ভারতীয় যুব দলের কোচ।
রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ দু’দিনে শেষ। টেস্ট ম্যাচ খতম হচ্ছে তিন দিনে। বিপন্ন ক্রিকেট। রাহুল দ্রাবিড়ের মতো চিরকাল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে থাকা ক্রিকেটারও এ বার ঘূর্ণি উইকেটের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন। দ্রাবিড় অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেটের পিচ নিয়েই প্রচণ্ড সমালোচনা করেছেন। কিন্তু কেউ কেউ মনে করছেন, মুখে কিছু না বললেও টেস্টেও এই ঘূর্ণি উইকেটে তাঁর সায় নেই।
সম্প্রতি কল্যাণীতে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ দু’দিনে শেষ হয়েছে। তার আগে আরও তিনটি রঞ্জি ম্যাচ একই ভাবে দু’দিনে শেষ হয়ে গিয়েছে জঘন্য উইকেটের জন্য। কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ভারতীয় যুব দলের কোচ দ্রাবিড়। বললেন, ‘‘এখানে আছি বলে শুধু বাংলা-ওড়িশার ম্যাচ নিয়ে বলছি, তা নয়। রঞ্জি ট্রফিতে এ বছর বহু ম্যাচেই এমন ঘূর্ণি উইকেট হয়েছে যে, দু-তিন দিনে ম্যাচ শেষ হয়ে গিয়েছে। এটা মোটেই ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়।’’
কল্যাণীর উইকেট তৈরিতে সায় দিয়েছিলেন সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বলেছিলেন, ‘‘ছ’পয়েন্ট পেতে গেলে তো এ রকম উইকেটই তৈরি করতে হবে।’’ এ দিন দ্রাবিড়ের এই বক্তব্য পরোক্ষে সৌরভকে একরকম খোঁচা বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তবে সৌরভ এই নিয়ে কোনও বিতর্কে যেতে চান না। এক সময়ের সতীর্থের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রাতে সৌরভ বলেন, ‘‘আমার এই ব্যাপারে কোনও বক্তব্য নেই।’’
কিন্তু টেস্টে যে ঘূর্ণি উইকেটে তিন দিনে ম্যাচ শেষ হয়ে যাচ্ছে, এক দিনে কুড়ি উইকেট পড়ছে, তার বেলা?
রাহুল দ্রাবিড়ের যুক্তি, ‘‘টেস্টে না হয় হার-জিতই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, হোম অ্যাডভান্টেজ নিয়ে সবাই জিততে চায়। কিন্তু রঞ্জি ট্রফিতে তো আর হার-জিত সবচেয়ে বড় ব্যাপার নয়, এখান থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য ভাল ক্রিকেটার তুলে আনাটাই সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য। রঞ্জির ম্যাচ এই ধরনের খারাপ উইকেটে হতে থাকলে সেই উদ্দেশ্য পূরণ করা অসম্ভব।’’
ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের প্রস্তাব, ‘‘নক আউট পর্যায়ে যেমন নিরপেক্ষ ভেনুতে খেলা হয়, এ বার তা হলে লিগ পর্যায়েও তেমনই হোক। হোম ভেনু-র এই রকম অসদ্ব্যবহার হতে থাকলে, তা বন্ধ করতে এটাই হওয়া উচিত। এ ভাবে অন্তত ভাল উইকেটে খেলা হতে পারে। বোর্ডের উচিত সব সংস্থাকে ভাল উইকেট তৈরি করতে বাধ্য করা। গ্রিন টপ দরকার নেই। কিন্তু এমন উইকেট করাও ঠিক না, যাতে দু’দিনে খেলা শেষ হয়ে যায় আর অতি সাধারণ মানের স্পিনাররাও ছ-সাতটা করে উইকেট পেয়ে যায়।’’
এই ব্যাপারে কোনও সুপারিশ করার এক্তিয়ার অবশ্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর নেতৃত্বাধীন বোর্ডের টেকনিক্যাল কমিটিরই রয়েছে। একসময় জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য নিরপেক্ষ ভেনুতে রঞ্জির ম্যাচ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন খোদ সচিন তেন্ডুলকর। তাঁর যুক্তি ছিল, এমনিতেই রঞ্জি ম্যাচ দেখতে দর্শক হয় না। নিরপেক্ষ ভেনুতে ম্যাচ দিলে আরওই আসবে না। এ বার তাঁর এক সময়কার সতীর্থ ঠিক উল্টো পরামর্শ দিয়ে গেলেন।
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।