ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ক্যামেরুন যে ০-৪ হারবে এবং সেই ম্যাচে ক্যামেরুনের এক ফুটবলার লাল কার্ড দেখবেন, এ সবই নাকি পূর্বপরিকল্পিত! এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ ওঠায় ব্রাজিলে গড়াপেটার খলনায়কদের উপস্থিতি নিয়ে জল্পনায় তোলপাড় ফুটবল-দুনিয়া। ফিফার নির্দেশের অপেক্ষা না করেই এই নিয়ে তদন্তও শুরু করে দিয়েছে ক্যামেরুনের ফুটবল ফেডারেশন ফেকাফুট। তাদের এই সিদ্ধান্তই এই বিতর্কে আরও ইন্ধন জোগাল।
শয়ে শয়ে ফুটবল ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, সেই কুখ্যাত উইলসন রাজ পেরুমলই ম্যাচের আগের দিন এক ফেসবুক চ্যাটে এমন স্কোরলাইন ও লাল কার্ড দেখার কথা আগাম জানিয়েছিলেন বলে দাবি জার্মানির পত্রিকা ‘দ্যর স্পিগেল’-এর। পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যায় এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনে লেখা হয়েছে, তামিল বংশোদ্ভূত এই গড়াপেটার সম্রাট ম্যাচের আগের রাতে তাদের সাংবাদিকের সঙ্গে করা চ্যাটে লিখেছিলেন, “এই দলে সাতটা পচা আপেল রয়েছে” এবং তাঁর ধারণা, শুধু এই ম্যাচটা নয়, গ্রুপ লিগে ক্যামেরুনের তিনটি ম্যাচই গড়াপেটা হয়েছে।
ফিফার তরফে অবশ্য এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তাদের সিকিউরিটি ডিরেক্টর র্যালফ মুশকে বলেন, “এমন কোনও প্রমাণ আমাদের কাছে নেই।” এই ব্যাপারে নজরদারির জন্য ফিফার একটি নিজস্ব সফটওয়্যার রয়েছে। কোনও ম্যাচে কোনও অস্বাভাবিক বেশি অঙ্কের বেট পড়লেই এর মাধ্যমে তা জানতে পারে ফিফা। জার্মান পত্রিকার দাবি, ১৮ জুন মানাউসে সেই ম্যাচের আগে কয়েকটি বেটিং সংস্থায় অস্বাভাবিক অঙ্কের বেট ফেলা হয়েছিল। কিন্তু ফিফা জানিয়েছে, ‘আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ নামক সফটওয়্যার মারফত নাকি কিছুই জানতে পারেনি তারা। ফলে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে গড়াপেটার উপর তাদের এই নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েও।
ফেকাফুটের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট জোসেফ ওয়োনা জানিয়েছেন, “আমাদের দলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, আমাদের ফেডারেশনের নীতি ও মূল্যবোধ মোটেই তাকে সমর্থন করে না। সে জন্য ফিফার নির্দেশ ছাড়াই আমরা ফেডারেশনের এথিকস্ কমিটিকে এই অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।” কোন সাত ফুটবলারকে ‘সাতটা পচা আপেল’ বলতে চেয়েছেন পেরুমল, তাও জানতে চায় তারা।
গত কুড়ি বছরে ফুটবলে গড়াপেটার অপরাধে ছ’বার গ্রেফতার হওয়া এই উইলসন রাজ পেরুমলের কালো হাত ফুটবল বিশ্বে ফিরে এসেছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিযোগ। ২০১১-য় পেরুমল নিজ উদ্যোগে দু’টি আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচ গড়াপেটা করেছিলেন। বলিভিয়া ও লাতভিয়া এবং এস্তোনিয়া ও বুলগেরিয়ার মধ্যে সেই দুই ম্যাচ গড়াপেটা করতে যে ছয় রেফারিকে ঘুষ দিয়েছিলেন, তা আদালতেই প্রমাণ হয়।
গত বছর ইউরোপোল ও ফিফার তদন্ত কমিশন গড়াপেটা নিয়ে যে তদন্ত করে, তাতে দেখা গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় গত বিশ্বকাপের আগে অন্তত ১৫টি ম্যাচ গড়াপেটা হয়েছিল। গত ৩১ মে-র নিউ ইয়র্ক টাইমসে ফাঁস হওয়া ফিফার গোপন তদন্ত রিপোর্টেই ছিল এই তথ্য।
এর পর ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে ওঠা সাম্প্রতিক গড়াপেটার অভিযোগে সেই পেরুমলের দিকেই আঙুল উঠছে।
চিরনির্বাসনে ক্রিকেটার
ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেটে গড়াপেটায় যুক্ত থাকার জন্য নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন তারকা লু ভিনসেন্টকে চিরনির্বাসন দিল ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। মোট ১৮টি অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। প্রতিটিই সত্যি প্রমাণিত হওয়ায় এই কঠোর শাস্তি। কোনও ভাবেই আর ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না ভিনসেন্ট। আইসিসি-ও এই শাস্তিকে সমর্থন করেছে।