মুম্বইয়ের প্র্যাকটিসে আনেলকার সঙ্গে টক্কর মোহনবাগানের রাম মালিকের। ছবি: পিটিআই
রাত তখন দশটা। লিওনেল মেসি মাদ্রিদের হোটেলে ঘুমের তোড়জোড় করছেন। পরের দিনই মরসুমের শেষ এল ক্লাসিকো। যা ঠিক করে দেবে ২০০৮-’০৯ মরসুমের লা লিগা ট্রফি কার হাতে উঠবে, রিয়াল মাদ্রিদ না বার্সেলোনা। হঠাত্ই একটা ফোন এল। ফোনের ও প্রান্তের কণ্ঠ বলে উঠল, ‘লিও, আমি পেপ বলছি। খুব জরুরি একটা বিষয়ে কথা বলার আছে। একটা ব্যাপার লক্ষ করেছি। সে নিয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলার আছে। তাড়াতাড়ি এসো।”
তত্কালীন বার্সেলোনা কোচ পেপ গুয়ার্দিওলার কথা শুনে মেসি উর্ধ্বশ্বাসে ট্যাক্সি নিয়ে ছোটেন বের্নাবাও স্টেডিয়ামে বার্সার অস্থায়ী অফিসে। সে দিনই প্রথম ২১ বছরের তরুণের বার্সেলোনার ‘বিধ্বংসী অস্ত্র’ হয়ে ওঠা। কী বলেছিলেন গুয়ার্দিওলা সেই রাতে? ফাঁস করেছেন প্রাক্তন বার্সেলোনা কোচের বন্ধু মার্তি পেরারনাও তাঁর নতুন বইয়ে। গুয়ার্দিওলা লক্ষ করেছিলেন, রিয়ালের মিডফিল্ডার আর সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারদের মধ্যে বেশ অনেকটা জায়গা ফাঁকা থাকছে। সেই ফাঁকা জায়গাটাকেই নিজের রাজত্বে পরিণত করুক তাঁর সবচেয়ে বড় অস্ত্র, করে তুলুক ‘মেসি জোন’। উইঙ্গার থেকে ফলস নাইনে সেই প্রথম নামেন মেসি। বাকিটা ইতিহাস। সেই ম্যাচে রিয়ালকে ৬-২ হারিয়ে লা লিগার খেতাবের দৌড় থেকে ছিটকে দেয় বার্সেলোনা। মেসি করেছিলেন জোড়া গোল।
ছ’বছর পর চলতি মরসুমে আর এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে দুই ক্লাব। ভক্তদের লিও বলেছেন, “সব সময় চেষ্টা করি নিজের খেলায় আরও উন্নতি করার আর ক্লাবের জন্য আরও ট্রফি জেতার।” কিন্তু মেসি কি পারবেন এ বারও নয়া রূপে বিধ্বংসী হয়ে উঠতে? সিনিয়র দলের জার্সিতে অভিষেকের দশ বছর পূর্তির উত্সবে আলাদা রোশনাই আনতে শনিবার ন্যু কাম্পে সোসিয়েদাদ দেপোর্তিভা আইবারের বিরুদ্ধে মেসির সামনে লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে নতুন রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ তো রয়েছেই। যার জন্য আর মাত্র দুটো গোল করতে হবে এলএম টেন-কে। তা হলেই মেসি (২৪৯) ছুঁয়ে ফেলবেন কিংবদন্তি তেলমো জারাকে (২৫১)। একই দিনে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর রিয়াল মাদ্রিদ নামছে লেভান্তের বিরুদ্ধে। যেখানে সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে টানা ছ’ম্যাচ জেতার দৌড় বজায় রাখতে রিয়াল আবার তাকিয়ে সিআর সেভেনের দিকেই।
এ দিনই আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ফের সেই পুরনো বিতর্ক উস্কে উঠেছে। কে সেরা? মেসি না রোনাল্ডো। যার প্রেক্ষাপট একটি পরিসংখ্যান। যেখানে দেখা যাচ্ছে ইউরোপের সেরা পাঁচ টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্সের বিচারে দুই মহাতারকার গোল করা আর গোলের পাস বাড়ানো একেবারে সমান। ৩৪৯। সিআর সেভেন ৩৩১ ম্যাচে ২৭০ গোল আর ৭৯টি গোলের পাস বাড়িয়েছেন, মেসির ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ২৪৯ ও ১০০। তবে মেসি রোনাল্ডোর তুলনায় ম্যাচ খেলেছেন কম। ২৮৪। তার জন্য মেসির চোট-প্রবণতা না রোনাল্ডোর দুরন্ত ফিটনেস কোনটা দায়ী সে নিয়েও তুমুল তর্কযুদ্ধ চলছে দুই মহাতারকার ভক্তদের।