ইন্ডিয়ান ওপেন গল্ফ খেতাব জেতার পর চৌরাসিয়াকে সান্ত্বনা অনির্বাণের। রবিবার নয়াদিল্লিতে।
দিল্লি গল্ফ কোর্সে প্লে-অফ জেতার সঙ্গে সঙ্গে মুষ্ঠিবদ্ধ হাতটা আকাশের দিকে ছুড়ে দিলেন। এর পর স্ত্রী ঈপ্সাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “আমি পেরেছি! কি, খুশি তো!”
তিনি, অনির্বাণ লাহিড়ী দিল্লি গল্ফ ক্লাবের কোর্সে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করলেন এ দিন। শেষ রাউন্ডের নাটকীয় ফেরবদলে সাত শটের ব্যবধান মুছে হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন গল্ফ জিতে!
আগের তিন রাউন্ডে টুর্নামেন্টের অবিসংবাদী লিডার থাকা কলকাতার শিবশঙ্কর প্রসাদ চৌরাসিয়াকে হারিয়ে জেতা ট্রফিটায় চুমু খেয়ে বাঙালি তারকা বললেন, “আজ সকালেও ভাবতে পারিনি আমিই জিতব। ভেবেছিলাম আমার সুযোগ নেই। শিবশঙ্কর বা অস্ট্রেলিয়ার মার্কাস ফ্রেজারের মধ্যে কেউ ট্রফি নিয়ে যাবে।” তবে দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ জমতে থাকে কলকাতার তারকা বনাম বাঙালি চ্যাম্পিয়নের লড়াই।
এক দিকে ছন্দ পেয়ে যাওয়া অনির্বাণ ৬৯ স্কোর করেন। অন্য দিকে, শিবশঙ্কর বার দুই গাছে শট মেরে দিনটা শেষ করলেন ৭৬ স্কোরে। দু’জনেই সাত-আন্ডার ২৭৭ মোট স্কোরে। কিন্তু প্লে অফে ছন্দ হারিয়ে ফেলা শিবশঙ্করকে অসহায় দেখতে হল, ১৫ ফুট দূর থেকে বার্ডি করে তাঁর তৃতীয় ইউরোপীয় ট্যুর খেতাব জয়ের স্বপ্নে জল ঢেলে দিচ্ছেন অনির্বাণ। যিনি মাত্র দু’সপ্তাহের ব্যবধানে ইউরোপীয় ট্যুরে নিজের দ্বিতীয় খেতাব জেতার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠেন ন’নম্বর হোল-এর পরেই। “ওখানে দু’টো শট মেরেই বুঝতে পারি যে লড়াইয়ে আমিও চলে এসেছি। আজ শিবশঙ্করকে এক বার ধরে ফেলার পর প্লে-অফে ও আর আমাকে আটকাতে পারেনি। শিবশঙ্করের একটা শট ঝোপে ঢুকে যেতেই বুঝে গেলাম দিনটা আজ আমার,” চওড়া হাসির ফাঁকে বললেন অনির্বাণ। চোদ্দো দিন আগের মেব্যাঙ্ক মালয়েশিয়া ওপেন খেতাবটা ছিল ইউরোপীয় ট্যুরে তাঁর প্রথম সাফল্য। এ দিন জিতলেন দ্বিতীয় খেতাব। বিশ্বে ৩৯ নম্বর হিসাবে এই টুর্নামেন্টে নামা অনির্বাণ প্রায় দেড় কোটি টাকার বিজয়ীর চেকটা জেতায় বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে খুব সম্ভবত চলে এলেন সেরা তিরিশের কাছে। যার মানে, এপ্রিলে তাঁর আগাস্টা মাস্টার্সে নামা তো নিশ্চিত বটেই, রেস টু দুবাই-এর দৌড়েও উঠে এলেন দ্বিতীয় স্থানে। কী রকম লাগছে এই টানা সাফল্য? উত্তরে অনির্বাণ বললেন “মনে হচ্ছে সত্যিই আমার সময়টা ভাল যাচ্ছে। বছরের শুরু যখন এত ভাল হল, তখন গোটা মরসুমই ভাল যাওয়া উচিত! এই জয় পরের সপ্তাহে আমেরিকায় রয়্যাল গল্ফ চ্যাম্পিয়নশিপে আমাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। মনের জোরটা এখানে অনেকটাই বাড়িয়ে নিলাম আজ।”
চ্যাম্পিয়ন অবশ্য বলছেন, “এই কোর্সে আজকের দিনটা আমার কাছে খুব কঠিন ছিল। তাই ট্রফি জিতে বাড়তি আনন্দ হচ্ছে।” ইন্ডিয়ান ওপেন ট্রফি অনির্বাণ উৎসর্গ করলেন নিজের মা ও বাবাকে। সঙ্গে সহানুভূতির সুরে যোগ করলেন, “আজ কিন্তু শিবশঙ্করের জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। বেচারা পরপর তিন দিন শীর্ষে থেকেও ট্রফিটা পেল না। আই রিয়েলি ফিল ব্যাড ফর হিম। দুঃখিত চৌরাসিয়া। কিছু করার নেই। এটাই গল্ফ!”