বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের দর্পচূর্ণ

ক্লাবের পজিশনে রবেনকে ফেরাতেই ধ্বংস তিকিতাকা

ম্যাচ রিপোর্টে হাত দেওয়ার আগে একটা স্বীকারোক্তি বোধহয় করে রাখা ভাল। স্পেন বনাম ডাচদের বিশ্বকাপ মহাযুদ্ধ আজ আমাকে লিখতে হচ্ছে বটে, কিন্তু আমি দু’টো টিমের একটারও সমর্থক নই। ছোট ছিলাম যখন, আর্জেন্তিনাকে সমর্থন করতাম। আর্জেন্তিনা হেরে গেলে সেটা হয়ে যেত জার্মানি। আজ আর কোনও নির্দিষ্ট টিমকে সমর্থন করি না। যারা ভাল ফুটবল খেলে, তাদের খেলা দেখি। তাদেরই সমর্থন করি।

Advertisement

সুব্রত পাল

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০৩:৪৪
Share:

নয়া উড়ন্ত ডাচ! দলকে সমতায় ফেরাল রবিন ভ্যান পার্সির দুরন্ত হেড। স্পেনকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে গত বারের ফাইনালের মধুর প্রতিশোধ নিল নেদারল্যান্ডস।

স্পেন-১ (আলোন্সো-পেনাল্টি)
নেদারল্যান্ডস-৫ (ফান পার্সি-২, রবেন-২, দে ভ্রিজ)

Advertisement

ম্যাচ রিপোর্টে হাত দেওয়ার আগে একটা স্বীকারোক্তি বোধহয় করে রাখা ভাল। স্পেন বনাম ডাচদের বিশ্বকাপ মহাযুদ্ধ আজ আমাকে লিখতে হচ্ছে বটে, কিন্তু আমি দু’টো টিমের একটারও সমর্থক নই। ছোট ছিলাম যখন, আর্জেন্তিনাকে সমর্থন করতাম। আর্জেন্তিনা হেরে গেলে সেটা হয়ে যেত জার্মানি। আজ আর কোনও নির্দিষ্ট টিমকে সমর্থন করি না। যারা ভাল ফুটবল খেলে, তাদের খেলা দেখি। তাদেরই সমর্থন করি।

বিশ্বাস করুন, রাত আড়াইটেতে বসেও ঠিক বুঝতে পারছি না ম্যাচটায় আমি ঠিক কাকে সমর্থন করলাম। বার্সাকে ছোটবেলা থেকে সমর্থন করি বলে স্পেনের তিকিতাকা ফুটবলের প্রতি একটা দুর্বলতা আমার আছে। কিন্তু লুই ফান গলের এই নেদারল্যান্ডস? কী বলব এদের নিয়ে? আর এত উত্তেজক একটা ম্যাচ দেখব, সেটাও বিশ্বাস করতে পারছি না। বারবার মনে হচ্ছে, নব্বই মিনিট কোথায় দেখলাম, ম্যাচটা তো দশ মিনিটে শেষ হয়ে গেল!

Advertisement

ম্যাচটা জেতার পর ডাচদের তুমুল উৎসব দেখতে দেখতে আরও একটা কথা বারবার মনে পড়ছিল। ইন্টারনেট সার্চ করতে গিয়েই দেখছিলাম স্নাইডার বলেছে যে, চার বছর আগের কাপ ফাইনালের দুঃস্বপ্নের রাত আজও ওকে ঘুমোতে দেয় না। বলেছে, জাভি-ইনিয়েস্তার স্পেনকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত ওদের শান্তি হবে না। শুক্রবারের রাত বুঝিয়ে দিল, ডাচদের প্রতিশোধস্পৃহা কতটা ভয়াবহ হতে পারে! যা গুঁড়িয়ে দিতে পারে তিকিতাকার এত দিনের ঐতিহ্যকে।

কী ভাবে সম্ভব হল এমন অসাধ্যসাধন?

দুই অধিনায়ক। উচ্ছ্বসিত ফান পার্সি। বিপর্যস্ত কাসিয়াস।

একে একে বলি। দেখুন, দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের পর ডাচ টিমটায় আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলা হয়েছিল। বার্ট ফান মারউইককে সরিয়ে আনা হয়েছে লুই ফান গলকে। যিনি বিশ্বফুটবলে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বদের একজন। সবচেয়ে বড় অ্যাডভান্টেজ, ফান গল নিজে অতীতে বার্সেলোনার কোচ ছিলেন। জাভি-ইনিয়েস্তাকে উনিই তুলে এনেছেন। তিকিতাকা স্টাইলে তিনি বার্সেলোনাকে না খেলালেও একেবারে অপরিচিত ছিলেন না। কিন্তু স্রেফ অতীত অভিজ্ঞতা থেকে স্পেনকে এ ভাবে ধ্বংস করে দেওয়া যায় না। ট্যাকটিকাল মুভ লাগে। ডাচরা যেটা আগেভাগে করেছে। স্পেনকে উড়িয়ে দেব ভেবে স্ট্র্যাটেজি বাদ রেখে নামেনি। বরং নেদারল্যান্ডস বুঝেছিল, স্পেন স্পেনের মতোই খেলবে। আমাদের সেই অনুযায়ী নিজেদের স্ট্র্যাটেজি করতে হবে।

এবং মাত্র তিনটে মুভে তিকিতাকা শুক্রবার শেষ করে দিলেন ফান গল।

এক) ডিফেন্সে একজন ট্যাকলে এগিয়ে গেলে তিন জন থাকবে পিছনে কভারিংয়ের জন্য। দে জংয়ের নাম আমি আজ আলাদা করে করব। অসাধারণ খেলেছে ছেলেটা।

দুই) স্পেনের বিরুদ্ধে খুব বেশি সুযোগ পাওয়া যাবে না। যে ক’টা পাওয়া যাবে, চেষ্টা করতে হবে যত বেশি সম্ভব তার থেকে গোল তুলে নেওয়ার। ভেবে দেখুন, স্পেনের চেয়ে কিন্তু ডাচরা আজ খুব বেশি সুযোগ পায়নি। কিন্তু যে ক’টা পেয়েছে, সব কাসিয়াসের পাশ দিয়ে জালে ঢুকেছে!

তিন) রবেন-স্নাইডারের জায়গা বদল। যেটা সবচেয়ে মারাত্মক মুভ।

প্রথমার্ধ পর্যন্ত দেখছিলাম, রবেনকে বাঁ দিকে খেলানো হচ্ছে। আর স্নাইডারকে ডান দিক থেকে। ফান গলের স্ট্র্যাটেজিটা তখনও পর্যন্ত বুঝতে পারছিলাম না। কারণ ক্লাব ফুটবলে রবেন খেলে ডান দিক থেকে আর স্নাইডার বাঁ দিক থেকে। দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই দেখলাম, ফান গল রবেন-স্নাইডারকে ওদের ক্লাব পজিশনে নামিয়ে দিলেন। আর ডান দিকে যে ভাবে বারবার রবেন মারাত্মক ভাবে ঢুকে আসছিল, যে কোনও সময় গোল হত। ওই স্পিডে রবেনকে আটকানো সম্ভব নয়। হলও না। এক বার নয়, দু’বার। আর শুধু রবেনের কেন, ডাচদের সবক’টা গোলই আজ অসাধারণ হয়েছে। ফান পার্সির ও রকম উড়ে গিয়ে হেড, পিকে আর সের্জিও র্যামোসের মাঝখান থেকে বেরিয়ে এসে রবেনের ও রকম অত্যাশ্চর্য গোলকোনটা ছেড়ে কোনটা বলব।

এ বার ঢুকি সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নে। যে প্রশ্নটা শুক্রবার রাতের পর বারবার উঠবে। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কোনও টিম ঠিক পরের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাঁচ গোল খাচ্ছে, কোনও দিন হয়নি। তা-ও স্পেনের মতো টিম। লোকে স্বাভাবিক ভাবেই এ বার বলবে, তিকিতাকা কি তা হলে শেষ হয়ে আসছে? ব্রাজিল কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে তিন গোল মারল, ডাচরা পাঁচ। তবু আমার মনে হয়, হয়নি। একটা-দু’টো ম্যাচ দিয়ে স্পেনকে বিচার করা ঠিক হবে না। পাঁচ-ছ’বছর ধরে দাপট দেখাতে দেখাতে একটা-দু’টো ম্যাচ এ রকম যেতেই পারে। কিন্তু তাতে ঐতিহ্য শেষ হয়ে যায় না।

মনে রাখবেন, যে কাসিয়াস আজ পাঁচ গোল নিল, সেই একই কাসিয়াস কিন্তু গত তিনটে টুর্নামেন্ট মিলিয়ে পাঁচ গোল খেয়েছে!

ছবি: রয়টার্স।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন