গোয়ায় ফিরে এলেন চেনা ওডাফা।
মোহনবাগান-৩ (ওডাফা-২, ক্রিস্টোফার)
স্পোর্টিং ক্লুব-১ (রাওলিন)
ইস্টবেঙ্গলের মতোই রবিবার আই লিগে জয়ের স্বাদ পেল তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীও। মারগাওতে স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়া-কে ৩-১ গোলে হারাল মোহনবাগান। যে জয়ের সৌজন্যে ওডাফা-করিমের দলের অবনমনের ভয় অনেকটা দূর হল। যদিও ম্যাচ শেষে গোয়া থেকে বাগানের মরক্কান কোচের ফোনে সাবধানী মন্তব্য, “ফুটবলাররা আজ নিজেদের জন্য জিতেছে। কিন্তু এখনও অবনমন থেকে পুরোপুরি বাঁচিনি।” এ দিনের জয়ের ফলে ২১ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগে আট নম্বরে মোহনবাগান। হাতে আর তিন ম্যাচ।
গোয়ান দলের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ে লড়াইয়ে ইচে-রোইলসন জুটিকে রক্ষণে রেখে ওডাফা আর ক্রিস্টোফারের উপর গোলের জন্য ভরসা রেখে প্রথম দল সাজিয়েছিলেন সবুজ-মেরুন কোচ। এবং শুরু থেকেই সুযোগ তৈরি করতে থাকে বাগান। কিন্তু সেই সব আক্রমণ স্পোর্টিং ক্লুবের আঁটোসাঁটো রক্ষণে বারবার ধাক্কা খাওয়ায় গোলের মুখ খোলেনি। এমনকী ফাকা গোলে ওডাফার শটও সফল ভাবে ‘ক্লিয়ার’ করেন স্পোর্টিং ডিফেন্ডার গঞ্জালো।
কিন্তু হাফটাইমের ঠিক আগে দুই বিদেশির যুগলবন্দিতে বাগানে গোলের ফুল ফোটে। কাতসুমির পাস থেকে গোল করেন ওডাফা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরও চাপ বাড়াতে থাকে বাগান। তারই ফলশ্রুতি করিমের দলের দ্বিতীয় গোল। এ বার বিপক্ষের পাতা অফসাইড-এর ফাঁদ কেটে বাগানকে ২-০ এগিয়ে দেন ক্রিস্টোফার। তবে কিছু পরেই স্পোটির্ং ক্লুবের রাওলিন ব্যবধান কমান। যদিও অস্কার ব্রুজো-র দলের লড়াইয়ে ফেরার আশা সাঙ্গ করে মোহনবাগানের অতি জরুরি জয় নিশ্চিত করেন ওডাফা। বিপক্ষের গোলকিপারের ভুলের সুযোগ নিয়ে নিজের দ্বিতীয় এবং দলের তিন নম্বর গোল করেন বাগান অধিনায়ক। এবং ফের সেই নাইজিরিয়ান গোলমেশিনের সৌজন্যেই বাগানের তিন পয়েন্ট প্রাপ্তি। তবে করিমের চিন্তা বাড়িয়ে ম্যাচে চোট পেলেন বিক্রমজিৎ ও পঙ্কজ।
পাহাড়ে গিয়ে রাংদাজিদের কাছে হেরে সবুজ-মেরুন শিবিরে প্রশ্নচিহ্ন উঠে গিয়েছিল আই লিগে অবনমন বাঁচানোর লড়াইয়ে কি সফল হতে পারবে ১২৫ বছরে পা রাখতে চলা ক্লাব? শেষমেশ আরব সাগরের ধারে স্পোর্টিং ম্যাচ জিতে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস পড়ছে করিমের দলের ড্রেসিংরুমে। মোহনবাগানের এত ভাল পারফরম্যান্সের রহস্য কী? ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করতে এ দিন ম্যাচের আগেই করিম তাঁদের পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, সবুজ-মেরুন জার্সির মান রাখতেই হবে। সর্বশক্তি লাগিয়ে দিতে হবে জয় ছিনিয়ে আনতে। “মাঠে নামার আগে ফুটবলারদের বলেছিলাম তোমরা মোহনবাগানের হয়ে খেল। আজ সেই দলের জার্সির মর্যাদা মাঠে রাখতেই হবে। আর কিছু না হোক, অন্তত নিজেদের জন্য জেতো এই ম্যাচ,” ফোনে বলছিলেন করিম। সঙ্গে তিনি যোগ করেন, “আজকের জয়ের জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই ক্লাব কর্তা সৃঞ্জয় বসুকে। রাংদাজিদ ম্যাচ হারের পরেও উনি পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন।”
স্পোর্টিং ম্যাচ জিতলেও এই মরসুমে দলের ধারাবাহিকতার অভাবের কারণে হতাশ করিম। বললেন, “আমি কখনওই ভাবিনি এ বার আই লিগে অবনমন বাঁচানোর লড়াই করতে হবে আমাদের। মোহনবাগানের মতো দলের অবনমন বাঁচানোর লড়াই করাটা খুব হতাশাজনক। খুব ভাল দল ছিল আমাদের। এখন লক্ষ্য শেষ তিন ম্যাচে ভাল খেলে লিগ টেবলে যতটা উপরে শেষ করা যায়।”
জোড়া গোল করে ম্যাচের নায়ক ওডাফাও আশাবাদী, দলের অবনমন বাঁচাতে সফল হবেন। আত্মবিশ্বাসী গলায় ফোনে ওডাফা বললেন, “আমি আগেই বলেছিলাম, মোহনবাগানের অবনমন হবে না। আমরা সবাই মিলেই অবনমন বাঁচাব।” বাগান অধিনায়ক মনে করছেন, এ দিন তিনি ‘ক্যাপ্টেন্স গেম’ খেলেছেন। “অধিনায়ক হিসাবে আমার একটা দায়িত্ব আছে। আজ জোড়া গোল করে সেটাই পালন করলাম। এই মরসুমে চোট-আঘাতে খুব ভুগেছি। কিন্তু এই সময় দলকে সাহায্য করতে পেরে খুব খুশি আমি।” তবে এই স্বস্তির হাওয়া সবুজ-মেরুন নৌকার পালে কত দিন থাকে, সেটাই দেখার।
মোহনবাগান: সন্দীপ, রোইলসন, ইচে, সৌভিক(কিংশুক), প্রীতম, বিক্রমজিৎ(উজ্জ্বল) ,পঙ্কজ(সাবিথ), কাতসুমি, জাকির, ওডাফা, ক্রিস্টোফার