গব্বর দাওয়াইয়ে হিট শো অভিষেকের

অভিনেতা নাকি পেশাদার কবাডি খেলোয়াড়! নেতাজি ইন্ডোরে তাঁর সোয়া ঘণ্টার রাজ্যপাট দেখে এটাই প্রশ্ন স্টেডিয়ামে হাজির জনতার। যার প্রমাণ মিলল তাঁর অধিনায়ক নবনীত গৌতমের কথায়।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০৯
Share:

জয়োল্লাস। নেতাজি ইন্ডোরে অভিষেক। ছবি: উত্‌পল সরকার।

অভিনেতা নাকি পেশাদার কবাডি খেলোয়াড়! নেতাজি ইন্ডোরে তাঁর সোয়া ঘণ্টার রাজ্যপাট দেখে এটাই প্রশ্ন স্টেডিয়ামে হাজির জনতার। যার প্রমাণ মিলল তাঁর অধিনায়ক নবনীত গৌতমের কথায়।

Advertisement

তেলেগু টাইটান্সকে ৪৬-৩২ হারিয়ে উঠে জয়পুর পিঙ্ক প্যান্থার্সের অধিনায়ক নবনীত ‘আনন্দবাজার’কে বলছিলেন, “আমাদের অষ্টম খেলোয়াড় কে জানেন? অভিষেক বচ্চন। কোর্টে থাকে সাত জন। আর ও বাইরে থেকে অষ্টম খেলোয়াড়ের কাজটা করে যায়।”

সেটা কী রকম? নবনীতের কথায়, “টিম কেনার পর প্রথম দিন আমাদের বলেছিলেন, তোমরা আমাকে কবাডি শেখাও। আমি তোমাদের শুটিং শেখাব।” আর আর প্রথম ম্যাচে ইউ মুম্বই-এর কাছে হারের পর দলকে ‘গব্বর সিং’য়ের মতো বলেছিলেন, ‘‘জো ডর গয়া, সমঝো ও মর গয়া। ফিটনেস বাড়াও। কলকাত্তা যাও অওর ম্যাচ লে আও।’’ নবনীতের কথায়, “ও একাই দলকে চাগিয়ে দিয়েছিল। শিবিরের সময় আমাদের সঙ্গে গিয়ে ক্যাম্পে থেকেছে টানা পাঁচ-ছ’দিন । সেখানে আমাদের সঙ্গে আড্ডা তো দিতই। রোজ কবাডি কোর্টেও নেমে পড়ত। রেইডার হিসেবে ভালই খেলে।”

Advertisement

আর উষা উত্থুপ? যিনি এ দিন অভিষেকের পাশে বসে পুরো ম্যাচ দেখলেন। এ বার তাঁর কথা শুনুন। “মুম্বইতে স্কুলে আমিও কবাডি খেলেছি। কিন্তু অমিতজির ছেলে তো কবাডি পুরো গুলে খেয়েছে দেখলাম। পাশে বসে আজ কী ভাবে কত পয়েন্ট আসছে সব বোঝাচ্ছিল।”

সাদা অডিতে জয়পুরের দলটির মালিক ইন্ডোরে ঢুকলেন কাঁটায় কাঁটায় সাতটা পঞ্চাশে। পরনে দলের জিন্স ও আকাশি-গোলাপি ট্র্যাকস্যুটের আপার। পায়ে সাদা স্নিকার্স। মুখে সেই চাপ দাড়ির সঙ্গে ‘জেন ওয়াই’ ললনাদের মন ভোলানো হাই ভোল্টেজ হাসি। আর এই হাসি আর ম্যাচো শরীরী ভাষা দিয়েই এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন ইন্ডোর স্টেডিয়ামের জনতাকে। শহরের গানের ‘দিদি’ উষা রাত এগারোটার সময় মোহিত গলায় বলছিলেন, “ছেলেটা বাবার মতোই ম্যানারিজম আর উইট পেয়েছে। আমার পাশে বসেই বলল আজ আপনি আমাদের সমর্থক তো? আমি মাথা নাড়তেই বলল আজ আমরাও জিতব। আপনারাও জিতবেন। দেখুন আজ কলকাতার দল বেঙ্গল ওয়ারিয়র্সও জিতে গেল ৪২-৪০। ওরা চার। আমরা পাঁচে।” এখানেই থামছেন না উষা। “বম্বে টু গোয়ায় ওর বাবা অমিতাভের সঙ্গে আমি একটা দৃশ্যে অভিনয় করেছিলাম। শুনে ছেলের হাসি থামে না। বলে, আপনার গানের ভক্ত ছিলাম। এ বার ওই সিনেমাটাও ফের দেখতে হবে।” উষার মতোই অভিষেক মন জিতেছেন খেলা দেখতে আসা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং অনন্যা চট্টোপাধ্যায়েরও।

তবে খেলা শুরু হতেই অভিষেক বচ্চনের মনোনিবেশ ম্যাচে। কখনও দাঁড়িয়ে হাততালি কখনও বা ছুড়লেন মুষ্ঠিবদ্ধ হাত। কখনও দু’হাত তুলে দর্শকদের গলা ফাটাতে ইশারা করলেন। দ্বিতীয়ার্ধে ১৭-১৬ অবস্থায় যখন খেলা শুরু হচ্ছে তখন জ্যাকেট খুলে পড়লেন টিমের জার্সি। আর জিততেই দর্শকদের দিকে ফিরে দেখালেন ‘থাই ফাইভ’ আর মহিলা ভক্তদের দিকে ছুড়লেন ‘উড়ন্ত চুম্বন’। সোজা দৌড়ে চলে গেলেন কোর্টে। নহবনীতদের হাত মিলিয়ে বললেন, “চল বেটা অব ম্যায় খুশ হু।” যা দেখে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকে খেলা দেখতে আসা বাবু বড়ুয়ার মন্তব্য, “কবাডি খেলি বলে অনেকে বলত ভবিষ্যত্‌ অন্ধকার। এ বার কী বলবে?” আর বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ম্যাচ দেখতে আসা সেক্টর ফাইভের তথ্যপ্রযুক্তির কর্মী নমিতা সান্যালের মন্তব্য, “এক দম হিট শো।”

আর অভিষেক বচ্চন কী বললেন? “প্রো-কবাডির এই লিগ দুর্দান্ত চলছে। তাতে আর পাঁচ-ছ’ বছর পর কবাডি কিন্তু ক্রিকেট এবং হকির সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দেবে।” সৌরভের শহরে এসে ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’-কেও বাদ দিলেন না ‘বিগ বি পুত্র’। তাঁর কথায়, “দাদা যদি আমার দলের খেলা দেখতে আসেন তা হলে উপকৃত হবে গোটা কবাডি সমাজ।” জানিয়ে গেলেন সদ্য চালু হতে চলা ‘ইন্ডিয়ান সুপার লিগ’ (আইএসএল) নিয়েও নিজের মত। বললেন, “আইএসএল-এর জন্য যদি আমাকে কোনও কোনও কাজে লাগে তা হলে সেই কাজে নেমে পড়তে কোনও ‘যদি’, ‘কিন্তু’ নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন