খরা চলার দিনগুলোর প্রসঙ্গ টেনে ধবন নিজেই বলেছেন, “নিজের পুরনো ফর্মে ফিরতে পারাটা গ্রেট। এই মুহূর্তটার জন্য তিন মাস অপেক্ষায় থেকেছি। সব সময় চেষ্টা করেছি হতাশ হয়ে না পড়ে ইতিবাচক থাকার। চেষ্টা করেছি চার দিকের সমালোচনায় উত্তেজিত হয়ে না পড়ে শান্ত থাকার। তবে কোনও সময় ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ার ভয় পাইনি। বিশ্বকাপ খেলতে না পারায় আশঙ্কা করিনি। নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস ছিল যে, এই দেশেই খারাপ সময় থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।” ধবন আরও যোগ করেছেন, “প্রতিটা ইনিংসে ব্যাট করতে ক্রিজের দিকে এগোতাম ঠিক এই সবই ভাবতে ভাবতে। মজার হল, ফর্ম খারাপ যাওয়ার সময়েও আমার কখনও মনে হয়নি খারাপ ব্যাটিং করছি। আসলে নিজের অজান্তেই কয়েকটা ভুল করে ফেলছিলাম ক্রিজে। যে জন্য ভাল শুরু করেও ২০-৩০ করে বারবার আউট হয়ে যাচ্ছিলাম। এখন ভাল শুরুটাকে লম্বা ইনিংসে টেনে নিয়ে যেতে পারছি। আর সেটা বিশ্বকাপের মতো সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টে ঘটাতে পারছি বলে আরও গর্ব হচ্ছে আমার।”

যে কারণেই হয়তো ধবন বলে দিয়েছেন, “বছর দুই আগে কার্ডিফে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আমার ১১৪-র আগে রাখব এই মেলবোর্ন সেঞ্চুরিকে। কারণ এই ইনিংসটার পিছনে আমার অনেক কমনসেন্স, অনেক পরিকল্পনা, চিন্তা রয়েছে। কার্ডিফের সেই সেঞ্চুরির থেকে মেলবোর্নে অনেক পরিণত ব্যাটিং করেছি বলে আমার ধারণা।” এর পরে ধবনের এক রকম ঘোষণা— “এখান থেকে আমার ব্যাটিংয়ের শুধু আরও বেশি উন্নতি ঘটবে বলেই আমার বিশ্বাস। অর্থাৎ, উন্নত থেকে উন্নততর!”

পরিবারের জন্য। সোমবার সন্ধ্যায় নিজের অফিসিয়াল ফেসবুকে এই ছবি পোস্ট করে ধবন লিখেছেন, ‘ফ্যামিলি টাইম অ্যাট মেলবোর্ন।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন