শুক্রবার রাতে শহরে পা দিলেন বিতর্কের ফিকরু। ছবি: কৌশিক সরকার
গোয়ার মতো কঠিন ঠাঁই থেকে কলকাতা তিন পয়েন্ট পেয়েছে বটে। কিন্তু ম্যাচ জেতার পরেও ‘গোয়াতঙ্ক’ পিছু ছাড়ছে না কলকাতার!
এফসি গোয়ার ফুটবলারদের ‘দাদাগিরি’তে কার্যত খেলার পর বৃহস্পতিবারের রাতটা ভয়ে-ভয়ে কাটাতে বাধ্য হয়েছেন কেভিন লোবো-বোরহা-হোফ্রেরা।
আটলেটিকো দে কলকাতা এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল যে, রাতারাতি তাদের স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস এবং ইথিওপিয়ান স্ট্রাইকার ফিকরু তেফেরাকে টিম হোটেল থেকে সরিয়ে অন্য এক হোটেলে পাঠিয়ে দেয়। সঙ্গে ফিটনেস কোচ মিগুয়েল মার্টিনেজকেও। যাঁর সঙ্গেই বিপক্ষের বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি ফুটবলার রবার্ট পিরেসের ঝামেলার সূত্রপাত হয়েছিল।
গোয়া এবং কলকাতা দুই টিমই আসলে একই হোটেলে ছিল। তাই অশান্তির জের চরমে পৌঁছনোয় খেলার অনেক পরেও হাবাস, ফিকরু, মিগুয়েলকে টিম হোটেলে রাখাটা নিরাপদ মনে করেনি আটলেটিকো কলকাতার টিম ম্যানেজমেন্ট।
গোয়ায় কী ঘটেছিল বৃহস্পতিবার?
সূত্রের খবর, ম্যাচ শুরুর আগেই মিগুয়েল এবং পিরেসের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। স্টেডিয়ামে দু’দলের ড্রেসিংরুম ছিল মুখোমুখি। আটলেটিকোর ফিটনেস কোচ নাকি তাঁদের ড্রেসিংরুমে জল এসেছে কি না দেখার জন্য গিয়েছিলেন। সে সময়ই বিপক্ষ শিবিরের পিরেসের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন।
পরে মিগুয়েলকে নাকি পিরেস মারার হুমকিও দেন। ঘটনাচক্রে হাবাস সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি দু’জনকে থামাতে গেলে পিরেসই নাকি প্রথম ধাক্কা মারেন আটলেটিকো কোচকে। ঘটনার প্রভাব মাঠেও পড়ে। ম্যাচ চলাকালীনও দেখা যায়, দু’দলের মধ্যে চোরাগোপ্তা মারামারি চলছে। এক-এক সময় প্রকাশ্যেও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় এমনকী একবার হাতাহাতি করতেও দেখা যায় দু’দলের প্লেয়ারদের। বিরতির ঠিক আগে ফিকরু-আর্নোলিনের মধ্যে ঝামেলা বাঁধে। ফিকরুর ঢুঁসো মারার ঘটনায় পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে যা বড় ঝামেলার আকার নেয়।
বিরতিতে এফসি গোয়ার মার্কি ফুটবলার পিরেস দাবি করেন, কলকাতা কোচ হাবাস তাঁকে ঘুষি মেরেছেন। ম্যাচের পর গোয়া কোচ জিকোও সেই প্রসঙ্গ তুলে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। হুমকি দেন, হাবাসের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেবেন আইএসএল কর্তৃপক্ষকে। এবং সেই মতোই এফসি গোয়ার পক্ষ থেকে ম্যাচ কমিশনারের কাছে রিপোর্টও জমা পড়েছে।
বৃহস্পতিবার ম্যাচের মধ্যেও এ ভাবে বারবার ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন ফিকরু।
ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আটলেটিকোর কর্তারা পাল্টা আঙুল তুলেছেন গোয়ায় নিরাপত্তার অভাবের দিকে। আইএসএল কর্তৃপক্ষকে পাল্টা চিঠি দিয়েছে আটলেটিকো কলকাতাও। যেখানে দাবি করা হয়েছে, শুধু মাত্র জিকোর কথার ভিত্তিতে নয়, সিসিটিভি-র ভিডিও ফুটেজে দেখা হোক, আসলে কী ঘটনা ঘটেছিল!
আটলেটিকো দে কলকাতার অন্যতম কর্ণধার উত্সব পারেখ বললেন, “আমরা ইতিমধ্যেই আইএসএল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। ভিডিও ফুটেজ আমাদেরও পাঠানো হোক। দেখতে চাই, আসলে কী ঘটনা ঘটেছিল। গোয়ায় আমাদের টিম যে ভাবে নিরাপত্তার অভাব বোধ করেছে সে বিষয়েও জানানো হয়েছে।” এ দিন অন্যতম টিম মালিক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, “২-১ জিতেছি, সেটাই আসল।”
শোনা যাচ্ছে, ম্যাচের হাফটাইমে নাকি আটলেটিকো ড্রেসিংরুমের সামনে চড়াও হয়েছিলেন এফসি গোয়ার জনাকয়েক ফুটবলার। ম্যাচের পরেও একই রকম পরিস্থিতি ছিল। যে জন্য হাবাস এবং তাঁর টিমকে বহুক্ষণ ড্রেসিংরুমে বন্দি থাকতে হয়েছিল। পরে নিরাপত্তারক্ষীদের প্রহরায় স্টেডিয়াম ছাড়েন লোবো, ফিকরুরা। পুরো ঘটনার ছবি সিসিটিভি-তে থাকার কথা। এমনকী, টিম হোটেলেও গোয়ার সমর্থকরা এসে ঝামেলা করার চেষ্টা করেছিল বলে খবর।
সব মিলিয়ে গোয়ার মাঠে ম্যাচ জয়ের আনন্দ বদলে যায় আতঙ্কে!