মাতেরাজ্জি-এলানো যুগলবন্দির সামনে আজ কলকাতা।
আটলেটিকো দে কলকাতার চোখের বালি হয়ে উঠলেন কি তিনি?
না হলে তাঁর নাম শুনেই সাংবাদিক সম্মেলনে আটলেটিকো কোচ এত বিরক্ত হবেন কেন?
কে তিনি? চেন্নাইয়ানের ব্রাজিলীয় এলানো ব্লুমার।
যাঁর ফ্রিকিক আইএসএলের অন্যতম মারণাস্ত্র। সেই এলানোকে কব্জা করার জন্য বৃহস্পতিবার আটলেটিকোর পরিকল্পনা ঠিক কী?
বারবার একই প্রশ্নে যেন ঈষত্ বিরক্ত আন্তোনিও হাবাস। “বার বার এলানোর ব্যাপারেই প্রশ্ন কেন? এলানো, মেন্ডোসা দু’জনেই বেশ ভাল। তবে ওদের কারও জন্যই বিশেষ প্ল্যান নেই। আমরা চেন্নাই টিমকে মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
মিডিয়ার সামনে এলানোকে গুরুত্বহীন করে দেখালেও ভিতরে ভিতরে আটলেটিকো কোচ কিন্তু মাতেরাজ্জির দলের মার্কি ফুটবলারকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা রাখছেন।
একটা কারণ যদি হয়, কলকাতার ঘাড়ে চেন্নাইয়ের নিঃশ্বাস ফেলা—শুক্রবার হারলেই লিগ টেবিলে দু’নম্বরে নেমে আসবে হাবাসের দল। তা হলে দ্বিতীয় কারণটা ঘরের মাঠে গার্সিয়াদের করুণ পারফরম্যান্স। চার হোম ম্যাচে একটা জয়, দুটো ড্র আর শেষ ম্যাচে তিন গোল খেয়ে হার। সাত ম্যাচে ১২ পয়েন্টের মধ্যে মাত্র পাঁচ পয়েন্ট এসেছে যুবভারতী থেকে। যা নিয়ে এ দিন ‘আই লাভ ইন্ডিয়া’ হেডব্যান্ড লাগিয়ে ইডেন গিয়ে রোহিত শর্মার ব্যাটিং দেখে আসা হোফ্রের স্বীকারোক্তি, “আমরা অ্যাওয়ে ম্যাচে কেন ভাল খেলছি তার কারণটা এখনও বুঝতে পারিনি।”
শুক্রবার সামনে আবার এলানো! এবং খানিকটা চমকে দিয়ে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার অনুশীলনই এ দিন করল কলকাতা।
সেটা কী? ১৮ গজ বক্সে পেনাল্টি স্পটের সামনে গোটা তিরিশেক চেয়ার দিয়ে কৃত্রিম ওয়াল তৈরি করলেন হাবাস। সেই ওয়ালে জুড়ে দিলেন সহকারী কোচ ব্যারেটোকেও। গোলে শুভাশিসকে রেখে তার পর বোরহা, বলজিত্, হোসেমিদের দিয়ে মারালেন একের পর এক ফ্রি কিক। যাতে শুক্রবার আসল সময়ে ওয়ালের উপর দিয়ে এলানোর ভেসে আসা বলের মোকাবিলায় তৈরি থাকতে পারেন আটলেটিকোর বাঙালি কিপার।
টিম সূত্রে খবর, হোটেলে চেন্নাইয়ানের খেলার ফুটেজের সুরতহালের পর আটলেটিকো শিবির দেখেছে, এলানো মূলত অপারেট করেন মিডল করিডর দিয়ে। দুই স্টপার আর দুই ডিফেন্সিভ মিডিওর মাঝের জায়গা থেকে কলম্বিয়ান সতীর্থ মেন্ডোসা আর বাকি ফরোয়ার্ডদের বল বাড়ান। ব্রাজিলীয় মহাতারকাকে সেই জায়গাতেই বোতলবন্দি করতে নাকি বিশেষ অঙ্ক কষে রাখছেন হাবাস।
যে অঙ্ক বলছে বলবন্ত, জেজে, মেন্ডোসাদের হঠাত্ হঠাত্ গোলে শট রুখতে ওপেন স্পেস, রিবাউন্ড, ফাউল নৈব নৈব চ। পরিবর্তে জোনাল মার্কিং আর ডাবল কভারিংয়ের নিরাপত্তা বলয়। নিজেদের ডিফেন্সিভ থার্ডে চেন্নাইয়ানের ফ্রিকিকের সময় পাল্টা হিসাবে থাকবেন গার্সিয়া সেকেন্ড বলের অপেক্ষায়। যা পেলেই ফিকরুকে বাড়িয়ে ‘বুলেট’দের (মেন্ডোসাকে এই নামে নাকি ডাকছেন চেন্নাইয়ান মালিক অভিষেক বচ্চন) বিরুদ্ধে গোলের সরণি গড়বেন তিনি।
চেন্নাইতে অ্যাওয়ে ম্যাচে ছিলেন না ফিকরু। শুক্রবার খেলবেন। এ দিন প্র্যকটিসে নামার আগে প্রথম দশ টিকিটে স্বাক্ষর করলেন খোশমেজাজে। সিলভেস্ত্রে, মাতেরাজ্জিদের কোবরা ট্যাকল এড়িয়ে পারবেন গোল করে কলকাতাকে তিন পয়েন্ট এনে দিতে? দেখা যাবে তাঁর সেলিব্রেশনের সমারসল্ট? এ পর্যন্ত তিন গোলের মালিক ইথিওপিয়ান স্ট্রাইকার বলছেন, “গোল করব কি না সেটা বড় নয়। আসল ব্যাপার তিন পয়েন্ট। সেটা আনতেই মাঠে নামব কাল।”
ফুটবল টিম নিয়ে ধোনি বনাম সৌরভের সম্মুখসমর সম্ভবত হচ্ছে না। রাত পর্যন্ত আয়োজকদের তরফে যা খবর, ধোনি আসছেন না। তবে ম্যাচ দেখতে যুবভারতীর গ্যালারিতে থাকার কথা বাবা-ছেলে অমিতাভ ও অভিষেক বচ্চনের। থাকবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়ও। বিরতিতে তাঁদের হুড খোলা জিপে স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণের পরিকল্পনা রয়েছে আয়োজকদের। ম্যাচ দেখতে এ দিনই শহরে এলেন জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ। তারকা সমাবেশের এই আবহেও কলকাতা কি এলানো জুজুতে কাঁপছে?
দলের এক সিনিয়র ফুটবলার অবশ্য বললেন, “ওদের এলানো থাকলে, গৌরমাঙ্গীও তো আছে। যে সাইডব্যাকের স্টপারের দিকে সরে যাওয়ার বদভ্যাসে চেন্নাইয়ের ডিফেন্সে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। আমরা কিন্তু সেই জায়গাটাও দেখছি!”
ছবি: উত্পল সরকার