বঙ্গ যোদ্ধারা এ ভাবেই আটকে গেলেন বেঙ্গালুরুর কাছে। বুধবার নেতাজি ইন্ডোরে। ছবি: উৎপল সরকার
খেল কো খেল সমঝো। হার কো উপহার সমঝো— ম্যাচ শেষে বলছিলেন আঁটোসাঁটো পোষাকে ক্ষীণকটি তরুণী অ্যাঙ্কর।
শহরে প্রো-কবাডির উদ্বোধনের দিন ৩০-৪৬ হেরেও মুঠো মুঠো বিনোদন-উপহার কুড়িয়েই বাড়ি ফিরলেন দর্শকরা। নিজেই ‘থাই ফাইভ’ করে অভিনব টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করা পঞ্চায়েত মন্ত্রী তথা রাজ্য কবাডি সংস্থার প্রেসিডেন্ট সুব্রত মুখোপাধ্যায় বললেন, “কাল এর থেকেও দেদার মজা থাকবে।” আয়োজকদের সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারই শহরে আসছেন অভিষেক বচ্চন। সঙ্গে নাকি তাঁর চমকও থাকবে। তবে সেই চমক ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন কি না তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না কেউ। রাতে আসার কথা দেবগন দম্পতিরও। অজয়-কাজল।
থিম সং-এর সঙ্গে সাইকোডেলিক আলোর ছুটোছুটি। ডিজে-র ঝিন-চ্যাক মিউজিক। সাড়ে চার হাজার আসনের আশি শতাংশ ভর্তি। সমর্থনের গগনভেদী চিৎকার। মাইক্রোফোন হাতে উষা উত্থুপের ‘শান সে’ গেয়ে গ্যালারির কোমর দুলিয়ে দেওয়া। টলিউডের সঙ্গে-সঙ্গে শহরের পেজ থ্রি সেলিব্রিটিদেরও উপস্থিতি যে সবের যোগফলে নেতাজি ইন্ডোরে মাতোয়ারা ভিআইপিদের থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত।
নমুনা? ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ঢুকেই ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রর বিস্ময়, “এত লোক কবাডি দেখতে এসেছে!” পাশ থেকে ‘নতুন ফেলুদা’ আবিরের আক্ষেপ, “স্কুলে রোগা চেহারার জন্য কেউ আমাকে কবাডিতে ডাকত না।” যা শুনে অভিনেত্রী ত্রিধা, পার্ণোদের হাসি আর থামে না। বালিগঞ্জের প্রতিবেশী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে দেখে উষা উত্থুপের দাবি, “ছেলেরাই কেন প্রো কবাডি খেলবে? মহিলাদের লিগ কেন হবে না।” সর্বভারতীয় কবাডি সংস্থার প্রেসিডেন্ট জনার্দন সিংহ ঝালরও বলে গেলেন, “মুম্বইতে সচিন, অমিতাভ-সহ সেলিব্রিটির সংখ্যা বেশি ছিল। কলকাতা টেক্কা দিল দর্শক সমাবেশে।”
সব দেখেশুনে হাসছেন প্রো-কবাডি লিগের ‘কেরি প্যাকার’ চারু শর্মা। নামী ক্রীড়া সঞ্চালক বলছিলেন, “কলকাতার চার্মটাই আলাদা। চেষ্টা করছি পরের বছর থেকে মেয়েদেরও এ রকম লিগ করার।” কিন্তু কী ভাবে কবাডি নিয়ে এমন অভিনব লিগের পরিকল্পনা? চারু বললেন, “আট বছর আগে দোহা এশিয়াডে কবাডির কমেন্ট্রি দিতে গিয়ে ঠিক এ রকম জমজমাট পরিবেশ দেখেছিলাম। তার পরেই কর্পোরেট কর্তাদের বলি। আর বুসান এশিয়াডের পর কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিলাম। কারণ কবাডি খেলাটা আমাদের নিজস্ব খেলা। এটায় আমরাই লিডার।”
বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স-এর জার্সি গায়ে পাশাপাশি বসে ম্যাচ দেখলেন দুই মন্ত্রী মদন মিত্র এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়। দর্শকরাও সমানে দিয়ে গেলেন উৎসাহ। কিন্তু তাতেও প্রো-কবাডির লিগে দ্বিতীয় হার এড়াতে পারেনি বাংলা। প্রথম ম্যাচে ইউ মুম্বইয়ের পর বুধবার দ্বিতীয় ম্যাচে ঘরের মাঠে বেঙ্গালুরু বুলসের কাছে ৩০-৪৬ হারল নীলেশ শিন্দের বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স। ম্যাচটা কলকাতার চ্যালেঞ্জাররা হেরে বসেছিলেন শুরুর প্রথম সাত মিনিটের মধ্যেই। বেঙ্গালুরু বুলস-এর রেইডার রাজেশ ঠাকুর ওই সময়েই যে ‘সিট আউট’ করে দিলেন টিম কলকাতা-র চার ডিফেন্ডারকে। বঙ্গ-যোদ্ধারা তখনই ২-১১ হয়ে গিয়ে ব্যাকফুটে। দ্বিতীয়ার্ধে বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স ম্যাচে ফিরেছিল। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। রাজেশের সঙ্গে কলকাতাকে বিঁধতে বড় ভূমিকা নিলেন এক বঙ্গসন্তানও। চন্দননগরের সেই রাজেশ মণ্ডল খেলা শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে বলে গেলেন, “জানতাম জিতব। জয়ের হ্যাটট্রিক করে আমরা দু’নম্বরে চলে গেলাম। ফাইনাল খেলতেই হবে।” আর কলকাতা অধিনায়ক বলছেন, “এত সমর্থন ভাবিনি। কাল তাই দিল্লিকে হারিয়ে এর প্রতিদান দিতেই হবে।”