ম্যানুয়েল ন্যয়ারকে টপকে রোনাল্ডো ব্যালন ডি অর জিততেই অনেকে দেখছি প্রশ্নটা তুলছেন। বিশ্বজয়ী জার্মান দলের সেরা পারফর্মারকে টপকে রোনাল্ডোকে বিশ্বসেরা বেছে নেওয়ার অর্থ কী? ব্যালন ডি অরে কি তা হলে ক্লাব ফুটবলের পারফরম্যান্সই আসল কথা, বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের কোনও গুরুত্ব নেই?
প্রথমেই একটা কথা বলি, ১৯৫৬ থেকে ব্যালন ডি অরের ইতিহাসে মাত্র একজন গোলকিপারই কিন্তু এই পুরস্কারটা জিতেছে। কিংবদন্তি লেভ ইয়াসিন। এমনকী বেকেনবাউয়ার, জার্মানির ম্যাথিয়াস সামার আর ইতালির ফাবিও কানাভারো ছাড়া আর কোনও ডিফেন্ডার এই মহার্ঘ্য ট্রফি হাতে তুলতে পারেনি।
আসলে ফুটবলে বিনোদনের ক্ষেত্রে গোলকিপারের থেকে স্ট্রাইকারের ভূমিকা বেশি। গোলকিপার হয়তো আমার প্রথম ড্রিবলটা আটকে দিল, কিন্তু দ্বিতীয় ড্রিবলে যদি আমি গোলটা করতে পারি, প্রথমটার কথা কেউ মনে রাখবে না। কী ভাবে কত জনকে কাটিয়ে আমি ইনসুইং না আউটসুইংয়ে গোল করলাম সেটাই সবার মাথায় থাকবে। রোনাল্ডোদের সঙ্গে তাই লড়াই করেও জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে পড়তে হয় ন্যয়ারদের।
অনেকে বলবেন রোনাল্ডোর পর্তুগাল তো এ বার বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডই টপকায়নি। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে যে আগুনে রোনাল্ডোকে আমরা দেখতে অভ্যস্ত ব্রাজিলে তার ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায়নি। সেটা ঠিকই। কিন্তু বিশ্বসেরা কাকে বলব? যে চোটের চোখরাঙানি নিয়েও ৩২টা দলের বিরুদ্ধে এক মাসের বিশ্বযুদ্ধে সফল হয়নি তাঁকে, না যে দীর্ঘদিন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলে দক্ষতা, নৈপূন্যতা, ফর্ম ধরে রাখতে সফল?
বিশ্বকাপ তো চার বছরে একবার আসে। তাও মাসখানেকের জন্য। বাকি মরসুমে ৮-৯ মাস তো ক্লাব ফুটবলের রগড়ানিতেই নিজেকে ফুটিয়ে তোলার চ্যালেঞ্জটা নিতে হয় রোনাল্ডোদের। তাও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত, পরিবেশ, মাঠ, দর্শক, আবহাওয়ার মধ্যে। হয়তো বিশ্বকাপ জিততে পারেনি, কিন্তু ফুটবল সৌন্দর্যটাকে ধরে রাখা, বিনোদন দেওয়ার ব্যপারে পর্তুগালের মহাতারকা অনেক এগিয়ে। এমনকী ব্যালন ডি অর কে জিতবে সেটা নির্ণয় হয় যাঁদের ভোটে, সেই বিভিন্ন দেশের জাতীয় দলের কোচ, ক্যাপ্টেন আর সাংবাদিকরাও ব্যাপারটাকে নিশ্চয়ই এ ভাবেই দেখেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে, বিশ্বসেরাদের এই পুরস্কার মঞ্চে দেশ বনাম ক্লাবের লড়াইয়ে, দেশ কি তা হলে পিছিয়ে থাকবে? দেশের হয়ে পারফরম্যান্স সে ভাবে মর্যাদা পাবে না? আসলে ব্যাপারটা ও ভাবে দেখলে হবে না। দেশের হয়ে এক জন ফুটবলার যতটা সময় খেলে, তার চেয়ে বেশি খেলে ক্লাবের হয়ে। কয়েক বছর বাদে বাদে কয়েকটা বড় টুর্নামেন্ট ছাড়া দেশের হয়ে সেই রগড়ানিটা কোথায় হয় ফুটবলারদের? যা পরীক্ষা, সবই তো দিতে হয় ক্লাব ফুটবলে। তাই এ সব পুরস্কার বাছার ক্ষেত্রে ক্লাবের পারফরম্যান্স তো প্রাধান্য পাবেই।
আমার কাছে সে-ই চ্যাম্পিয়ন, যে সব রকম পরিবেশে বিনোদন দেওয়ার ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে এক নম্বর। এ বার সেটা ন্যয়ার নয়, সিআর সেভেনই।